হাদি হত্যা: হামলাকারীর ২ সহযোগী ভারতে গ্রেপ্তার
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করা হয় মোটরসাইকেল থেকে। ফাইল ফটো।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনার মূল দুই আসামি ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ভারতে তাদের পালাতে সহায়তা করেছে এমন দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ।
রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডের মূল শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ এবং তার সহযোগী মোটরসাইকেলচালক মো. আলমগীর শেখ ঘটনার পরপরই ঢাকা ছাড়েন। তারা প্রথমে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আমিনবাজার যান। সেখান থেকে মানিকগঞ্জের কালামপুর হয়ে একটি প্রাইভেটকারে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরকে চিহ্নিত করার আগেই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সীমান্ত অতিক্রম করতে সক্ষম হন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হালুয়াঘাটের মুন ফিলিং স্টেশনের আগে ফিলিপ ও সঞ্জয় নামের দুই ব্যক্তি তাদের গ্রহণ করেন। ফিলিপ তাদের সীমান্ত পার করে ভারতে পুত্তি নামের এক ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করেন। পুত্তি তাদের সামি নামের এক ট্যাক্সিচালকের গাড়িতে তুলে দেন। ওই চালক তাদের মেঘালয় রাজ্যের তুরা শহরে পৌঁছে দেন।
ডিএমপি আরো জানায়, মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ করে জানা গেছে, আসামিদের পালাতে সহায়তাকারী পুত্তি ও সামি সেখানে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, অস্ত্র লুকানো এবং আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আছেন শুটার ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির, মা আসিফা বেগম, স্ত্রী শাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু এবং বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।”
মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “সরকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার বিচার করার ঘোষণা দিয়েছে। সে লক্ষ্যেই আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারলে এর পেছনে কারা কার কাজ করেছে সেটা আরো স্পষ্ট হতো। আমাদের কাছে কিছু তথ্য আছে, কিন্তু তদন্তের স্বার্থে আমরা সেই নামগুলো বলবো না। আমাদের ধারণা, ৫ আগস্টের পরবর্তীতে হাদি খুবই ভোকাল ছিল, তার কথাবার্তা স্পষ্ট ছিল এবং একটি আদর্শকে ধারণ করে। এই আদর্শ বা ৫ আগস্টে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তারা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকতে পারে বলে আমাদের ধারণা।”
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠিক দুইভাবেই তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। দেশের মাটিতে এনে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।”
জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় হামলার শিকার হন হাদি। চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করেন চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুলিটি লাগে হাদির মাথায়। গুরুতর আহত হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ ডিসেম্বর মারা যান হাদি।
ঢাকা/এমআর/ইভা