ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

লোডশেডিং: প্রতিমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ, চলতি মাসেই সমাধানের আশ্বাস

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪২, ৬ জুন ২০২৩   আপডেট: ২২:০৩, ৬ জুন ২০২৩
লোডশেডিং: প্রতিমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ, চলতি মাসেই সমাধানের আশ্বাস

দেশজুড়ে চলমান বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সবাইকে একটু ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, লোডশেডিংটা আকস্মিক, এটা বেশিদিন থাকবে না। এই মাসের মধ্যে সমাধান করতে পারব।

মঙ্গলবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তিনি একথা বলেন। চলতি অর্থবছরে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য ৩২ কোটি ৪৬ লাখ চার হাজার টাকা মঞ্জুরি দাবি করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তার এই দাবিতে ছাঁটাই প্রস্তাব দেন ১০ জন সংসদ সদস্য। তবে আলোচনায় অংশ নেন ছয় জন। বাকীরা অনুপস্থিত ছিলেন।

ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, কোভিড আমাদের অনেক ক্ষতি করে দিয়েছে। একটি করেছে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। আরেকটি করেছে স্বাস্থ্যগতভাবে মেমোরিটা লস করে দিয়েছে। যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। কারণ আমরা খুব দ্রুত ভুলে যায়। ১৬ ঘণ্টা, ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না। সেখান থেকে আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি।

তিনি বলেন, বর্তমানে দিনের বেলায় ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারি। পিক আওয়ারে সন্ধ্যা বেলায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং বর্তমানে চলছে। আরেক সংসদ সদস্য বলছেন, আমরা প্রচার করছি না। কিন্তু আমি বার বার আসছি, প্রচার করছি। ওয়েবসাইটে দিয়েছি, বিজ্ঞাপন প্রচার করছি। আমরা কষ্টটা সকলের সঙ্গে ভাগ করতে চেয়েছি। সকলকে জানিয়েছি কোথায়, কীভাবে হবে। মিডিয়াতে বলা হয়েছে বার বার। লোডশেডিংটা আকর্ষিক, এটা বেশিদিন থাকবে না। এই আকস্মিকতার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি।

বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নসরুল হামিদ বলেন, আমরা সময়মতো কয়লার জন্য এলসি করতে পারিনি। বৈশ্বিক ব্যবস্থা ও বর্তমানে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সবকিছুর ওপর চিন্তা করে আমরা সময়মতো কয়লাটা আনতে পারি নাই। যার কারণে পায়রার এ অবস্থা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্ল্যান্ট চালু করে দেব।

তিনি বলেন, আমাদের নতুন পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু হবে, পায়রা চালু হবে। রামপাল চলছে। এসএস পাওয়ার চালু হয়ে যাবে। আমরা ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনছি। আরও নিয়ে আসব। কিন্তু কিছু কিছু জায়গা আমাদের যে সমস্যা হচ্ছে সেটা হচ্ছে বৈশ্বিক জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের অর্থের যোগানটা সমস্যা হয়ে গেছে। এটা বেশি দিনের জন্য না। আমরা মনে করি ১৫ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আপনারা সকলেই একটু ধৈর্য ধরেন। বিশ্বের দিকে ও নিজের দেশের দিকে তাকিয়ে যদি আমরা ধৈর্য ধরি, তাহলে যে সমস্যাটা দেখতে পারছি সেটা পার হতে পারব।

মধ্যরাতে বিশাল বিদ্যুতের ব্যবহার হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এটা আগে ছিল না। অটো রিকশা সাড়ে তিনহাজার মেগাওয়াটের মত বিদ্যুৎ নিয়ে যায়। আমরা তো বন্ধ করেনি। সেগুলোও চালু রেখেছি। সাধারণ মানুষ যাতে সেটা ব্যবহার করতে পারে। ৪০ লাখের মতো অটো রিকশা আছে দেশে। আমরা তাদের ব্যবহার করার জন্য উৎসাহ করছি। সবাইকে বলছি, একটু ধৈর্য ধরুন। এই মাসের মধ্যে সমাধান করতে পারব।

এর আগে, ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, লোডশেডিং যেভাবে বাড়ছে তাতে জনরোষের সৃষ্টি হতে পারে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আমাদের ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার কিন্তু করে ফেলেছি ২৬ হাজার মেগাওয়াট। আর আজকে উৎপাদন হচ্ছে ৭ হাজার মেগাওয়াট।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এখন কমবেশি এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। এই লোডশেডিং আরও বাড়বে। বিল পরিশোধের কারণে পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছেন। বিদ্যুৎ বিল তো মানুষের বাকি নেই। গ্রাহকরা তো সবাই বিল দিচ্ছেন। তাহলে এই বিল কেন বাকি থাকছে? একটা হতে পারে ক্যাপাসিটি চার্জ। গণমাধ্যমে দেখেছি ৯০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ এসেছে। ২০ হাজার কোটি টাকা নাকি এখনো বাকি আছে। কেন এত ক্যাপাসিটি চার্জ হয়? কেন চুক্তিটা এভাবে করা হলো যে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতেই হবে। কেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাথে খাম্বা ও সঞ্চালন লাইন করা হলো না।

শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, বিএনপির আমলে বিদ্যুৎ ছিলো না, খাম্বা ছিল। এখন বিদ্যুৎ আছে খাম্বা নেই। ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। টাকা সর্টেজ। মানুষ গরমে কষ্ট পাচ্ছে। মোগল আমলে মানুষ যে কষ্টে ছিলো, এখন তার থেকে বেশি কষ্টে আছে।

তিনি বলেন, ১৫৩টি কেন্দ্রের সবগুলোতে কম উৎপাদন হচ্ছে। সরকারের ধারাবাহিক সাফল্যের একটি জায়গা ছিলো বিদ্যুৎ। সেটি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেল। এর থেকে তো আমি মনে করি জনরোষের সৃষ্টি হবে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ বিভাগ হুমকির মধ্যে পড়েছে। কবে যে আবার লোডশেডিং কমবে! এখন যেভাবে বিদ্যুৎ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আগামী ১০ বছর পরে আমাদের গ্যাসও শেষ হয়ে যাবে।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকলে দেশের অগ্রগতি থেমে যাবে। কৃষি উৎপাদন কমে যাবে। সমস্ত জায়গায় স্থবিরতা তৈরি হবে। প্রতিমন্ত্রী গোটা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ দিয়েছেন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু নেই। হঠাৎ করে কী হলো যে বিদ্যুৎ চলে গেল। আগেই যদি কয়লা বা ডিজেল আমদানি করা যেত আজকের এই সমস্যা হতো না। আমাদের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই। তড়িৎ গতিতে আমাদের কয়লা আমদানি করে বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো চালু করতে হবে।

রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে কিন্তু মন্ত্রীর কোনও কথা নেই। কেন? জনগণকে কনভিন্স করতে হবে। গণশুনানি করে বিষয়টি জানাতে হবে। লোডশেডিংয়ে বিষয়ে কেউ বলতে পারেন না। লোডশেডিংয়ের তথ্য জানাতে হবে। কোথায় অব্যবস্থাপনা রয়েছে সেটা দেখতে হবে। কর্মকর্তাদের ভেতর.. বিভিন্ন জায়গায়। এখানে কিন্তু অনেক ঘষেটি বেগম থাকতে পারে। তারা যেন আপনাদের সুনাম নষ্ট করতে না পারে।

আসাদ/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়