ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৮, ৬ এপ্রিল ২০২১  
তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আনুমানিক ৬৯৩ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) এর এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৬ কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ও তথ‌্য প্রবাহের ক্ষেত্রে সাবমেরিন ক্যাবলের ভূমিকা অপরিহার্য।  তথ্য প্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশ বর্তমানে সাউথ এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ণ ইউরোপ-৪ এবং সাউথইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ণ ইউরোপ-৫ নামে দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে যুক্ত রয়েছে। বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের ইন্টারনেট তথা আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইড্থ এর ব্যবহার গত কয়েক বছরে ব্যাপক হারে বেড়েছে। ইন্টারনেট নির্ভর বিভিন্ন সেবার ব্যাপক প্রসারের কারণে ব্যান্ডউইড্থ এর এই ঊর্ধ্বমুখী ব্যবহারের ধারা পরবর্তী বছরগুলোর জন্য অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, চলতি ২০২১ সালের মধ্যেই দেশে ৫জি সেবা চালু করার বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।  ৫জি সেবা চালু হলে দেশে আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইড্থ এর চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়বে। ব্যান্ডউইড্থ এর এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা বর্তমানে চালুকৃত দুইটি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে পূরণ করা সম্ভব হবে না। এ কারণে সরকার দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের জন্য এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৬ সাবমেরিন ক্যাবল কনসোর্টিয়ামে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই অনুযায়ী ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প গত  ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত একনেক সভায়  অনুমোদিত হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের মূল কাজ এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৬ কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে নতুন একটি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন। অন্যান্য কনসোর্টিয়াম ক্যাবলের মত এসএমডব্লিউ-৬ সাবমেরিন ক্যাবলে প্রধানত: দুটি অংশ রয়েছে; কোর অংশ ও ব্রাঞ্চ অংশ। কোর অংশ হবে সিঙ্গাপুর থেকে জিবুতি, মিশর হয়ে ফ্রান্স পর্যন্ত বিস্তৃত মূল ক্যাবল এবং ব্রাঞ্চ অংশ (বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ) হবে কক্সবাজারের সঙ্গে মূল কোর ক্যাবলের সংযোগ স্থল (ব্রাঞ্চিং ইউনিট) পর্যন্ত প্রায় ১৮৫০ কিলোমিটার।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬৯৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা।  এর মধ্যে জিওবি ৩৯২ কোটি ৩৪ রাখ টাকা এবং বিএসসিসিএল এর নিজস্ব অর্থ ৩০০ কোটি ৮৩ রাখ টাকা। অনুমোদিত ডিপিপি এর ক্রয় পরিকল্পনায় পণ্য সংগ্রহের জন্য ৪ টি ও পূর্ত কাজের জন্য ২টি প্যাকেজ রয়েছে।  পণ্য সংগ্রহের একটি প্যাকেজ ‘সাবমেরিন ক্যাবল ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম’ এর ক্ষেত্রে ক্রয় আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে, অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী যার প্রাক্কলিত ব্যয় ৬৫৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে এসডব্লিউ-৬ ক্যাবলটি স্থাপনের কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় প্রকল্পের সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন অংশের ক্রয় প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে কনসোর্টিয়ামের নিজস্ব ক্রয় পদ্ধতিতেই হবে। সে অনুযায়ী এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৬ সাবমেরিন ক্যাবল প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে কনসোর্টিয়ামের সব সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়।  দরপত্রে ৪টি কোম্পানি অংশ নেয়। এক্ষেত্রে কনসোর্টিয়াম কর্তৃক নির্ধারিত ক্রয় প্রক্রিয়া অনুযায়ী আর্থিক ও কারিগরি দিক যাচাই-বাছাই করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করে কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে নির্বাচিত ঠিকাদারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে এবং কনসোর্টিয়ামের সদস্যদের মধ্যে কন্সট্রাকশন এবং মেইনটেইন্যান্স চুক্তি স্বাক্ষর হবে।

সূত্র জানায়, দেশকে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্তকরণ কাজটি রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে এবং সেই সঙ্গে সম্ভাব্য বিপর্যকর পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জনস্বার্থে সম্পাদন করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য যে, দেশে বিদ্যমান দুইটি সাবমেরিন ক্যাবলের পূর্বমুখী পূর্ণ ক্ষমতা ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে এবং এই পরিস্থিতিতে দেশকে তৃতীয় একটি সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত করা না হলে দেশে সাবমেরিন ক্যাবলের পূর্বমুখী (সিঙ্গাপুরমুখী) ব্যান্ডউইড্থের সংকটের কারণে দেশে ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দেশে ব্যবহৃত সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ ক্ষমতার প্রায় ৯৫ শতাংশ সিঙ্গাপুর অভিমুখী।  বিষয়টির গুরুত্ব উপলদ্ধি করে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইস্তেহার-২০১৮ এ ৩য় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের জন্য উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স নির্বাহী কমিটির ৮ম সভায় দেশের জন্য অপর একটি সাবমেরিন ক্যাবলের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আলোচনা হয় এবং ‘৩য় সাবমেরিন ক্যাবল-এ সংযুক্তিকরণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে’ -মর্মে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষপের অংশ হিসেবে বিষয়টি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। 

হাসনাত/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ