শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের সর্বাত্মক অবরোধ
রবিবার দুপুর ২টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীসহ ছাত্র-জনতা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। ছবি: রায়হান হোসেন।
শহীদ শরিফ ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে সর্বাত্মক অবরোধ শুরু করেছে ইনকিলাব মঞ্চ। গতকাল রাতে দেশের সব বিভাগীয় শহরে এই সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দেয় তারা।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। মূলত সকাল দশটার পর থেকেই ছাত্র-জনতা সেখানে অবস্থান করছিল।
এ সময় তারা ‘তুমি কে আমি কে, হাদি হাদি’, ‘আমার ভাই মরল কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’, ‘ঢাকা না দিল্লি, ঢাকা ঢাকা’, ‘জাহাঙ্গীরের গদিতে, আগুন জ্বালাও একসাথে’, ‘আমরা সবাই হাদি হবো, গুলির মুখে কথা কব’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি ঘরে ঘরে’ এমন স্লোগান দেন।
এর আগে গতকাল ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেছিলেন, ‘‘এই অবরোধ শুধু হাদি হত্যার বিচারের জন্য নয়, বরং এটি ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার অবরোধ।’’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘যদি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস হাদি হত্যার বিচারের ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন, তবে আমরা তাকেও মানব না।’’
জাবের বলেন, ‘‘আমরা ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত খুনিদের গ্রেপ্তার করতে সরকারকে সময় দিয়েছিলাম। সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এখন লাগাতার আন্দোলন চলবে। যতক্ষণ পর্যন্ত খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হয় অবরোধ কর্মসূচি চলবে।’’
এর আগে গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে জুমার নামাজের পর ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থী-জনতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে এসে অবস্থান নেন। সেদিন রাতভর সেখানে তারা অবস্থান করেন।
গতকাল শনিবার মধ্যরাতে শাহবাগের কর্মসূচি আজ দুপুর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। তবে হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে আজ দুপুর ২টা থেকে সারা দেশে সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দেয় ইনকিলাব মঞ্চ।
এ দিকে আজ দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনার মূল দুই আসামি ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
উল্লেখ্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় হামলার শিকার হন তিনি। চলন্ত রিকশায় থাকা হাদির মাথা লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায় আততায়ী। গুরুতর আহত হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে হাদিকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ ডিসেম্বর মারা যান শরিফ ওসমান বিন হাদি।
ঢাকা/রায়হান/ইভা