ঢাকা     মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

রেল ও নৌপথে স্বস্তি, ভোগান্তি সড়কে 

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪০, ২৭ জুন ২০২৩  
রেল ও নৌপথে স্বস্তি, ভোগান্তি সড়কে 

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়ছে রাজধানীতে বসবাস করা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। জলপথ ও ট্রেনে তুলনামূলক স্বস্তির যাত্রা হলেও সড়কপথে ভোগান্তি বেশি। তবে সেই ভোগান্তি উপেক্ষা করেই মানুষে গন্তব্যে ছুটছে। 

সোমবার (২৬ জুন) গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও অনেকে বাসের টিকিট পাচ্ছেন না। বাস কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে, অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ। তবে কিছু টিকিট ছিল যা বিক্রি করা হয়ে গেছে। ফল টিকিট না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা।

টিকিট সংকটে যাত্রীদের ভোগান্তির কথা জানতে চাইলে, হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার জাকির মোল্লা বলেন, ঈদের বিশেষ অগ্রিম টিকিট ১২ জুন থেকে বিক্রি শুরু হয়। এরই মধ্যে ২ জুলাই পর্যন্ত টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। যারা আগে থেকে যোগাযোগ করেছেন, তাদের জন্য অগ্রিম বুকিং কিছু টিকিট আছে।

গাবতলী টার্মিনালে যানজটের কারণে ভোগান্তি রয়েছে। গাবতলী টার্মিনালের যাত্রীদের আরেক ভোগান্তি পাশের গরুর হাট। হাটের কারণে একপাশে কল্যাণপুর থেকে টেকনিক্যাল মোড়, অন্যদিকে আমিনবাজার ব্রিজের দুপাশে রয়েছে যানজট। তার সঙ্গে ভোগান্তি হিসেবে যোগ হয়েছে বৃষ্টি।  

বাস কাউন্টারের কর্মীরা বলছেন, পদ্মা সেতু হওয়াতে দক্ষিণবঙ্গের অনেক যাত্রী এখন সায়েদাবাদ হয়ে ঘরে ফিরছেন। তাই তুলনামূলক গাবতলী টার্মিনালে ভিড় অনেকটাই কম। তবুও আজ সরকারি ছুটির প্রথমদিনে মোটামুটি চাপ রয়েছে গাবতলীতে।

সকালে দেখা যায়, যারা অগ্রিম অনলাইনে টিকিট কেটেছিলেন তারা ভিড় করছে কাউন্টারে। আবার অনেকেই এসেছেন টিকিট কেটে ঘরে ফিরতে।  

প্রায় একই চিত্র মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও। ঢাকার পাশের জেলাগুলোতে যাওয়ার জন‌্য বাসের টিকিটের চাহিদা বেশি।

কাউন্টার থেকে জানা যায়, উত্তরবঙ্গের বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুর অঞ্চলের যাত্রীর চাপ সন্ধ্যার পর বেশি। আর ঢাকার পাশের জেলা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর এই অঞ্চলের যাত্রীদের চাপ দিনে বেশি।

এর আগে গতকাল সোমবার ছিল ঈদের শেষ কর্মদিবস। তাই সন্ধ্যা পার হতেই ভিড় ছিল রাজধানীর বাস টার্মিনালে। তাই আজ গতকালের মতো চাপ না থাকলেও মোটামুটি যাত্রীর চাপ কম নয়। তবে আজ বৃষ্টির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।  

গাবতলী ও মহাখালীতে ঈদযাত্রা শুরুর চতুর্থ দিনে প্রায় সব গাড়িকেই সঠিক সময়ে নির্ধারিত স্টপেজ ছেড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। তবে ঢাকায় ঢুকতে দেরি হওয়ায় অনেক গাড়ির জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা রয়েছে।

উত্তরবঙ্গগামী এনা, একতা, এস আর পরিবহনের কাউন্টার কর্মীরা জানালেন, দূরপাল্লার বেশির ভাগ বাসেরই অগ্রিম টিকিট বিক্রি হওয়ায় যাত্রীদের অপেক্ষা এখন শুধু বাড়ি ফেরার নির্ধারিত বাসে চড়ার। তাই সময় অনুযায়ী কাউন্টারে আসলেই হচ্ছে। রাতের অগ্রিম যাত্রার টিকিট বেশি বিক্রি হয়েছে।

ঢাকা থেকে খুলনা, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর রুটের যাত্রা পদ্মা সেতুর জন্য দুই ভাগ হয়েছে। সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ীর কিছু অংশে আলাদা কাউন্টার রয়েছে বড় বাস কোম্পানিগুলোর। সেখানেও আজ ভিড় বেড়েছে। কাউন্টারগুলোতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে যাত্রীরা। গাড়ি থামলে ডেকে তুলে দিচ্ছেন কাউন্টার কর্মীরা।

এদিকে, যাত্রীদের চাপ বেশি থাকলেও কমলাপুর রেল স্টেশনে সুশৃঙ্খল পরিবেশ দেখা গেছে। টিকিটবিহীন যাত্রীদের ক্ষেত্রে এবার কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কোনো যাত্রী বিনাটিকিটে স্টেশন এলাকায় প্রবেশ করতে পারছেন না। 

আজ প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ট্রেনযোগে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন বলে জানা গেছে। কমলাপুর স্টেশন থেকে লোকাল-আন্তঃনগর মিলে ৫২ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। এছাড়া, রয়েছে এক জোড়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন। আর বিমানবন্দর স্টেশন থেকে আরও দুই জোড়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে আজ।

তবে ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে রেলে সিডিউল বিপর্যয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে এসে সঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়ার প্রক্রিয়া ধরে রাখতে পারেনি না বাংলাদেশ রেলওয়ে।

রেলসূত্র জানিয়েছে, দিনের প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেস প্রায় দুই ঘণ্টা দেরিতে রাজশাহীর উদ্দেশে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে। নীলসাগর এক্সপ্রেস ৬টা ৪০ মিনিটে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটিও ২ ঘণ্টা ৯ মিনিট দেরিতে ছেড়ে যায়। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৮টা ১৫ মিনিট ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি রেলস্টেশন ছাড়ে ৯টা ১০ মিনিটে।

তবে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার আফছার উদ্দিন বলেন, আমাদের এখান থেকে ট্রেন বিলম্বে ছাড়ার কোনো কারণ নেই। ট্রেনগুলো ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে আসতে বিলম্ব করছে। তাই ট্রেনগুলো ছাড়তেও বিলম্ব করছে। 

নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও সকাল থেকে যাত্রীর চাপ রয়েছে বলে জানা গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে নগরবাসী ছুটছেন শিকড়ের টানে। কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়মিত চলাচলকারী লঞ্চগুলোর কেবিনের অগ্রিম টিকিট শেষ হয়ে গেছে। ফলে বাড়ানো হয়েছে লঞ্চের সংখ্যা। লঞ্চ বাড়ায় এখনও টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন যাত্রীরা। কয়েকটি রুটে যাত্রীর চাপ থাকলেও ঢাকা-বরিশাল রুটে চাপ কিছুটা কম।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়