ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

হানিফ ফ্লাইওভারের টোল!

মাহবুবুর রহমান ইসমাইল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২১ অক্টোবর ২০১৩   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হানিফ ফ্লাইওভারের টোল!

ফাইল ফটো

মাহবুবুর রহমান ইসমাইল
ঢাকা, ২১ অক্টোবর: মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার উদ্বোধন হল। প্রধানমন্ত্রী বললেন, এটা দেশবাসীর জন্য ঈদ উপহার।
রাষ্ট্রপ্রধান টোল প্রদান করবেন বিশ্বে এমন নজির আছে কিনা জানা নেই। প্রশ্ন জাগে তিনি কি ফ্লাইওভার উদ্বোধন করলেন নাকি টোল?

উদ্বোধনী ভাষনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, নিতে আসি না-দিতে আসি’।

প্রধানমন্ত্রী ১১ অক্টোবর তাঁর জিপ গাড়িতে টোল দিলেন ৫০ টাকা। ওই দিন প্রত্রিকায় জানা গেলো ধার্য্যকৃত টোল  মাইক্রোবাস ৫০ টাকা, প্রাইভেট কার ৩৫ টাকা, যাত্রীবাহি বড় বাস ১৫০ টাকা।

অথচ এক রাত পার না হতেই ১২ তারিখ সকাল থেকে টোল আদায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেলো। মাইক্রোবাস ৮৫ , প্রাইভেটকার ৬০, জিপ ৭০, পিকআপ ১৩০, মিনিবাস ১৭৩ ও যাত্রীবাহী বাস ২৬০ টাকা।

পশু জবাই হয় বছরে একদিন, কিন্তু প্রতিদিন এই টোলের ছুরি চলবে এক টানা ২৪ বছর! এটাই কি কোরবানী ঈদের উপহার ছিলো?

অন্যদিকে কুড়িল, বাড্ডা, মহাখালীসহ দেশের কোনো ফ্লাইওভারে যাত্রীদের টোল প্রদান করতে হয়না।

অনেকে প্রথমবার সখ করে দেখার জন্য ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে ১/২ বার যাতায়াত করছেন। তবে বারবার যাওয়া-আসার ইচ্ছা থাকলেও টোলের ভয়ে এখন ‘ছেড়ে দে-মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। ফ্লাইওভারের নিচ দিয়েই হুড়োহুড়ি করে যাত্রাবাড়ি পার হচ্ছে। যার কারণে ফ্লাইওভার অনেক সময় ফাঁকা হয়ে থাকছে।

সবচেয়ে বড় কথা হলো ৩০টি জেলার লাখো-লাখো মানুষ এই ফ্লাইওভার নির্মাণকালীন সাড়ে ৪ বছরে কঠিন যানজট সহ্য করছে। বিশেষ করে যারা নারায়ণগঞ্জবাসী তাদের  দূর্ভোগের কথা বলে শেষ করা যাবে না।

প্রসঙ্গতঃ ১১.৭ কি.মি. দীর্ঘ এই ফ্লাইওভার নির্মাণের শুরুতে ৭৭৮ কোটি টাকা ছিল। তবে দফায় দফায় সে ব্যয় বেড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকায় উন্নতি হয়েছে। এই টাকায় পৃথীবির বহু দেশে দু’টি ফ্লাই ওভার নির্মাণ করা যেত।

এ বছর জুনে ভারতের মুম্বাইয়ে ১৬ কি.মি. ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় ছিল ৮৮ কোটি টাকা প্রতি কিলোমিটার। কলকাতার পরমা ফ্লাইওভারের প্রতি কি.মি. ৪৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। মালশিয়ায় ফ্লাইওভার নির্মাণের ব্যয় ৫৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে প্রতি কি.মি. ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪১ কোটি টাকা।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ পাশবর্তী অঞ্চলের যাত্রীবাহী বাসগুলো যখন ফ্লাইওভারের সামনে আসে তখন বাস থামিয়ে বাসের ড্রাইভার বা কন্ট্রাক্টর যাত্রীদের শর্ত দেয় যদি ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যেতে চান তবে প্রত্যেক যাত্রীকে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হবে।

দেয়া-না দেয়া নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে অহরহ মারামারি, তর্কবিতর্ক এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ রুটে যাত্রীবাহী বাসগুলো দৈনিক ৫ ট্রিপ বা ১০ বার আসা যাওয়ায় ২৬০ গুণ ১০ = ২৬০০ টাকা শুধু টোল দিতে হবে।

একজন বাস মালিক পুঁজি বিনিয়োগ করে যদি একটি বাসে প্রতিদিন ২ হাজার ৬ শত টাকা টোল দিতে হয় তবে সে ব্যবসা করবে কিভাবে? এমনিতেই বাসের ভাড়া কয়েক দফা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এখন বাস মালিকরা আবারো বাসের ভাড়া বাড়ানোর চিন্তা করছে। আর সেই বর্ধিত ভাড়া এসে পড়বে সাধারণ যাত্রীদেরই ঘাড়ে। এই বাড়তি ভাড়া সাধারণ যাত্রীরা মেনে নিতে পারবে কি?

 

লেখক: আইনজীবী ও শ্রমিক নেতা / ইমেইল-[email protected]

 

রাইজিংবিডি / শামটি / এস

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়