ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনা প্রাদুর্ভাব: পশুর হাট নিয়ে যত ভাবনা

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০০, ১২ জুন ২০২১  
করোনা প্রাদুর্ভাব: পশুর হাট নিয়ে যত ভাবনা

ফাইল ছবি

রাজধানীতে কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য এবার দুটি স্থায়ীসহ ২৫টি হাট বসাতে ইজারা দিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৩টি হাটের ইজারা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উত্তর সিটির গাবতলীসহ এবং দক্ষিণের সারুলিয়ায়ও পশু বেচাবিক্রি হবে।

দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট পরিচালনা করা কষ্টকর। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেলে হাট বসানোর অনুমতি দেবে না সরকার। হাট না বসলে বড় অংকের আয় থেকে বঞ্চিত হবে সরকার।

তারা আরও বলেন, যদি করোনার প্রভাব বেড়ে যায়, তখন সিটি করপোরেশনকে দায়ী করা হবে। নগরবাসী স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীন। তারা ঠিকমতো স্বাস্থ্যবিধি মানে না স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট পরিচালনা করা নিয়ে আমরা খুব টেনশনে আছি। পশুর হাটের ইজারা দেওয়া হলেও এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিষেশজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

এদিকে ব্যবসায়ী এবং খামারিরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে হাট না বসলে তাদের ব‌্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

রাজধানীর পশুর হাটগুলোকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশু নিয়ে আসেন ফড়িয়া-খামারিরা। এবছর করোনার সংক্রমণ ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে বেশি হারে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণের হার বেশি। পশুর হাট বসলেও স্বাস্থ্যবিধি মানাটা দুই সিটির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ।

পশুর হাট বসলে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে কঠোর থাকবে দুই সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হাটে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব‌্যবস্থা রাখা হবে। মাপা হবে শরীরের তাপমাত্রা। ঠান্ডা, জ্বর ও কাশিতে আক্রান্তদেরকে পশুর হাটে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। স্বাস্থ্যবিধি সংবলিত ব্যানার, পোস্টার টানানোসহ সব সময় মাইকে প্রচারের ব্যবস্থাও থাকবে। 

এদিকে, গত বছর কুরবানীর সময় অনলাইনে জমে উঠেছিল পশুর হাট। অনলাইনভিত্তিক পশুর হাটে কোরবানির পশু বেচাবিক্রি হওয়ায় স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটের ওপর চাপ একটু কম ছিল। অনেকেই পশুর হাটে না গিয়েও অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে কেনাকাটা সেরেছেন। এতে স্বাস্থ্যবিধি অনেকটা রক্ষা হয়েছে। 

নাটোরের খামারি মীর সাহেদ আলী বলেন, ‘‘কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন হাটে প্রতি বছর গরু নিয়ে আসি। নাটোরে গত বছরের তুলনায় এবার খামারে দেশি গরুর সংখ্যা অনেক বেশি। করোনার প্রাদুর্ভাবে লকডাউনের কারণে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে।

‘বিভিন্ন খামারের সিংহভাগ পশু রাজধানীতে বিক্রি হয়।  ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন হাটের ইজারা দেওয়ায় খামারিদের জন্য খুশির খবর। তবে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়ে হাট না বসলে অর্ধেক পশু বিক্রি করা যাবে না। এতে ব্যবসায়ী ও খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।’

রাজধানীর পুরান ঢাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী এস আই রাফিন বলেন, ‘করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে পশুর হাট বসালে করোনার সংক্রামণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাটে ক্রেতা সমাগম ও বেচাবিক্রি কম হওয়ায় গত কোরবানির ঈদে লোকসান গুনতে হয়েছে। রোজার ঈদের সময় সামাজিক দূরত্ব না মেনে মানুষজন গ্রামের বাড়ি আসা-যাওয়া করায় করোনা এখন ঊর্ধমুখি। কোরবানি উপলক্ষে হাট বসলে ঈদের পর তা মহামারী আকার ধারণ করার সম্ভাবনা আছে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বলেন, ‘গরুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পশুর হাট বসানো হবে। আর করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে পশুর হাট নিয়ে বিকল্প সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পশুর হাট শুরুর আগে স্বাস্থ্যবিধিসহ অন্যান্য দিকগুলো নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কোরবানি পশুর হাট বসানো হবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘করোনা মহামারিতে পশুর হাট পরিচালনায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সরকারের সব ধরনের নির্দেশনা পালন করতে হবে। হাট ইজারার বরাদ্দপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি ডিএনসিসির পক্ষ থেকে তা পর্যবেক্ষণও করা হবে। তবে করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে পশুর হাট নিয়ে বিকল্প সিদ্ধান্ত নেবে ডিএনসিসি।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের যেসব স্থানে বসবে পশুর হাট : 

ঢাকা উত্তর সিটির হাট : গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট (স্থায়ী হাট), উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) পশুর হাট, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গা, উত্তরখান মৈনারটেক শহীদনগর হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গা, ভাষানটেক রাস্তার নির্মাণাধীন অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত অংশ এবং পাশের খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং ব্লক-ই সেকশন-৩ এর খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের অংশ এবং ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের ফাঁকা জায়গা, মিরপুর সেকশন ৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির হাট : সারুলিয়া পশুর হাট (স্থায়ী হাট), মেরাদিয়া বাজার-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, গোপীবাগ বালুর মাঠসহ কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্টঅ্যান্ড ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘের ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগ এলাকায় ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক ই, এফ, জি, এইচ সেকশন ১ ও ২ এর খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা, গোলাপবাগে সিটি করপোরেশন মার্কেটের পেছনের খালি জায়গায়, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।

উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২১ জুলাই মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।

ঢাকা/আসাদ/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়