ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ভারতের ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশে শঙ্কা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ২৫ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ০৬:৫১, ২৬ এপ্রিল ২০২১
ভারতের ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশে শঙ্কা

ভারতে করোনাভাইরাসের নতুন ‘ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট’ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় মহামারি করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখনই এই ভ্যারিয়েন্টকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এমনকি ভারতের সঙ্গে সীমান্তে কড়াকড়ির পরামর্শও দিয়েছে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কমিটি।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তিনপথেই (জল, স্থল, আকাশপথ) যোগাযোগ সবচেয়ে বেশি। ব্যবসা, চিকিৎসা বা ভ্রমণের জন্য প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি লোক যায় দেশটিতে। এ কারণে করোনার ভারত ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশে শঙ্কা বেশি।

এই পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও দেশটির সঙ্গে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দিয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেনাকাটা বা ঘুরতে যাওয়া আটকানোর পরামর্শও দিয়েছে তারা।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য নেই। তবে ভারতে শনাক্ত হওয়া ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি।

করোনার ভারত ভ্যারিয়েন্টের বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.৬১৭।  এটি ভারতে প্রথম শনাক্ত হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে। ভারত ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের ভাইরাস ক্রমাগত নিজের ভেতরে নিজেই মিউটেশন ঘটাতে করতে থাকে।  অর্থাৎ নিজেকে বদলাতে থাকে এবং ফলে একই ভাইরাসের নানা ধরন তৈরি হয়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই পরিবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ে তেমন মাথাব্যথার প্রয়োজন হয় না, কারণ নতুন সৃষ্ট অনেক ভ্যারিয়েন্ট মূল ভাইরাসের চেয়ে দুর্বল এবং কম ক্ষতিকর হয়। কিন্তু কিছু ভ্যারিয়েন্ট আবার অধিকতর ছোঁয়াচে হয়ে ওঠে। যার ফলে টিকা দিয়ে একে দুর্বল করা কঠিন হয়ে পড়ে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্য ও সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে বেশি। গত বছর দেশে যে ভ্যারিয়েন্ট এসেছিল তার চেয়ে এই দুই ভ্যারিয়েন্ট বেশি সংক্রমক।  ভারতে শনাক্ত ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে অনেক। দেশটির একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, দেশটিতে টানা তিন দিন তিন লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে।  যা এর আগে কখনও বিশ্বে দেখা যায়নি। আক্রান্তদের মধ্যে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ভারতে করোনার দুটি ভ্যারিয়েন্ট বেশি ছড়াচ্ছে।  যার একটি আবার দুইবার রূপ পরিবর্তন করেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই আগের তুলনায় করোনায় মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ ছড়ানোর মাত্রা বেশি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনার ডাবল ভ্যারিয়েন্টে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। ভারতের এই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আগের তুলনায় বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশে ভারতীয় ডাবল মিউটেড ভ্যারিয়েন্ট প্রবেশ করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। তাই আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে- ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ না করে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগতদের অবশ্যই কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।  যদি ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ না করে সেজন্য এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ভারতের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের সতর্ক থাকা সবচেয়ে জরুরি, বিষয়টি মাথায় রেখে সংশ্লিষ্টরা ভাবছেন এবং করণীয় সর্ম্পকে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে, গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা, জিএসএআইডি নামের আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের আরও একটি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। তারা বলছে, ‘বাংলাদেশে করোনার নাইজেরিয়ার ভ্যারিয়েন্ট বি.ওয়ান.ফাইভটুফাইভ এর অস্তিত্ব মিলেছে’।  করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যুক্তরাজ্য ও সাউথ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট বিপুল পরিমাণ মানুষকে আক্রান্ত করার মধ্যে এই তথ্যটি এলো।

গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে ঢাকার উত্তরা, আজিমপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পাশাপাশি সিলেটের সুনামগঞ্জ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে জিনম সিকোয়েন্সিং করে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে। তবে এই ভ্যারিয়েন্ট কতটা সংক্রমক, এটি রোগীর জন্য কতটা ক্ষতিকর, সে বিষয়ে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশে করোনার যেসব ধরন রয়েছে: ২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। প্রথমে ধরা পড়ে ইতালি ভ্যারিয়েন্ট। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ভ্যারিয়েন্টটিই মানুষকে আক্রান্ত করেছে। তবে মার্চ থেকে এই ভাইরাস আগের চেয়ে বেশি হারে ছড়িয়ে পড়ে। গবেষণায় উঠে আসে, এবারের করোনা ছড়িয়ে পড়ার জন্য বেশি দায়ী যুক্তরাজ্য আর সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট।
 

হাসান/সাইফ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ