ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিলেন জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ২৪ জুন ২০২১   আপডেট: ১৫:৪২, ২৫ জুন ২০২১

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

গণভবনে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তিনি জেনারেল র‌্যাংক ব্যাজ পরেন।  নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধানকে ‘জেনারেল’ র‌্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন। এর মধ্য দিয়ে দেশের ১৭তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিলেন তিনি।

আগামী তিন বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন জেনারেল শফিউদ্দিন।

দায়িত্ব গ্রহণের পর নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর সেনাকুঞ্জে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে এবং সেখানে তিনি একটি গাছের চারা রোপন করেন।

গত ১০ জুন লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে আগামী ২৪ জুন অপরাহ্ণ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জেনারেল পদে পদোন্নতি প্রদানপূর্বক প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহের প্রধানদের (নিয়োগ, বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা) আইন, ২০১৮ অনুসারে তিন বছরের জন্য সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো।

এর আগে, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সেনাসদর দপ্তরের কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

কিউএমজি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে জিওসি, অ্যার্টডক হিসেবে কর্মরত ছিলেন শফিউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া তিনি জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার, লজিস্টিকস এরিয়া, একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন ও বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, একটি পদাতিক ব্রিগেড ও সেনাসদর প্রশিক্ষণ পরিদপ্তরের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন।

জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ১৯৬৩ সালের ১ ডিসেম্বর খুলনা শহরের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম শেখ মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন অধ্যাপক, সমাজ সেবক, রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৮০ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এক নাগাড়ে দীর্ঘ দুই যুগ একজন নির্বাচিত জন প্রতিনিধি হিসেবে খুলনাবাসীর কল্যাণে বিভিন্ন জনহিতকর কর্মকাণ্ডের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর খুলনাবাসী শ্রদ্ধা নিবেদন স্বরূপ তাঁর নামে ‘প্রফেসর রোকন উদ্দিন সড়ক’ এর নামকরণ করে। 
জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ ২৩ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে ৯ম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। কমিশন পরবর্তী তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন এলাকায় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান পূর্বক তার সামরিক কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড ষ্টাফ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাষ্টারস্ ইন ডিফেন্স ষ্টাডিজ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি) হতে ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি ষ্টাডিজ -এ প্রথম বিভাগে অসামান্য  ফলাফলসহ এমফিল সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বিইউপি এর অধীনে পিএইচডি সম্পন্নের উদ্দেশ্যে অধ্যায়নরত আছেন। জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ এমআইএসটি গোল্ড মেডেল অর্জনসহ প্রথম স্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি ২০১০ সালে সফলতার সাথে চীনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি (এনডিইউ) হতে ডিফেন্স অ্যান্ড ষ্ট্র্যাটেজিক ষ্টাডিজ কোর্স এবং মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ হতে আর্মি স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি তিনি ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটিতে North East South Asia (NESA) Centre কর্তৃক পরিচালিত এক্সিকিউটিভ সেমিনার কোর্সে অংশগ্রহণ করেন এবং NESA এর গ্রাজুয়েট হিসেবে সম্মানিত হন। 

তার বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে তিনি জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড, ১৯ পদাতিক ডিভিশন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একমাত্র লজিষ্টিক সফর মেশন কমান্ড করেন। এছাড়াও তিনি একটি পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশন এলাকায় একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে কমান্ড নিযুক্তিতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ইনিস্টটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ষ্টাডিজ (বিআইআইএস) এর মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হতে একজন পাইওনিয়ার ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে ২০১৪-২০১৬ পর্যন্ত ইউনাইটেড ন্যাশনস্ মাল্টি ডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন দ্য সেন্ট্রাল আফ্রিকাতে (মিনুস্কা) বহুজাতিক বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং অসামান্য কর্মদক্ষতা প্রদর্শনের জন্য মিশন প্রধান স্পেশাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অব দ্য সেক্রেটারি জেনারেল (এসআরএসজি) কর্তৃক সাইটেশন প্রাপ্ত হন।

এছাড়াও তিনি ১৯৯৩-১৯৯৪ সালে মোজাম্বিকে শান্তিরক্ষা মিশনে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিভিন্ন ফরমেশন সদর দপ্তরে সিনিয়র অপারেশনাল এবং প্রশাসনিক ষ্টাফ অফিসারসহ সিনিয়র ডাইরেক্টিং স্টাফ হিসেবে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, প্রশিক্ষক হিসেবে ক্যাডেট কলেজ ও প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সদর দপ্তর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (আর্টডক) এর চিফ অব ডকট্রিন ডিভিশন এবং সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে সামরিক প্রশিক্ষণ পরিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে তিনি সেনাসদরে কোয়ার্টার মাষ্টার জেনারেল হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবনে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ ও বেগম নুরজাহান আহমেদ দম্পতি দুই কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা-মাতা।

/হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়