ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শাপলার আয়ে চলে ৮ শতাধিক পরিবার

রাজিব হোসেন রাজন, শরীয়তপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৪:৩০, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
শাপলার আয়ে চলে ৮ শতাধিক পরিবার

শাপলা বিক্রিতে কোনো পুঁজির দরকার হয় না। তাই বর্ষা মৌসুমে শরীয়তপুর জেলায় কয়েক শতাধিক কৃষক ও দিনমজুর শাপলা সংগ্রহ ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকেন। জেলার চার উপজেলার নিচু এলাকাগুলো বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে যায়। আর সেই জমি থেকে নৌকায় করে শাপলা তুলে আনেন  কৃষক ও দিনমজুররা।

এরপর বিভিন্ন বাজারে এসব শাপলা বিক্রি করেন তারা।  এতে বিনা পুঁজিতে দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন। কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের লোক এ পেশায় অংশ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। 

শাপলা সাধারণত তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সাধারণত নড়িয়া, জাজিরা, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট উপজেলার নিচু এলাকার বিলগুলোতে বর্ষার মৌসুমে অনেক শাপলা ফুটে থাকে। 

নড়িয়ার নশাসন ইউনিয়নের পারাগাও বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী মো. রবিউল বলেন, এ সময় প্রতিদিন একেকজন কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ মুঠো সংগ্রহ করতে পারেন। কেউ স্থানীয় বাজারে, আবার এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন এবং অনেকে পাইকারদের কাছেও বিক্রি করেন। পাইকাররা আবার সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা একত্র করেন। পরে পাইকাররা এখান থেকে শাপলা কিনে ঢাকার যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি করে থাকেন।

সরজমিন ঘুরে জানা যায়, বর্ষায় ডুবে যাওয়া ধান, পাট ও ধইঞ্চা ক্ষেতে শাপলা বেশি জন্মায়। এছাড়া জেলার খাল-বিলগুলোতেও শাপলা ফুল জন্মে থাকে। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পাওয়া যায় শাপলা। তবে, এবছর দেরিতে বন্যা হওয়ায় এখনো পাওয়া যাচ্ছে।

সংগ্রহকারীরা ভোরে নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া জমিতে ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলতে থাকেন। কয়েকজন জানান, এ সময়ে একেকজন কমপক্ষে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ মুঠো (৭০-৮০ পিছ শাপলায় ১ মুঠো ধরা হয়) সংগ্রহ করতে পারেন। পাইকাররা আবার এসব শাপলা সংগ্রহকারীর কাছ থেকে সংগ্রহ করে একত্র করেন। দিন শেষে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা আয় করে থাকেন। বছরের ৪ মাস এ কাজ করেন। এসব দিয়েই চলে তাদের সংসার।

শাপলা বিক্রেতা মুনসুর আলি হাওলাদার বলেন, শুকনা কালে পরের ক্ষেতে বদলা-কামলা দিয়ে সংসার চালাই আর বর্ষাকালে আমাদের চারপাশে পানি থাকে। কোথাও কোনো কাজ থাকে না। বেকার বসে থাকেতে হয়। তাই এ সময় বসে না থেকে বিল থেকে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাই।

নড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রোকনজ্জুমান বলেন, নড়িয়ার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৭টি ইউনিয়নে প্রাকৃতিকভাবে ১০০ টনের মতো শাপলা উৎপাদন হয়ে থাকে। পাঁচ থেকে ছয়শত কৃষক সরাসরি শাপলা বেচা-কেনার সাথে জড়িত আছেন। শাপলা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি।  এতে প্রচুর পরিমাণ খনিজ পদার্থ আছে। এছাড়াও শর্করা, ক্যালসিয়াম,আমিষ পাওয়া যায় শাপলা থেকে। তাই শাপলা তরকারি হিসাবে খুবই মজাদার খাবার হওয়ায় এর চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলছে বলে জানা গেছে।

/মাহি/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়