ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘অসহায়রা ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকি’

সাজেদুর আবেদীন শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১২:০৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
‘অসহায়রা ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকি’

স্বপ্নই মানুষকে বড় করে তোলে। সেইসব স্বপ্নবাজ তরুণরাই দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যায়, যারা অসহায়দের জন্য কাজ করে যায়। তেমনি এক যুবক মেহেরাব হোসেন জিম। তিনি যেনো এক স্বপ্নবাজ তরুণ।

২০১৬ সালে মাত্র ৫ জন সদস্য নিয়ে মেহেরাব হোসেন জিম তৈরি করেন ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’। মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে তারা সংগঠনের প্রথম সেবামূলক কাজ করেন। মেহেরাব ১০০, তার বোন ১০০ আর তার স্কুলের বন্ধুরা মিলে ৩০০ টাকা দেন। এই ৫০০ টাকা দিয়ে ১০ জন গরীব অসহায় মানুষকে ময়দা, সেমাই কিনে দিয়ে শুরু করেন সংগঠনের কাজ।

ইতোমধ্যে ছয় বছর পার করেছে সংগঠনটি। পাবনার বেড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বেড়া বিপিন বিহারী উচ্চ-বিদ্যালয়ের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ৫জন শিক্ষার্থী মিলে মেহেরাব জিমের নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নেন যে তারা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে তা মানবকল্যাণের কাজে ব্যবহার করবেন। এভাবেই শুরু হয় সংগঠনের যাত্রা। বিভিন্ন কাজের আগে তারা স্কুলের বন্ধুদের থেকে টাকা তুলে প্রোগ্রামগুলো সফল করতেন।

বর্তমানে সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ১০০ জনেরও বেশি। প্রায় ছয় বছর ধরে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রকম শিক্ষা সহায়তার পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে পরা মানুষকে নিয়ে কাজ করছেন।

সংগঠন সূত্রে জানা যায়, এপর্যন্ত তারা ৫০০ শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তাসহ নানা রকমের সহায়তা প্রদান করেছেন। পাশাপাশি দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী, চিকিৎসা সেবা ও শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। করোনার সময়ে সংগঠনটি দুস্থ ব্যক্তির বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে। বেশ কয়েকজন অসহায় অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যাপারেও সহায়তা করেছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বেড়া পৌর এলাকার কয়েকটি ওষুধের দোকানে রক্তচাপ মাপার যন্ত্র, ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র এবং থেরাপি ও নেবুলাইজার যন্ত্র কিনে দেওয়া হয়েছে। এসব ওষুধের দোকানে প্রকৃত দুস্থ রোগীরা বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করছেন, রক্তচাপ মাপাতে পারছেন। এছাড়া বিনামূল্যে থেরাপি ও নেবুলাইজেশনও করাতে পারছেন। অসহায় কারও ওষুধের প্রয়োজন হলে সংগঠনের পক্ষ থেকে অনেক সময় তা কিনেও দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বাল্যবিবাহ ও মাদক নিয়ে কাজ করে তারা এলাকায় বেশ পরিচিতি পেয়েছে।

সংগঠনটির ফেসবুক গ্রুপ ও পেজের মাধ্যমে আসা অর্থের মাধ্যমে মাদ্রাসা নির্মাণ এবং এতিমদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা নদী পারাপারের জন্য ৫৫০ হাত সাঁকো নির্মাণ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এত বড় সাঁকো তৈরির জন্য শত শত মানুষের হাজার হাজার টাকা বেঁচে যাচ্ছে। ৫৫০ হাত সাঁকো ছাড়াও তারা ছোট আরও কিছু সাঁকো নির্মাণ করেছেন। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এখন অনেক সচ্ছল ও ধনাঢ্য ব্যক্তি সংগঠনের তহবিলে অর্থসহ বিভিন্ন সামগ্রী দান করছেন।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মেহেরাব হোসেন জিম বলেন, টিফিনের টাকা জমিয়ে ভালো কিছু করার উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। এরই মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এর পাশাপাশি অনেক সচ্ছল ব্যক্তি আমাদের মাধ্যমে অসহায় মানুষকে সহায়তা করার ব্যাপারে যোগাযোগ করছেন। মানবকল্যাণের বিষয়টি এমন সফলতার মুখ দেখবে, তা সত্যিই আমরা ভাবিনি।  অসহায়রা ভালো থাকলে, আমরা ভালো থাকি। 

সংগঠনের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাকসুদা মানিক মেঘলা বলেন, আমরা মেয়েদের স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করে যাচ্ছি। গত বছর বন্যা কবলিত শাহজাহাদপুর উপজেলার চরবন্যা গ্রামে ‘নারী সুস্থ থাকলে বাঁচবে শিশু’ স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা বন্যার্ত প্রায় শতাধিক অসহায় নারীর মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করেছি। এসময় সংগঠনের নারী সদস্যরা ন্যাপকিন ব্যবহারের উপকারিতাসহ স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক নানা রকম পরামর্শ দিয়েছি।

সংগঠন সম্পর্কে পাবনার বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সবুর আলী বলেন, সংগঠনে যারা কাজ করেন, তারা সবাই শিক্ষার্থী। তারা টিফিনের টাকা বাচিয়ে উপজেলায় নানারকম সামাজিক কাজ করে থাকেন। তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমি গিয়েছি যেনো তারা উৎসাহ পায়। ব্যক্তিগতভাবেও তাদের নানা কর্মকাণ্ডে আমি আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। টিফিনের টাকা বাচিয়ে এই বয়সে যে মানবকল্যাণমূলক কাজ করে, তা সত্যি প্রশংসাযোগ্য। আমি সংগঠনটির সাফল্য কামনা করছি।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী।

/মাহি/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়