আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের চাকরি কোটাতে নয়: তথ্য উপদেষ্টা

সোমবার রাষ্ট্রীয়ভাবে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের সহায়তা দেওয়া শুরু হয়
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে আহত বা শহীদ পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়া হলেও তা কোনো কোটাতে যুক্ত হবে না বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে ফেসবুক পেজে তিনি এ বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন।
সেখানে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই শহীদ পরিবারদের এককালীন টাকার পাশাপাশি মাসিক ভাতা ও চাকরির কথা বলা হয়েছে। চাকরিতে এটা কোনো নতুন কোটা হিসেবে যুক্ত হবে না। পরিবারের কর্মক্ষম কোনো একজন ব্যক্তিকে একবারের জন্যই যোগ্যতার বিচারে সরকারি-আধা সরকারি অথবা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য এটা বিবেচ্য হবে না।”
আহতদের সহয়তার বিষয়ে তিনি বলেন, “আহতদের ক্ষেত্রে যারা সারাজীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (অন্ধ কিংবা অঙ্গহানী) এবং আর কখনো কর্মক্ষম হতে পারবে না তাঁদের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরকম আহতদের একটা বড় অংশই তরুণ এবং বাকি জীবন তাঁদেরকে আন্দোলনের ক্ষত বয়েই বেড়াতে হবে, অনেককে দীর্ঘকাল চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।”
আহতদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে নাহিদ ইসলাম লেখেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও গুরুতর আহতদের পুনর্বাসন এবং এই পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তা দেওয়াটা আমাদের অঙ্গীকার ছিলো এবং রাষ্ট্রের দায়িত্বও বটে। কয়েক হাজার পরিবার অচল হয়ে গিয়েছে এই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের ফলে। তাঁদের এই ক্ষতি আমরা কোনোকিছু দিয়েই পূরণ করতে পারবো না। আর এই পরিবারগুলো যেকোনো সুযোগ সুবিধার চেয়ে কেবল সকলের থেকে সম্মান ও মর্যাদা চায়।”
এর আগে সোমবার সকালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ২১টি শহীদ পরিবার ও আহত ৭ ব্যক্তির মধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্য দিয়ে এই সহায়তা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
জুলাই যোদ্ধারা দুটি মেডিকেল ক্যাটাগরি অনুযায়ী সুবিধা পাবেন। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ‘ক্যাটাগরি এ’ অনুযায়ী এককালীন ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-১৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। পাশাপাশি গুরুতর আহত প্রত্যেক জুলাই যোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসাসুবিধা পাবেন। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাবেন। তাঁরা কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন–সুবিধা পাবেন।
‘ক্যাটাগরি বি’ অনুযায়ী, জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-১৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা দেওয়া হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে। পাশাপাশি মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকারভিত্তিতে সরকারি-আধা সরকারি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
জুলাই যোদ্ধাদের পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে। তাঁরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে সরকার থেকে বিভিন্ন সুবিধাদি পাবেন।
এখন পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এছাড়া, আহত ব্যক্তিদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। খুব শিগগির তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
ঢাকা/ইভা