ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য কমানোর উদ্যোগ নিন
সড়কে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন। গ্রাম থেকে শুরু করে নগর-মহানগরেও ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দাপুটে উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। এই যানবাহনগুলোর অধিকাংশই অনুমোদনহীন। ইজিবাইক চালকদের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। লাইসেন্সও নেই। যেকোনো বয়সের ব্যক্তি একটি ইজিবাইক কিনতে পারলেই সেটি চালানো শুরু করে দিতে পারেন। প্রশিক্ষণ না থাকায় তারা সড়কের আইন-কানুন জানেন না। এর ফলে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে।
একটা ব্যাপার হচ্ছে, যারা ইজিবাইকচালক হিসেবে কাজ করছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই কৃষিকাজের সঙ্গে অর্থাৎ উৎপাদনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তারা এই পেশাটি গ্রহণ করায় কৃষিকাজে শ্রমিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ইজিবাইক চালানোর কাজটিতে তারা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, কারণ এই পেশাটি তুলনামূলক সহজ এবং আরামপ্রদ। শুধু তাই না, এই পেশায় একধরনের স্বাধীনতা আছে। একজন চালক চাইলেই বেলা ১২টার দিকে কাজে যেতে পারেন, এ নিয়ে তাকে কেউ প্রশ্ন করবে না। কিন্তু, তিনি যদি কোনো উৎপাদনশীল খাতে শ্রমিক হিসেবে যোগ দেন, তাহলে তাকে একটা সময় মেনে চলতে হবে। এসব কারণেও এই পেশাটি জনপ্রিয়।
অনেক অঞ্চলে দেখা যায় পালাক্রমে এসব ইজিবাইক চালানো হচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, প্রয়োজনের তুলনায় এর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। এদিকে, এইসব যানবাহন আসার পরে গ্রাম পর্যায়ের মানুষের হাঁটাহাটি করার প্রবণতা কমে গেছে। গ্রামের শিশুরা পর্যন্ত এখন একেবারে কাছের স্কুলটিতেও আর হেঁটে যেতে আগ্রহী না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতি, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সম্পর্কে।
প্রথমে সমাজকল্যাণ মন্ত্রালয় কর্তৃক শারীরিক ত্রুটিসম্পন্ন মানুষের জন্য এই যানবাহন অ্যালাউ করা হয়েছিল। তারা যেহেতু প্যাডেল চালাতে পারেন না, তাদের জন্য এই ব্যাটারিচালিত গাড়ি চালানোর অনুমতি ছিল। কিন্তু, এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে কিছু সুযোগসন্ধানী মানুষ পুরোপুরি সুস্থ থাকার পরেও ইজিবাইক চালাচ্ছে। খোদ রাজধানীতেও এগুলো দেখার কেউ নেই। মাঝে-মধ্যে পুলিশি অভিযান চলে, কিন্তু সেটা খুব বেশি কার্যকর নয়।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে অবৈধ ইজিবাইকের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি। এগুলো সাধরণত অবৈধ বিদুৎ সংযোগ থেকেই চার্জ দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হয়ত বলবে যে, সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য এই যানগুলো কার্যকর। যে বিপুল পরিমাণে ইজিবাইক আমাদের দেশে ঢুকে পড়েছে, এগুলো একসময় আবর্জনায় পরিণত হবে। এর লেড অ্যাসিড ব্যাটারি, মটরগুলো একসময় ব্যবহারের অনুপযোগী হবে। এগুলো একসময় বের্জ্য পরিণত হবে। কিন্তু, সেই বর্জ্য কোথায় ফেলবে, এর রিসাইক্লিং কীভাবে হবে, এগুলো নিয়ে সমীক্ষা বা কারও কোনো চিন্তা-ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। এ থেকে উত্তরণের পথ কী, আমার মনে হয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাবার সময় এসে গেছে।
ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য কমানো না গেলে কিছুদিন পর রাস্তায় দেখা যাবে এই গাড়ি একটার গায়ে আরেকটা লেগে আছে। এখনই অনেক সময় রাস্তায় এমন দৃশ্য তৈরি হয়। রাস্তার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য কমানো উচিত। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক উদ্যোগ গ্রহণের এখনই উপযুক্ত সময়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী, সচেতন নাগরিককে এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
ঢাকা/রফিক