ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

চট্টগ্রামে বিওএফ সম্প্রসারণে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর হচ্ছে জলিল টেক্সটাইল

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫০, ২৮ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ১৮:৫১, ২৮ জুলাই ২০২৫
চট্টগ্রামে বিওএফ সম্প্রসারণে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর হচ্ছে জলিল টেক্সটাইল

বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি (বিওএফ) সম্প্রসারণের জন্য চট্টগ্রামের জলিল টেক্সটাইল মিলস সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট এলাকায় ১৯৬১ সালে স্থাপন করা হয় ব্যক্তি মালিকানাধীন মেসার্স জলিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে মিলটি জাতীয়করণ করা হয়। এটি পরিচালনার দায়িত্ব বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) অধীনে ন্যস্ত করা হয়। এ  টেক্সটাইল মিলের জমির পরিমাণ ৫৪.৯৯ একর।

১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার, বিটিএমসি ও জলিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের দ্বিপাক্ষিক ও ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানির অথরাইজড ডিরেক্টর ব্যারিস্টার সুলতান আহমেদ চৌধুরী এবং নুরুন নাহার চৌধুরীর (মরহম এম এ লতিফ চৌধুরীর স্ত্রী) কাছে মিলটি হস্তান্তর করা হয়। মিল কর্তৃপক্ষ হস্তান্তর চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় ১৯৯৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর মিলটি পুনরায় অধিগ্রহণ করা হয়। একই দিনে চেয়ারম্যান নুরুন নাহার চৌধুরী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস সেলিম চৌধুরীর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী মিলটি পুনঃহস্তান্তর করা হয়। নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ মিল বন্ধ রাখা, সরকারি পাওনা পরিশোধ না করা এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ না করায় ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি পুনরায় মিলটি পুনরায় অধিগ্রহণ করা হয় এবং বিটিএমসির অধীনে ন্যস্ত করা হয়। এ মিলে সরকারের কোনো শেয়ার নেই।

জলিল টেক্সটাইল মিলস পুনঃগ্রহণ আদেশের বিরুদ্ধে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুস সেলিম চৌধুরী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ এবং বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের দ্বৈত বেঞ্চ গত ১২ জানুয়ারি সেটি ডিসচার্জ করেন অর্থাৎ বিটিএমসির পক্ষে রায় হয়। পরে মো. আবদুস সেলিম চৌধুরী আপিল বিভাগে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল দায়ের করেন। ওই সিভিল পিটিশন ফর লিভটু আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে গত ২৯ জুন শুনানি হয়। এতেও রিট পিটিশনটি ডিসমিস হয়েছে মর্মে সরকার পক্ষের আইনজীবী প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।

২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর সেনা সদরের কিউএমজি শাখা বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি (বিওএফ) সম্প্রসারণের জন্য জলিল টেক্সটাইল মিলটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের জন্য গত বছরের জুন বিশেষজ্ঞ দলসহ সেনাপ্রধান মিলটি পরিদর্শন করেন। মিলটি চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এবং নিকটবর্তী সীমান্ত থেকে ৮২ কিলোমিটার দূরে অবস্থান হওয়ায় মিলের জমিতে বিওএফের সম্প্রসারিত শাখা প্রতিষ্ঠার জন্য ৫৪.৯৯ একর জমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুকূলে প্রদানের বিষয়ে সেনাবাহিনী প্রধান প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা ও মৌখিক সম্মতি গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও মিলের জমিসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, যাবতীয় পাওনা, আইনগত এবং অন্যান্য বিষয়াদি নিরসন করে প্রতীকী মূল্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুকূলে হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

বিটিএমসির হিসাব অনুযায়ী, জলিল টেক্সটাইল মিলের কাছে ইউটিলিটি বিলসহ অনেক টাকা পাওনা আছে। এসব পাওনা পরিশোধ ছাড়া সেনাবাহিনী যে উদ্দেশ্যে মিল চাচ্ছে, সে কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। এছাড়া, হস্তান্তর চুক্তি অনুযায়ী সরকারি পাওনা এবং ২০২০-২০২১ সালের অডিট হিসাব অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে, মিলের ৫৪.৯৯ একর জমির মধ্যে ৪৬.৯৩ একর জমির মৌজা মূল্য ৬০ কোটি ৯৭ লাখ ৮৩ হাজার ৯৬৫ টাকা এবং ৮.০৬ একর জমির (আবাসিক) মৌজা মূল্য ৫০ কোটি ৪৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯০ টাকা।

সেনা সদরের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জলিল টেক্সটাইল মিলের ৫৪.৯৯ একর জমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুকূলে ১৭ কোটি ৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা (কম/বেশি) বিটিএমসিকে দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়