ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

পাম্পে গাড়ির চাপ, গণপরিবহনে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩১, ৭ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১১:৩২, ৭ আগস্ট ২০২২
পাম্পে গাড়ির চাপ, গণপরিবহনে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ

ছবি: রাইজিংবিডি

ডিজেল-পেট্রোলের দাম বাড়ায় শনিবার দিনভর যাত্রীদের ভোগান্তি, পরিবহন সংকট ও বিশৃঙ্খলার পর রাতে বাসের ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। 

রোববার (৭ আগস্ট) থেকে এ ভাড়া কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও শনিবার রাত থেকেই এ ভাড়া কার্যকর করেছে বাস মালিকরা। যদিও তেলের দাম বাড়ার কারণে গতকাল অধিকাংশ রুটের গণপরিবহন রাস্তায় নামেনি। আজ রাস্তায় স্বাভাবিক দিনের মতোই চলছে গণপরিবহন। যদিও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

শনিবার রাতে ভাড়া পুনর্নির্ধারণে বৈঠকে পর এ ব্যাপারে ঘোষণা দেয় সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের বাসের ভাড়া কিলোমিটারে ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। দূরপাল্লার ৫২ আসনের বাসের ভাড়া ৪০ পয়সা বাড়িয়ে কিলোমিটারে ২ টাকা ২০ পয়সা করা হয়েছে। মহানগরের বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। মিনিবাসে ৮ টাকা।

আরও পড়ুন: দূরপাল্লার বাসে কিলোমিটারে বাড়লো ৪০, মহানগরে ৩৫ পয়সা

নতুন ভাড়া হিসেবে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ ন্যূনতম ১০ টাকা ভাড়া। কিন্তু মিরপুর ও গাবতলী রুটের বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫ টাকা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন যাত্রী। যাত্রীরা জানান, ফার্মগেট থেকে শাহবাগের দূরত্ব কত? সরকার সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করেছেন ১০ টাকা। অথচ বাসের লোকজন ভাড়া নিয়েছে ১৫ টাকা করে। এই সামান্য দূরত্বের ভাড়া কি ১৫ টাকা?

নীলক্ষেত থেকে আসাদগেট সাভার পরিবহনের ভাড়া ছিল ১০টাকা। বর্তমান বর্ধিত ভাড়ায় সর্বোচ্চ ১৫ টাকা নেওয়ার কথা। অথচ যাত্রীদের কাছে ২০ টাকা করে ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন এই বাসের কয়েকজন যাত্রী। সাভার পরিবহনের চালক রহমান ও সহকারী মিলন বলেন, আগেও ভাড়া ছিল ১৫ টাকা, যাত্রীরা দিতো ১০ টাকা। এখন তেলের দাম বাড়িয়েছে, তাই ভাড়া ৫ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা নিচ্ছি। আমরা কী করবো? দিন শেষে মালিককে টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার পর যা থাকে, তাতে আমাদেরও সংসার চলে না।

শুক্রবার মধ্যরাতে তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণায় শনিবার সকাল থেকে সারাদিন রাজধানীতে বাস খুব একটা চলেনি। তবে রোববার সকাল থেকে বর্ধিত বাড়ায় প্রায় সব রুটের গণপরিবহন চলছে। শনিবার বাস না চলা প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, বেশি দামে তেল কিনে পুরোনো ভাড়ায় গাড়ি চালালে লোকসান হবে। আবার সরকারিভাবে ভাড়া বাড়ানোর আগেই যাত্রীর কাছে বাড়তি টাকা চাইলে বিশৃঙ্খলা হবে। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা গাড়ি ভাঙচুরও করে। লোকসান ও ভাঙচুরের ভয়ে মালিকরা রাস্তায় বাস নামাননি। বেসরকারি বাস কম চললেও রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাস চলেছে পুরোদমে। যদিও সেসব বাসে অত্যধিক ভিড় ছিল যাত্রীদের।

সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে- এই প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, যাত্রীদের স্বার্থে সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, তা মালিকরা মেনে নিয়েছেন। সে হারেই ভাড়া নেওয়ার কথা। বেশি নেওয়ার কথা না। তারপরও কোনো বাসের লোকজন বেশি ভাড়া নিয়েছে এমন অভিযোগ পেলে সেই কোম্পানির বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে পেট্রোল পাম্পগুলোতে গতকালের (শনিবার) মতো আজও বাড়তি চাপ রয়েছে। গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে জ্বালানি সরবরাহকারী কর্মীদের। কিছু ক্ষেত্রে বাগ-বিতণ্ডাও হয়েছে অনেকের সঙ্গে। পরিবাগের মেঘনা মডেল সার্ভিস সেন্টার পেট্রোলিয়াম লিমিটেড স্টেশনে গিয়ে প্রাইভেটকারের লাইন দেখা যায়। স্টেশনের ম্যানেজার আজিজুল ইসলাম বলেন, দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের আগে অর্থাৎ রাত ৮টায় তাদের পাম্প বন্ধ হওয়ায় চাপ পড়েনি। তবে গতকালের মতো আজও পাম্প খোলার পর গাড়ির চাপ বেড়েছে।

এই স্টেশনে অকটেন নিতে লাইনে থাকা মোটরসাইকেল চালক মিনহাজুর রহমান বলেন, কয়েকটি পাম্প তেল সংকটের দোহাই দিয়ে বন্ধ রেখেছে বলে এই পাম্পে ভিড় বেশি। যে হারে দাম বেড়েছে বাইক ছেড়ে এবার সাইকেল চালাতে হবে।

সকালে নিউমার্কেট-সংলগ্ন কিউ জি সামদানী অ্যান্ড কোং পেট্রোল পাম্প বন্ধ দেখা যায়। এই পাম্পের ক্যাশিয়ার বেলাল হোসেন বলেন, দাম বাড়ার খবরের পর শুক্রবার রাতেই তেল নিতে ভিড় করেন চালকরা। রাত ৩টায় আমাদের মজুত শেষ হয়। বর্তমানে তেল মজুত নেই। সরবরাহ এলে আবার বিক্রি শুরু হবে। কাল পাম্প খুলবেন বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে, পাশের নীলক্ষেত মোড়ের পথের বন্ধু ফিলিং স্টেশন খোলা রয়েছে। এই ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, দাম বাড়ার কারণে মানুষ বেশি তেল নিচ্ছে না। বিশেষ করে বাইকাররা। আগে যারা ২০০-৩০০ টাকার তেল নিতেন, তারাই এখন একশ টাকার তেল নিচ্ছেন। দাম বাড়ার আগে একশ টাকায় এক লিটারের একটু বেশি অকটেন পেত। এখন পরিমাণ কমিয়ে একশত টাকারই নিচ্ছে।

এই পাম্পের মালিক আসলাম হোসেন বলেন, একবারে এত দাম বাড়ার কারণে মানুষ অল্প করে তেল নিচ্ছে। দাম বাড়ার গাড়ির সংখ্যা ঠিক থাকলেও তেল নেওয়ার পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। এতে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। দিন শেষে তেল বিক্রির পরিমাণ কমেছে।

আরও পড়ুন: ডিজেলের দাম কমায় বাসভাড়া কমলো শ্রীলঙ্কায় 

/মেসবাহ/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়