ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দুর্নীতিবাজের বিচার চেয়ে দেয়ালে আমজনতার পোস্টার

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০  
দুর্নীতিবাজের বিচার চেয়ে দেয়ালে আমজনতার পোস্টার

সাধারণত প্রচার-প্রচারণা, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পোস্টার লাগানোর রীতি আছে বাংলাদেশে। তবে সম্প্রতি ভিন্নধর্মী এক প্রতিবাদ দেখা গেছে উপজেলা ভূমি অফিসের এক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে। তার দুর্নীতির পরিমাণ এতটাই বেশি যে, সাধারণ মানুষই তার অবৈধ সম্পদের হিসাব তুলে ধরে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নাজির হিসেবে কর্মরত রয়েছেন জামাল উদ্দিন। পদোন্নতি পেয়ে তিনি এ পদে যোগ দিয়েছেন চলতি বছরেই। এর আগে তিনি উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী ছিলেন। অভিযোগে উঠেছে, সে সময় নানা তদবির ও অনিয়মের মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। নাজির হওয়ার পরও একই ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এখন সাধারণ মানুষ তার দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরতে পোস্টার ছাপিয়েছেন এবং দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়েছেন। তবে জামাল উদ্দিন লোক ভাড়া করে সেসব পোস্টার ছিড়ে ফেলেছেন।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ গাছবাড়িয়া তালুকদার পাড়ার মৃত ফয়েজ আহমেদের ছেলে জামাল উদ্দিন।

অভিযোগ আছে, ঘুষ নিয়ে কাউকে দখল করে দিয়েছেন অন্যের জমি, টাকার বিনিময়ে সরকারি খাস জমির তথ্য পাচার করেছেন, খাস জমি লিজ পাইয়ে দিয়েছেন অনৈতিকভাবে। এ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ততারও অভিযোগ উঠেছে।

আরও অভিযোগ রয়েছে, জামাল উদ্দিন একসময় জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও এখন সুকৌশলে ভিড়েছেন আওয়ামী লীগে। প্রভাব বিস্তার করতে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনুদান দিচ্ছেন তিনি।

জানা গেছে, অফিস সহকারী হয়েও তিনি চট্টগ্রাম সিটির কোতোয়ালী থানাধীন সতীশ বাবু লেনের এক বাসায় মাসিক ৪০ হাজার টাকায় ভাড়া থাকেন। ব্যবহার করেন চারটি ব‌্যক্তিগত গাড়ি। বিভিন্ন ব্যবসায় জামাল উদ্দিনের বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগের তথ‌্য জানা গেছে। ২০১৩ সালে তিনি চট্টগ্রামের

আগ্রাবাদ এলাকায় একটি অস্থায়ী আবাসিক হোটেলে অংশ হস্তান্তরের চুক্তি করেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নিলা পূর্ব গ্রামের হাজী ওমর মিয়ার ছেলে ছৈয়দ আলমের সঙ্গে। এতে ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন জামাল উদ্দিন।

চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানাধীন কেসি দে রোড এলাকার সিনেমা প‌্যালেস সংলগ্ন ‘দি হার্ট অব সিটির’ ওপরে সৈয়দুর রহমান আবাসিক হোটেলের ৫০ শতাংশ মালিকানা তার।

বাকলিয়া থানার কালামিয়া বাজার এলাকায় নামে-বেনামে আছে অনেক জায়গা। বাকলিয়া আইডিয়াল স্কুলে আছে ৩০ শতাংশ মালিকানা। চন্দনাইশ গাছবাড়িয়া কলেজ গেট এলাকায় জামাল উদ্দিন ও তার স্ত্রীর নামে আছে দুটি দোকান।

জামাল উদ্দিন একসময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভিপি শাখায় অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন ভুয়া নাম ব্যবহার করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নামে চকবাজারের সাদিয়া কিচেন, বহদ্দারহাটের একটি আইসক্রিম ফ্যাক্টরি এবং হাজারীগলির একটি ওষুধের দোকান থেকে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় জানাজানি হলে পরে তিনি উল্টো মামলা করেন, যাতে বিষয়টি চাপা থাকে।

এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘মন চাইলে কেউ তদন্ত করতে পারে, আমি নিজের থেকে কিছু বলতে রাজি নই।’

ঢাকা/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়