ঢাকা     রোববার   ১৩ জুলাই ২০২৫ ||  আষাঢ় ২৯ ১৪৩২

বিআরটিসি বাসেও বাড়তি ভাড়া, ঈদের যাত্রীরা অখুশি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ৫ জুন ২০২৫   আপডেট: ১৪:২০, ৫ জুন ২০২৫
বিআরটিসি বাসেও বাড়তি ভাড়া, ঈদের যাত্রীরা অখুশি

জধানীর গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে বৃহস্পতিবার সকালে। ছবি: রাইজিংবিডি

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকা থেকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে সরকারি বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে রশিদ ছাড়াই। একই চিত্র বেসরকারি পরিবহনেও, তবে তাদের বেলায় পরিস্থিতি আরো খারাপ বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

 বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাজধানীর গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ফরিদপুর, মাদারীপুরগামী যাত্রীরা টিকিটের জন্য দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু টিকিট মিললেও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে সবাইকে।

বরিশালগামী যাত্রী রাহাতুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা থেকে বরিশালগামী এসি বাসের ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা। এখন টিকিট কাটতে গিয়ে দেখা গেল ৭০০ টাকা নিচ্ছে। কোনো রশিদ দিচ্ছে না, কোনো ব্যাখ্যাও না। জিজ্ঞেস করলেই বলে ‘ঈদের স্পেশাল চার্জ’। এটা তো ডাকাতি!”

আরো পড়ুন:

একই অভিযোগ পটুয়াখালীগামী যাত্রী মো. শরিফুলের। তিনি বলেন, “নন-এসি বাসে সাধারণত ৫০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। এবার বলছে ৬০০ টাকা। সরকারি বাসেই যদি বাড়তি ভাড়া নেয়, তাহলে প্রাইভেট বাসে আমরা কী পাব?”

নির্ধারিত ভাড়া বনাম আদায়কৃত ভাড়া (ঈদ উপলক্ষে)

পুরোনো ভাড়া         ধরন             আদায়কৃত ভাড়া

ঢাকা–বরিশাল        এসি                ৬০০ টাকা ৭০০ টাকা
ঢাকা–বরিশাল        নন-এসি          ৪০০ টাকা ৫০০ টাকা
ঢাকা–পটুয়াখালী     নন-এসি         ৫০০টাকা ৬০০ টাকা

ঢাকা–পিরোজপুর   নন-এসি         ৪৮০ টাকা ৬০০ টাকা
ঢাকা–বরগুনা         নন-এসি         ৫৫০ টাকা৬৫০ টাকা


বিআরটিসি বাস চালক রহিম মিয়া বলেন, “ঈদের সময় একদিকে যাত্রী বেশি, আরেকদিকে বাস খালি নিয়ে আসতে হয়। তেলের খরচ, কমিশন, চাহিদা সব কিছু মিলে ভাড়া একটু বাড়ে। এটা আমাদেরও বাইরে থেকে চাপ।”

বেসরকারি পরিবহনগুলোর কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, নির্ধারিত ভাড়ার তুলনায় গড়ে ২০-৩০ শতাংশ বেশি আদায় করছেন তারা। কেউ কেউ ভাড়ার সঙ্গে সার্ভিস চার্জ, পিক টাইম চার্জ যুক্ত করে বাড়তি টাকা নিচ্ছে। তবে কোনো পরিবহন সংস্থা সরকারি অনুমোদনের কপি দেখাতে পারেনি।

বরিশালগামী যাত্রী সুমাইয়া আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ঘরে বাবা-মা অপেক্ষা করছেন। তবে টিকিট কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, তার ওপর আবার ভাড়াও বেশি দিতে হচ্ছে। এটা কেমন রাষ্ট্রীয় সেবা?

যাত্রী আবির হাসান বলেন, “বিআরটিসির মতো সরকারি প্রতিষ্ঠান যেখানে নিয়ম মানছে না, সেখানে বেসরকারি পরিবহনের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ কতটা কার্যকর, তা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এসআই মো. জামান বলেন, “আমরা নিয়মিত নজরদারি করছি। কিন্তু কেউ লিখিত অভিযোগ না করলে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।”

বিআরটিসির চিফ ইনফরমেশন অফিসার মো. মাসুদ বলেন, “ঈদের সময় যাত্রী বেশি, বাস কম। তাই কিছু রুটে সামান্য পরিবর্তন হয়। তবে কেউ নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে নিলে তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেব।”

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাড়তি ভাড়া আদায় দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ নিয়ম ভাঙলে তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানা ও লাইসেন্স বাতিলের বিধান রয়েছে। তবে ভোক্তাদের অভিযোগ জানাতে হবে।

‘ঈদের আনন্দ লুটে নিচ্ছে পরিবহন সিন্ডিকেট’

একাধিক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে  বলেন, বেসরকারি বাসের অতিরিক্ত ভাড়া ও টিকিট সংকটের পাশাপাশি এবার সরকারি পরিবহন খাতেও অনিয়ম ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। অনেক যাত্রী বলছেন, সবাই মিলে লুটে নিচ্ছে ঈদের আনন্দ। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা যদি ভোগান্তির আরেক নাম হয়, তবে রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর জবাবদিহি নিয়েই জনমনে প্রশ্ন তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।

ঢাকা/এএএম/রাসেল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়