ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

তৃতীয় এলএনজি টার্মিনাল

দৈনিক রিগ্যাস চার্জ দিতে হবে ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ০৮:৩১, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
দৈনিক রিগ্যাস চার্জ দিতে হবে ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা

কক্সবাজারের মহেশখালীতে দৈনিক ৬০০ এমএমসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি সংস্থা সামিট অয়েল অ্যান্ড শীপিং কো. লি. (এসওএসসিএল)। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য টিইউএ এবং আইএ অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই টার্মিনাল ব্যবহার করলে প্রতিদিন রিগ্যাস চার্জ দিতে হবে ৩ লাখ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা)।

সূত্র জানায়,দেশের গ্যাসের চাহিদা পূরণ ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে। টার্মিনাল দুটির মাধ্যমে জি টু জি ভিত্তিতে পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তির আওতায় কাতার থেকে ১৫ বছর মেয়াদে বর্তমানে ২.৫ এমটিপিএ এলএনজি এবং ওমান থেকে ১০ বছর মেয়াদে ১.০ এমপিটিএ এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়া, সময়ে সময়ে চাহিদার আলোকে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে তর প্রস্তাব আহ্বানের মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে দীর্ঘমেয়াদে আগামী ২০২৬ সাল থেকে কাতার থেকে ১৫ বছর মেয়াদে ১.৫ এমটিপিএ এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে গত ১ লা জুন ওমান থেকে বিদ্যমান চুক্তির অতিরিক্ত হিসেবে ০.২৫ থেকে ১.৫ এমটিপিএ এলএনজি ১০ বছর মেয়াদে আমদানির লক্ষ্যে গত ১৯ জুন তারিখে এবং এক্সেলারেট গ্যাস মার্কেটিং লিমিটেড পাটনার্শিপ ( ইজিএমএলপি) থেকে ১৫ বছর মেয়াদে ০.৮৫ থেকে ১.০ এমটিপিএ এলএনজি আমদানির লক্ষে গত ৮ নভেম্বর  তারিখে এসপিএ স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়াও পেরিন্টিস আকাল এসডিএন, মালয়েশিয়া থেকে ২০২৪ সালে  ১.০ এমটিপিএ এলএনজি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন এবং দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির জন্য সামিট অয়েল অ্যান্ড শীপিং কো.লি. কে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব এলএনজি আমদানিসহ ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য অধিক পরিমাণ  এলএনজি আমদানির সুবিধার্থে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ফ্যাসিলিটি করা প্রয়োজন বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

সূত্র জানায়, সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কো.লি. মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করে ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর। তাদের প্রস্তাবটি ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন,২০১০ (সংশোধনী২০২১)’ এর আওতায় প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী) গত ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর নীতিগত অনুমোদন দেন।

প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ কমিটি (পিপিসি) এওএসসিএল এর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে। গত ৭ জুন তারিখে পিপিসি  এবং এসওএসসিএল এর মধ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা/নেগোসিয়েশন সভার প্রস্তাবিত এফএসআরইউ এর বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয় এবং সেগুলো সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয়।

একই সঙ্গে উদ্যোক্তা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা/নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে আইএ এর আর্থিক বিষয় নিস্পত্তিসহ আইএ এবং টিইউএ এর বিষয়ে ১১টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের মতামত/অনাপত্তি নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হলে এনবিআর, বিডা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ তাদের মতামত জানালেও অর্থ বিভাগ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোন জবাব দেয়নি। এনবিআর-এর মতামত পর্যালোচনা করে দেখা যায় প্রস্তাবিত টার্মিনাল সংক্রান্ত কোন মূসক,শুল্ক এবং আয়কর বিষয়ে কোন ধরনের অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে অনিহা প্রকাশ করে। পরে গত ১৮ নভেম্বর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য অনুস্বাক্ষরকারী চুক্তি অনুযায়ী টার্মিনাল কোম্পানিকে রিগ্যাস চার্জ বাবদ দৈনিক ৩ লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে এনবিআর যদি টার্মিনাল কোম্পানিকে
কর অব্যাহতি না দেয় তা হলে ১৫ বছরে অতিরিক্ত ৪০৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও অন্যান্য খাতে আরও ১০৫০ কোটি টাকাসহ মোট ৬৪১৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে।

এ বিষয়ে উদ্যোক্তা সংস্থার পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয়েছে, কর অব্যাহতি দেওয়া না হলে বর্তমানে প্রতি এমএমবিটিইউ রি-গ্যাস চার্জ ০.৫০ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ০.৬৭৪ মার্কিন ডলার হবে অর্থাৎ রি-গ্যাস চার্জ প্রায় ৩৪.৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এই অর্থ পরিশোধ করতে হলে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে হবে। এর ফলে বিদ্যুৎ ও সারের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, শিল্পের ক্রমবর্ধমান বিকাশ ও উৎপাদনশীলতা বাধাগ্রস্ত হবে, শিল্পের উৎপাদন হ্রাস পেলে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হবে। এসব যুক্তি দেখিয়ে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।

/হাসনাত/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়