ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

জলাশয় ভরাট করে টিস্যু কালচার ল্যাব নির্মাণ বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২২, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২২:২৩, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩
জলাশয় ভরাট করে টিস্যু কালচার ল্যাব নির্মাণ বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

রাজধানীর গৈদারটেকে বিএডিসির টিস্যু কালচার ল্যাব নির্মাণের কাজ চলছে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন গৈদারটেক এলাকায় ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে (২০২২-২০৩৫) চিহ্নিত জলাশয় ভরাট করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) টিস্যু কালচার ল্যাব নির্মাণ কাজ বন্ধে এবং জলাশয় সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। গত ৭ ডিসেম্বর এক চিঠিতে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

চিঠিতে স্বাক্ষর করেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল, নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, আইন ও শালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) এস এম রেজাউল করিম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির এবং পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালে ঢাকায় জলাধার ও জলাভূমির পরিমাণ ছিল ২০.৫৮ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে কমে হয়েছে ২.৯১ শতাংশ। একটি আদর্শ শহরে ১০ থেকে ১২ শতাংশ জলাশয় থাকার কথা। এর বিপরীতে রাজধানীতে আছে মাত্র ২.৯১ শতাংশ, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। জলাশয়গুলো ভরাটের প্রত্যক্ষ প্রভাব হিসেবে সামান্য বৃষ্টিতে ঢাকা মহানগরে প্রচণ্ড ও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা হয়। 

এ চিঠির মাধ্যমে ‘উন্নয়নের নামে জলাশয় ভরাট করা যাবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এমন অনুশাসন এবং ঢাকার আশপাশের নদী ও খাল উদ্ধারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) আধুনিক পদ্ধতিতে বীজ আলু উৎপাদনের লক্ষ্যে গৃহিত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে (২০২২-২০৩৫) জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত মিরপুর মৌজাস্থিত গৈদারটেক এলাকায় আরএস ৫০১০, ৫০১৩, ৫০১৬, ৫০১৭ ও তদ্সংলগ্ন দাগ এবং মহানগর ৩০০১, ৪০০৭ ও তদ্সংলগ্ন দাগসমূহের ১২ একর জলাশয় ভরাট করেছে। জলাশয়টি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ওয়াটার রেগুলেটিং পন্ডের সীমানার মধ্যে অবস্থিত। জলাবদ্ধতা সঙ্কটে থাকা এ নগরীর মিরপুর এলাকার পানি নিষ্কাশনের গুরুত্বপূর্ণ আধার এ জলাশয়। 

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, জনগুরুত্বপূর্ণ এ জলাশয় রক্ষায় হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক মামলার (নং ৯৬২৪/২০২৩) পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ আগস্ট ২০২৩ হাইকোর্ট বিভাগ উল্লেখিত জলাশয়ে পুনরায় মাটি ভরাট এবং যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের অন্তবর্তীকালীন এ আদেশ স্থগিত করে হাইকোর্ট বিভাগে মামলাটি শুনানির আদেশ দেন। বর্তমানে তা শুনানির অপেক্ষায় আছে।

চিঠির মাধ্যমে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মিরপুর মৌজাস্থিত গৈদারটেক এলাকায় ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে (২০২২-২০৩৫) চিহ্নিত জলাশয় ও ওয়াটার রেগুলেটিং পন্ড বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক ভরাটের সকল কার্যক্রম বন্ধে এবং ভরাটকৃত অংশ পুনরুদ্ধারপূর্বক পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। 

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের দৃঢ় বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও আন্তরিকতায় মিরপুর মৌজাস্থিত গৈদারটেক এলাকায় ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে চিহ্নিত জলাশয় পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে এবং নগরীর জলাশয় সুরক্ষায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।

নঈমুদ্দীন/রফিক 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়