ঢাকা     রোববার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের কঠোর পদক্ষেপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৩:২৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের কঠোর পদক্ষেপ

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ

অবৈধ অভিবাসী ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের ফেরত না নেওয়ার অভিযোগ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর (ডিআর কঙ্গো) ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) গভীর রাতে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে এই কঠোর পদক্ষেপের কথা জানায়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, অ্যাঙ্গোলা ও নামিবিয়া তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। খবর বিবিসির।

আরো পড়ুন:

গত মাসে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ ঘোষিত ব্যাপক সংস্কার নীতির অধীনে এই চুক্তিগুলোই প্রথম বড় ধরনের পরিবর্তন। এই সংস্কারের লক্ষ্য হলো, শরণার্থী মর্যাদাকে অস্থায়ী করা এবং যুক্তরাজ্যে কাগজপত্র ছাড়াই আগতদের নির্বাসন দ্রুত করা।

এই বিষয়ে আফ্রিকান তিন দেশ ডিআর কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা বা নামিবিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ডিআর কঙ্গো যুক্তরাজ্যের সহযোগিতার শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের জন্য ‘ফাস্ট-ট্র্যাক’ ভিসা পরিষেবা এবং ভিআইপি ও নীতিনির্ধারকদের দেওয়া বিশেষ সুবিধাগুলো বাতিল করা হয়েছে।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেন, “সহযোগিতার দ্রুত উন্নতি না হলে ডিআর কঙ্গোর নাগরিকদের জন্য সম্পূর্ণ ভিসা বন্ধ করে দেওয়ার মতো আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে যুক্তরাজ্য।”

তিনি বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করি দেশগুলো নিয়ম মেনে চলবে। যদি তাদের কোনো নাগরিকের এখানে থাকার অধিকার না থাকে, তবে তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “আমি অ্যাঙ্গোলা ও নামিবিয়াকে তাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এখন ডিআর কঙ্গোর সঠিক কাজটি করার সময়। আপনাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিন অথবা আমাদের দেশে প্রবেশের বিশেষ অধিকার হারান।”

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন মধ্য-বামপন্থি সরকার গত মাসে যুক্তরাজ্যের আশ্রয় (অ্যাসাইলাম) ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে শরণার্থীদের এবং তাদের সন্তানদের সুরক্ষা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত অনিয়মিত অভিবাসীদের আগমন রোধ করার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ, যা দেশটির কট্টর-ডানপন্থিদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজারেরও বেশি মানুষ ছোট নৌকায় করে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। এই সংখ্যা ২০২৪ সালের মোট সংখ্যার চেয়ে বেশি, তবে ২০২২ সালের রেকর্ড সংখ্যার চেয়ে কম।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ডেনমার্কের কঠোর আশ্রয় ব্যবস্থার আদলে নতুন সংস্কারগুলো শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের ফ্রান্স থেকে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করতে নিরুৎসাহিত করবে।

তিনি বর্তমান ব্যবস্থাকে ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ উল্লেখ করে বলেন, “এটি একটি অস্বস্তিকর সত্য যা সরকারকে মোকাবিলা করতে হবে।”

স্বরাষ্ট্র দপ্তরের নতুন সংস্কার নীতির আওতায় শরণার্থী মর্যাদা সাময়িক হবে এবং প্রতি ৩০ মাস পর এটি পর্যালোচনা করা হবে। এছাড়া স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনের জন্য এখন ৫ বছরের পরিবর্তে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে।

গত বছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারেও বেশি অনুমোদনহীন অভিবাসীকে বহিষ্কার করেছে যুক্তরাজ্য, যা পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি।

তবে, এই নীতির সমালোচনাও হচ্ছে তীব্রভাবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক উপদেষ্টা মার্ক ডেভিস এটিকে ‘লজ্জাজনক’ এবং ‘শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্য ব্রিটেনের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি’ থেকে বিচ্যুতি বলে অভিহিত করেছেন।

সাবেক লেবার নেতা জেরেমি করবিন এটিকে ‘বর্বর’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং কট্টর বর্ণবাদী শক্তিকে তুষ্ট করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। তার মতে, একই সঙ্গে এটি জাতিসংঘের মানবাধিকার কনভেনশনকে ক্ষুণ্ন করে।

যুক্তরাজ্যের শরণার্থী কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন সরকারকে নতুন নীতিটি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই পরিকল্পনা অভিবাসীদের সমুদ্র পাড়ি দেওয়া থেকে বিরত করতে পারবে না। তার মতে, কঠোর পরিশ্রমী শরণার্থীদের ‘নিরাপদ, স্থায়ী জীবন’ গড়ে তুলতে সক্ষম হওয়া উচিত।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাজ্যে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার আশ্রয়ের আবেদন জমা পড়েছে, যা একটি রেকর্ড। 

বেশিরভাগ আশ্রয়প্রার্থী এবং শরণার্থী বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে আসেন। দেশটিতে মোট অভিবাসীর সংখ্যা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত রেকর্ড ৯ লাখ ৬ হাজারে পৌঁছানোর পর ২০২৪ সালে অংশিকভাবে কঠোর ভিসানীতি বাস্তবায়নের ফলে অভিবাসীর সংখ্যা ৪ লাখ ৩১ হাজারে নেমে এসেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়