ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে র‌্যাবকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৪, ৬ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৪:২৬, ৬ মার্চ ২০২৪
অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে র‌্যাবকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

ফাইল ছবি

পবিত্র রজমান মাসে নিত্যপণ্যের বাজারে যারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মানুষকে কষ্ট দেয়, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কারসাজি করে, সেসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে র‌্যাবকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ঈদকে সামনে রেখে জাল নোটের কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার কথাও বলেন তিনি।

বুধবার (৬ মার্চ) কুর্মিটোলায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদরদপ্তরে সংস্থাটির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজান হচ্ছে সংযমের মাস। সংযমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে, যারা সংযমতার পরিবর্তে আরও লোভী হয়ে পড়ে। যে পণ্যগুলো আমাদের প্রয়োজন সেগুলো মজুত করে রাখা, সেগুলো দাম বৃদ্ধি করা, নানারকম কারসাজি করে থাকে। এই অসাধু ব্যবসায়ী এবং পাশাপাশি যারা চোরাকারাবরি তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ সময় ঈদকে সামনে রেখে জাল মুদ্রা বিস্তার রোধে নজরদারি বাড়ানো এবং অভিযান অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান তিনি।

‘ঈদ সামনে আসলেই জাল মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে যায়। সেসব বিসয়ে নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। যদিও এর ওপর অভিযান চলছে, এই অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।’

জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমনে র‌্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ঘোষণা দিয়েছিলাম, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নেবো। আমি ধন্যবাদ জানাই, রাবের সব সদস্যকে, তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। জঙ্গিবাদ দমনে তারা বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন, এজন্য র‌্যাবের সব সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাই জানাই।

তিনি বলেন, দেশে জঙ্গিবাদের একটি ঘটনার সাথে সাথে তা আমরা মোকাবিলা করেছিলাম। সেটি হলি আর্টিজানের ঘটনা। এরপর থেকে আমাদের দেশে কিন্তু আর কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারেনি। কারণ  আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, বিশেষ করে র‌্যাবের জঙ্গিবিরোধী ভূমিকার জন্য আমি প্রশংসা করি।

‘আমাদের অনেক সমস্যা ছিলো। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, অবৈধ অস্ত্র, মাদক, চরমপন্থা, জলদস্যু, বনদস্যু। একে একে প্রতিটি ক্ষেত্রে কিছু জায়গায় অ্যাকশন নিয়ে, কিছু জায়গায় বুঝিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিন্তু সাফল্য অর্জন করেছি। আজকে সুন্দরবন বনদস্যু মুক্ত হয়েছে। যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।’

একসময়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পরমপন্থাদের দৌরত্বের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ৯৬ সালে সরকারে এসে অনেককে আত্মসমর্পণ করিয়েছিলাম। এখন সবাইকে আত্মসমর্পণ করিয়ে আমরা জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সেই ক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং র‌্যাবের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

‘আজকে আমরা দেশের যে অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পেরেছি, এই উন্নতিটা কিন্তু হয়েছে এসব কর্মকাণ্ড যথাযথভাবে নিস্ক্রিয় করতে পেরেছি বলেই। জঙ্গি নেতাদের গ্রেপ্তার করা, তাদের বিভিন্ন আস্তানা ধ্বংস করা বা এই ধরনের ঘটনা ঘটার পর র‌্যাব অভিযান যেভাবে চালিয়েছে, আজকে আমাদের দেশে একটা শান্তি, স্বস্তি ফিরে এসেছে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে যে অবস্থাটা সৃষ্টি হয়েছিলো, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গি সংগঠনের চেষ্টা করা হয়েছিলো। সেখানেও আমরা ব্যবস্থা নিতে পেরেছি।’

‘আমাদের নিজের দেশের মধ্যে নিজেরা কেন আত্মঘাতী সংঘাতে লিপ্ত হবো? এই আত্মঘাতী সংঘাত থেকে মানুষকে মুক্ত করা সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেটি নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে র‌্যাবের ভূমিকা রয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করা এবং জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা-এই কাজটা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে র‌্যাব করতে পরেছে।’

তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে, মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ আছে। তবে দুঃখের বিষয় আমাদের বিরোধীদল নামে সংগঠন তারাও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। ২০১৩ সালে তাদের ভূমিকা কিভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষকে হত্যা করেছে। ট্রাকে বাবার সামনে ছেলে পুড়িয়ে দিয়েছে। চলন্ত ট্রেনে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। পুলিশ পিটিয়ে মেরেছে। পুলিশ হাসপাতালে আগুন দেওয়া, বিচারপতির বাড়িতে আগুন-এই ধরনের বীভৎস ঘটনা আমরা ঘটাতে দেখেছি। এই ধরনের ঘটনাগুলো মোকাবিলা করা এবং  সেগুলোর আসামিদের গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করাতে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় ছিলো।

‘তাদের কারণে এই সমস্ত ফুটেজ জনসম্মুখ্যে চলে এসেছে। তা না হলে এই দেশে কোনো একটা ঘটনা ঘটনোর পর একজনের দোষ আরেকজনের ওপর চাপানোর প্রবণতা আছে। যেমন ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা ঘটানোর পর ওই সময়ে যে প্রধানমন্ত্রী ছিলো, তিনি বলেছিলেন আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছি। আমি নাকি আত্মহত্যা করতে গিয়েছি। ঠিক এভাবে গত বছর ২৮ অক্টোবর যেমন আক্রমণ করা হয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জ্বালাপোড়াও করা হয়; সেই ঘটনাও আমাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু এখন আধুনিক প্রযুক্তি, সিসি টিভির ফুটেজের মাধ্যমে যথাযথ লোককে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সহজ হয়ে গেছে।’

র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একটি বড় দেশ হঠাৎ করে র‌্যাবের ওপর স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিলো। বিশেষ করে র‌্যাবের ডিজিসহ কর্মরত অনেকের ওপর। সেখানে আমার প্রশ্ন ছিলো, যারা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, জলদস্যু, বনদস্যু-এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা বা মানুষের অধিকার রক্ষায় যারা কাজ করেছে তাদের ওপর কিভাবে স্যাংশন আসে? তাদের অপরাধ কি?

‘কেউ যদি অপরাধ করে কেউ তো আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সে যেকোনো সংস্থার লোকই হোক তাকে আমরা আইনের আওতায় আনি এবং আমরা তার বিচারও করি, ভবিষ্যতেও হবে। দেখতে হবে তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে কি না। তারা দেশের মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যখন কোনো অপরাধী শনাক্ত করবে, ধরবে আর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আর সেজন্য আরেকটা দেশ এসে স্যাংশন দেবে এটা আমাদের কাছে কখনও গ্রহণযোগ্য নয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমে প্রথমে অনেকে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম স্যাংশন কখনও একতরফা হয় না। দরকার হলে আমরাও স্যাংশন দিতে পারি। সেই অধিকারও আমাদের রয়েছে। এই দেশটা আমাদের। রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো তারা পারেনি। সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মোকাবিলা করার চেষ্টা করা হয়েছিলো কিন্তু আমেরিকার জনগণ সেটা করতে দেয়নি, কোর্টে তারা বাধা দিয়েছিলো।

‘আমি মনে করি কেউ কিছু বললে নিজেদের মন খারাপ করার কিছু নেই। আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে হবে। আর অন্যের অধিকার সংরক্ষণ করা দায়িত্ব, সেই দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে। এই ক্ষেত্রে র‌্যাব যথাযথ ভূমিকা নিচ্ছে। শুধুমাত্র যে যারা অপরাধী যারা তাদের শুধু গ্রেপ্তার করাই না তাদের মোটিভেটেট করা হচ্ছে, উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে যাতে তারা স্বাভাবিক জীবনে আসে। একটার পর একটা কর্মসূটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে মানুষের ভেতর একটা পরিবর্তন নিয়ে আসা হচ্ছে। যাতে মানুষ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদকের সাথে সম্পৃক্ত না হয়।’  

এ সময় প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত এটা পরিচালিত করতে হবে, যাতে সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এবং এজন্য কারিগরি প্রযুক্তিসহ সব ধরনের ব্যবস্থা সরকার করে যাবে।

জনগণের নিরাপত্তা দিতে র‌্যাবের সদস্যারা অতীতের মতো ভবিষ্যতেও আরও দায়িত্বশীল কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

/পারভেজ/সাইফ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়