ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগে ‘আসল কমিটি’ কোনটা

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২১, ১৪ জুন ২০২৩   আপডেট: ১৬:২৫, ১৪ জুন ২০২৩
সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগে ‘আসল কমিটি’ কোনটা

ফাইল ছবি

নব্বইয়ের দশকে যারা সুইজারল্যান্ড শাখা আওয়ামী লীগের গোড়াপত্তন করেছিলেন, কালের পরিক্রমায় সেই পুরোনোদের এখন অস্তিত্ব সংকটের লড়াই। দলে আসা নতুন নেতাদের ছড়াছড়ি আর আভিজাত্য ও ক্ষমতার জৌলুসে ম্লান সেইসব ত্যাগী নেতারা। ঠাঁই হয় না কমিটিতে, অভিযোগ-অনুযোগেও যেন গা নেই কেন্দ্রের। এ নিয়ে মনের ক্ষোভে নিস্ক্রিয় কেউ কেউ। বাকিরা লড়ছেন সংগঠন ‘বাঁচাতে’। সংগঠনের পুরোনোদের বলা হচ্ছে অজনপ্রিয় আর নতুনদের বলা হচ্ছে হাইব্রিড। এ নিয়ে বিভক্ত নেতারা।

বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ‘ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট: সোশ্যাল জাস্টিস ফর অল’-এ যোগ দিতে সুইজারল্যান্ডে গিয়েছেন তিনি। ফিরবেন ১৬ জুন।

এ সময় জেনাভায় বেশ কয়েকটি কর্মসূচি যোগ দেওয়ার পাশাপাশি সুইজারল্যান্ডে আওয়ামী লীগের আয়োজনে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। কারা থাকবেন নেতৃত্বে, এ নিয়েই পুরোনো দ্বন্দ্ব আবারো মাথাচারা দিয়ে উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুইজারল্যান্ডের এই দ্বন্দ্ব বেশ পুরোনো। তবে এই দ্বন্দ্ব থামাতে খুব বেশি মনোযোগী না কেন্দ্র। দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ এ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না বলে নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে। একাধিকবার এ নিয়ে চিঠি চালাচালি হলেও কার্ত কোনো উদ্যোগ নেননি তিনি বলে নেতাকর্মীদের ভাষ্য।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ’৯০-এর দশকে যখন সুইজারল্যান্ডে অল্পসংখ্যক বাংলাদেশিদের বসবাস ছিল, তখন কয়েকজন আওয়ামী লীগ সমর্থক মিলিত হয়ে এক সভার মাধ্যমে সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগ গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। ওই সময়ে প্রথম সভা রজত সিংহের উদ্যোগে সুইজারল্যান্ডের ফ্রিবুর্গ শহরে আয়োজন হয়। রজত তখন প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০২-২০০৬ সাল পর্যন্ত জেনেভায় জাতিসংঘ হাইকমিশন এবং মানবধিকার হাইকমিশনে বাংলাদেশে মানবধিকার লংঘন, নির্যাতন, হত্যা, গুম, খুন ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন রিপোর্ট প্রদান করে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে বেলজিয়াম থেকে বর্তমান তথ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ উপস্থিত থেকে সুইজারল্যান্ডের তৎকালীন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক রজত সিংহকে সহযোগিতা করেন। তখন থেকেই সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগ বেশ তৎপর ছিলো। ২০১৪ সাল পর্যন্ত সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলেও এরপর থেকে সংকটের মুখোমুখি হয়।

অভিযোগ আছে, ওই সময়ে হারুন বেপারী সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর নিজ এলাকার মুন্সীগঞ্জের ৩৩ জন লোককে কমিটিতে স্থান দেন। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে তা সংগঠনকে বিভক্ত করে ফেলে।

জানতে চাইলে রজত সিংহ রাইজিংবিডিকে বলেন, হারুন ব্যাপারী যাদের অনুপ্রবেশ করায় তাদের অধিকাংশ বিএনপি-জামায়াতের লোক। এর মধ্যে নজরুল ইসলাম জমাদার একজন। বর্তমানে হাইব্রিডদের সমর্থন নিয়ে নজরুল জমাদার সভাপতির পদ দখল করে আছেন এবং দীর্ঘদিনের পুরাতন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে বাদ দিয়ে হাইব্রিডদের নিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও স্বাধীনতা বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত আছেন। গত ২০ মে দূতাবাস কর্তৃক লুজান শহরে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের তত্বাবধায়নে  ছিলেন নজরুল জমাদার। সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শনে নিষেধ করেন।

এ বিষয়ে কেন্দ্রে একাধিকবার জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নজরুল জমদার ১৯৯০ এর দশক থেকে  সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বসবাস করলেও কখনও আওয়ামী লীগের কোন কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন না। এমন কি ২০০৩ সালে  বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জেনেভায় অবস্থানকালে আমরা যখন হোটেলের সামনে প্রতিবাদ ও কালো পতাকা প্রদর্শন করছিলাম, তখন নজরুল জমদার ও তার সহযোগিরা ফুল নিয়ে হোটেলে প্রবেশ করেন।

এদিকে, ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন আওয়ামী লীগের সুইজারল্যান্ড শাখার সভাপতি নজরুল জমাদার। তিনি জানান, কমিটিতে স্থান না পেয়ে বিরোধীমহল বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং নতুন আরেকটি কমিটি করেছে।

বিতর্কিত কোনো লোককে কমিটির আনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। যারা অভিযোগ করছেন, তারা কেন নির্বাচন করতে সাহস পেলো না? কারণ তারা জনপ্রিয় নন।  

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুইজারল্যান্ড আগমন উপলক্ষে সংবর্ধনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে দুই গ্রুপের বিভক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলেও জানান নজরুল জমাদার।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, যতদূর জানি সেখানে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হয়। আর সুইজারল্যান্ডেই নয়, বিভিন্ন দেশে দুটি গ্রুপ, অনেকক্ষেত্রে তিনটি গ্রুপও আছে। এক্ষেত্রে আমার কী করণীয়? আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় এগুলো হচ্ছে। আবার ক্ষমতায় না থাকলে দেখবেন একটি গ্রুপও থাকবে না। আমি বললেই কী এসব গ্রুপ বন্ধ হবে?

‘মূলত কে সভাপতি হবে, কে সাধারণ সম্পাদক হবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব। অন্য কোনো পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব নেই। নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) সব জানেন, উনিই পদক্ষেপ নেবেন।”  

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়