ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মাস্ক-গ্লাভস নেই পরিছন্নতাকর্মীদের, বাড়ছে স্বাস্থ‌্যঝুঁকি   

শিহাবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০০, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১১:২৪, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০

যারা নগর পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত, তাদেরই নেই স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী।  যদিও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, গাম বুট ও অ‌্যাপ্রন দেওয়া হয়েছে।  কিন্তু তারা পরেন না।  তবে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অভিযোগ, তাদের এসব উপকরণ দেওয়াই হয়নি।  

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, পরিছন্নতাকর্মীরা বর্তমান পরিবেশে কাজ করলে করোনা ভাইরাস, ঠাণ্ডা, কাশি, চর্ম রোগ, আমাশয়, ডায়রিয়া ও জন্ডিসের মতো ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। 

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে  জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ৫৮টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে (বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে যেখানে রাখা হয়) সরকারি ও বেসরকারি মিলে বর্তমানে কাজ করছেন প্রায় ৫ হাজার ৪০০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী।   আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোশনে (ডিএনসিসি) ৫২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের অধীনে কাজ করছেন ৪ হাজার ৩০০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী।  এরমধ‌্যে অধিকাংশই  স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ব‌্যবহার করেন না।

মাস্ক-গ্লাভস ছাড়াই বর্জ‌্য ব‌্যবস্থাপনার কাজ করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা

ধানমন্ডি-৩২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের পাশেই রয়েছে ডিএসসিসির একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন।  সেখানে  দেখা গেছে, প্রধান সড়কের ওপর সারি-সারি করে রাখা হয়েছে বাসা-বাড়ি থেকে ভ‌্যানে আনা বর্জ‌্য।  চারদিকে পচা-বাসি খাবারের দুর্গন্ধ।  পাশ দিয়ে চলছে গাড়ি, জ্যামে পড়ে থাকা যাত্রীদের সহ‌্য করতে হচ্ছে দুর্গন্ধ।  স্টেশনের ভেতরে রাখা ৮টি কনটেইনারে নেই জায়গা।  ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এসব ময়লাভর্তি গাড়ি থাকছে রাস্তার ওপর।  স্টেশনের ভেতর সিটি করপোরেশনের একটি গাড়িতে ১০-১২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ময়লা তুলে দিচ্ছেন।  তাদের কেউই মাস্ক, গামবুট, অ‌্যাপ্রন কিংবা গ্লাভস ব‌্যবহার করেননি। এদিকে, স্টেশনের ভেতর থেকে বাতাস বের করে দেওয়া জন্য লাগানো ৫টি ফ্যানও বন্ধ।

গত দুই দিনে দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত ১০টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে গিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এমন অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করতে দেখা গেছে।   

গত ৩০ বছর ধরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন বাদশা মিয়া।  ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের স্টেশনে তার সঙ্গে কথা হয়।  কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হাত মোজা কারা দেয়? পাইলে তো পরমু।  জুতাও পাই না, মোজাও পাই না, কিছুই পাই না।  নামেই সিটি করপোরেশন, কাজের বেলায় নাই।’

মাস্ক-গ্লাভস ছাড়াই বর্জ‌্য ব‌্যবস্থাপনার কাজ করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করলে কী কী ধরনের অসুখ হতে পারে—জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক‌্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, অধ্যাপক ডা. মোকতেল হোসেন বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের শীতের সময় ঠাণ্ডা লাগতে পারে।  সাধারণ সর্দি-কাশি হতে পারে। হ্যান্ড গ্লাভস-মাস্ক না পরায় তারা করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন।  তাদের বায়ুবাহিত রোগ বিভিন্ন রোগ ও চর্ম রোগ হতে পারে। তারা ভাইরাল হেপাটাইটিস-ইতে আক্রান্ত হতে পারেন, যা দূষিত খাবার ও পানি খাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। এর ফলে লিভার ক্যান্সার  আমাশয় ও ডায়রিয়া হয়।  যদিও কম হচ্ছে তবু ধনুস্টংকার হতে পারে, রিস্ক থাকে। এছাড়া ভাইরাসজনিত জ্বরও হয়।’

এ বিষয়ে জানতে ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এস এম শফিকুর রহমানকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘অফিসে আসেন।  এভাবে মোবাইলে কথা বলি না ভাই। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে আমাদের অফিসের পারমিশন লাগে, স‌্যরি ভাই। এটা অফিসের অর্ডার, তাছাড়া বলতাম তো। আজীবন বলেছি। এখন অফিসের পারমিশন ছাড়া কথা বলতে পারছি না। আমাদের পিআরও মামুন বলুন, তিনি যদি কথা বলতে বলেন, তাহলে বলবো।’

জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা মাস্ক দিচ্ছি কিন্তু তারা পরেন না।  গামবুট, পিপিই, মাস্ক গ্লভস দেওয়া হয়েছে।  আপনি আমাদের রেকর্ড দেখতে পারেন। তারা বলেছেন, ওগুলো পরে নাকি কাজ করতে পারেন না।’

ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিনও একই দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সবই দেওয়া হয়েছে কিন্তু তারা এগুলো পরেন না।’

পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা স্বাস্থ‌্য উপকরণই পাচ্ছেন না—এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা মিথ্যা বলেন। পরেন না। আমাদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট দেওয়া হচ্ছে। এগুলো পরে নাকি স্বস্তিবোধ করেন না। তাদের জোর করে পানিশমেন্ট দিয়েই পরানো হচ্ছে।’ ৫ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মধ‌্যে দুই-চার শত জন হয়তো পরেন বলেও তিনি মন্তব‌্য করেন। 
 

এসআই/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ