ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

সময় ও ব্যয় বাড়ছে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্পের

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪  
সময় ও ব্যয় বাড়ছে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্পের

আমদানি করা জ্বালানি তেল সাগর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে খালাসের জন্য সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পটির পরামর্শক সেবার মেয়াদ বৃদ্ধিসহ দ্বিতীয় দফায় ব্যয় বাড়ছে।

মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে বাস্তবায়নাধীন এসপিএম উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে জার্মানির প্রতিষ্ঠান ‘আইএলএফ কন্সাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স’।

পরামর্শক ব্যয় বাড়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সম্পূরক চুক্তি সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব বুধবার (৩১ জানুয়ারি) অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জার্মানির প্রতিষ্ঠান ‘আইএলএফ কন্সাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স-এর সঙ্গে ২০১৬ সালের মার্চে মূল চুক্তি হয়। চুক্তি মূল্য ছিল ১ কোটি ২৬ লাখ ১ হাজার ২০০ ইউরো। পরবর্তীতে প্রকল্পের ডিটেইল ডিজাইন রিভিউ কাজ, চুক্তি বহির্ভূত কাজ ও প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে যাওয়ায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫২ লাখ ২৯ হাজার ২৪০ ইউরোর প্রথম সম্পূরক চুক্তি করা হয় এবং মোট পরামর্শক সেবা ব্যয় দাঁড়ায় ১ কোটি ৭৮ লাখ ৩০ হাজার ৪০০ ইউরো। বর্তমানে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সম্পূরক চুক্তিতে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ট্যাক্স ও ভ্যাট ছাড়া ৮৮ লাখ ৪৯ হাজার ২৫৮ ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা)। এর ফলে সর্বমোট পরামর্শক ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ২ কোটি ৬৬ লাখ ৭৯ হাজার ৬৯৮ ইউরো।

প্রথম সম্পূরক চুক্তির পর দ্বিতীয় সম্পূরক চুক্তিতে পরামর্শক ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৫০ শতাংশ (৪৯.৬৩ শতাংশ)। পর্যালোচনায় দেখা যায়, মূল পরামর্শক চুক্তিতে আর্থিক ব্যয়ের তুলনায় ৮ বছরের ব্যবধানে পরামর্শক ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি।

সূত্র জানায়, দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে বছরে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা হয়। বঙ্গোপসাগরের কর্ণফুলী চ্যানেলের নাব্য ৮ মিটার থেকে ১৪ মিটারের নিচে হওয়ায় অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে অপরিশোধিত তেলবাহী বড় ভ্যাসেল হ্যান্ডেল করতে পারে না চট্টগ্রাম বন্দর। যে কারণে অপরিশোধিত তেলবাহী মাদার (বড়) ভ্যাসেলগুলো গভীর সমুদ্রে নোঙর করা হয়। মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারেজ করে তা আনলোড করা হয়। লাইটারেজ ব্যবহার করে অপরিশোধিত তেল আনলোড করা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। এ অবস্থায় আমদানিকৃত জ্বালানি তেল খালাসের কার্যক্রম দ্রুত, সহজ, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।

জানা গেছে, বর্তমানে ১ লাখ টনের ক্রুড অয়েলবাহী একটি মাদার ভ্যাসেল খালাস করতে সময় লাগে কমপক্ষে ১১ দিন। এসপিএম পুরোদমে চালু হলে ২৮ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডিজেল ও ক্রুড অয়েলবাহী জাহাজ খালাস করা সম্ভব হবে। এতে বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তবে প্রাথমিক অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হলেও বর্ধিত সময় অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চীনা সরকারের অর্থায়নে ২০১০ সালে ইস্টার্ন রিফাইনারির মাধ্যমে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় বিপিসি। ২০১৫ সালে এর মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তা দিচ্ছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ট্যাঙ্ক ফার্ম ও মহেলখালীর পশ্চিমে গভীর সমুদ্রে একটি ভাসমান জেটি (এসপিএম) এবং ১১০ কিলোমিটার দৈর্ঘে্যর দুটি সমান্তরাল পাইপ-লাইন (মোট ২২০ কিলোমিটার) স্থাপনের কাজ ও কমিশনিং-এর আংশিক কাজ শেষ হয়েছে। ২২০ কিলোমিটার পাইপ-লাইনের মধ্যে অফশোরে ১৪৬ কিলোমিটার এবং অনশোরে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়েছে। এদিকে, প্রকল্পের মূল কাজ শেষ হওয়ায় গত বছর ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

ঢাকা/হাসনাত/ইভা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়