প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা
তিন দাবিতে বিক্ষোভ ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার প্রার্থীদের
ছবি: রাইজিংবিডি
নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা (সংশোধিত)-২০২৫ এর দ্রুত গেজেট প্রকাশ করাসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছেন ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডারপ্রার্থীরা। অন্যদিকে তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়ে তার কার্যালয়ে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন তারা।
রবিবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বঞ্চিত ননক্যাডার প্রার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। তারা অবিলম্বে তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন, অন্যথায় মাঠ পর্যায়ে আরো কঠোর কর্মসূচির কথা জানিয়েছেন। এজন্য কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তারা দায়ী থাকবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
তিন দফা দাবি তুলে ধরে ননক্যাডার প্রার্থীরা বলেন, ‘নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা (সংশোধিত)-২০২৫ এর দ্রুত গেজেট প্রকাশ করতে হবে। ৪৩তম থেকে ৪৭তম বিসিএস নন-ক্যাডারের নামে অধিযাচিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য পদ প্রত্যাহার করে পৃথক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বন্ধ করতে হবে এবং ৪৩তম বিসিএসসহ অপেক্ষমাণ সব বিসিএসের ভাইভায় উত্তীর্ণ কিন্তু ক্যাডারবঞ্চিত প্রার্থীদের সর্বোচ্চ সংখ্যককে বিসিএস নন-ক্যাডারে সুপারিশ করতে হবে।’
তারা বলেন, ‘৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার নিয়োগের সুপারিশ কার্যক্রম দীর্ঘসূত্রতায় থমকে আছে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যুব উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে জনবল সংকট দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রায় ৯ হাজার শূন্যপদ অধিযাচন করা হলেও, বিধি সংশোধনের বিলম্বে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) এখনো সুপারিশ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। এর ফলে প্রায় ৬৫০০ ভাইভা উত্তীর্ণ মেধাবী নন-ক্যাডার প্রার্থী অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।’
‘‘এই নিয়োগ দ্রুত সম্পন্ন হলে সরকার দক্ষ জনবল পাবে, শূন্যপদ সংকট কমবে এবং সরকারের সময় ও ব্যয় সাশ্রয় হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো-এটি জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়ন করবে, যেখানে ছাত্রসমাজের প্রধান দাবি ছিল বেকারত্ব দূরীকরণ ও দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নিলে সরকার যেমন জনসেবায় গতি আনতে পারবে, তেমনি তরুণ সমাজের আস্থা ও সমর্থনও অর্জন করবে বলেও মনে করেন তারা।’
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন মারুফ হোসেন, ফারুকুল ইসলাম, হাসান আজিজুল, মুইজউদ্দীন মুহিত প্রমুখ। এতে শতাধিক নন ক্যাডারপ্রার্থী অংশ নেন।
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বিসিএস নন-ক্যাডারদের বাদ দেওয়াসহ এই ক্যাডারে ষড়যন্ত্রমূলক বিলম্বের মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ করে তারা বলেছেন, ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার তালিকা থেকে দ্রুত সুপারিশ সম্পন্ন করতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের তদারকি ও নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ে আটকে থাকা "নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) (সংশোধন) বিধিমালা, ২০২৫’ কেন বিলম্বিত হচ্ছে-তা খতিয়ে দেখা এবং দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যারা প্রাইমারিসহ অন্যান্য পদ বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে প্রত্যাহার করে আলাদা সার্কুলারের নামে নতুন প্রক্রিয়া চালু করে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করছে, তাদের চিহ্নিত করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সরকার ও ছাত্রসমাজের মধ্যে অযাচিত সংঘাত তৈরি করতে পারে এমন ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সক্রিয় ভূমিকা চেয়েছেন তারা।
নেতারা আবেদনে বলেছেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই-এই অন্যায্য সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকলে ছাত্র সমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে আবারও রাস্তায় নামবে। এতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, যা শুধু শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য নয় বরং জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। অতএব, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সংকট নিরসন এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে আপনার জরুরি হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।’
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি