ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

স্বপ্নচিনাদী বিলে ‘প্রেমপদ্ম’  

এইচ মাহমুদ, নরসিংদী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০২, ১৭ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১৩:০৫, ১৭ অক্টোবর ২০২১
স্বপ্নচিনাদী বিলে ‘প্রেমপদ্ম’  

স্বপ্নচিনাদী বিল, নরসিংদী

হেমন্তের শুরু। চারদিকে কাশফুলের শেষ প্রদর্শনী। প্রকৃতি ধীরে ধীরে তার রঙ-রূপ বদলাচ্ছে। তবে, এ বছর বর্ষা, বন্যা একটু দেরিতে হওয়ায় এখনো খাল-বিল, নদ-নদীর পানি শুকায়নি। পদ্মফুলেরাও শেষ হাসিতে মাতোয়ারা বিলে-ঝিলে। ইচ্ছা করলেই হাত দিয়ে ছোঁয়া যায়। 

সদ্য বিদায় নেওয়া শরতে ফোটা পদ্মফুলের এখনো দেখা মিলছে নরসিংদীর শিবপুরের স্বপ্নচিনাদী বিলজুড়ে। প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সী প্রকৃতি ও ফুল প্রেমীরা বেড়াতে আসেন এখানে।  বিশেষ করে প্রেমিক মন আন্দোলিত হয় এখানে। প্রেয়সীর কানে, চুলের খোঁপায় শোভা পায় এই ফুল। 

চোখ জুড়ানো দৃশ্য উপভোগ করতে অনেকেই ছুটে যাচ্ছেন এ বিলে। পড়ন্ত বিকালে মৃদু-মন্দ আবহাওয়ায় বিলের পানির ঢেউয়ের তালে তালে মাথা উঁচু করে আছে গোলাপি-লাল-সাদা পাপড়ির মিশেলে একেকটা ফুল। বিলজুড়ে এমন অপরূপ সৌন্দর্য প্রকৃতি প্রেমীদের আন্দোলিত করছে। কেউ কেউ ফুল ছিড়ে ভালোবাসার মানুষকে উপহার দিচ্ছেন প্রেমপদ্ম বলে।  

কেউ বিলের পাড়ের গাছতলায় বসে উপভোগ করছেন এ সৌন্দর্য। আবার অনেকেই নৌকায় চড়ে পুরো বিল ঘুরে দেখছেন। এই অনুভূতিগুলো ক্যামেরায় বন্দি করতে ভুলছেন না কেউ। ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধুই পদ্মফুল। এ দৃশ্য মনকে প্রফুল্ল করে তোলছে। স্বচ্ছ জলরাশিতে ভেসে থাকা পদ্মফুল পুরো বিলের কানায় কানায় ভরে আছে।

সূর্য উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একেকটা পদ্মর কলি ভেদ করে পাঁপড়ি মেলে নিজের সৌন্দর্যকে জানিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতির মাঝে। সেই সৌন্দর্যকে যেন আরও নৈসর্গিক করে তুলছে দল বেঁধে ছুটে আসা চিল, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, বালি হাঁসসহ বিভিন্ন পাখির বিচরণ। তাদের কিচিরমিচিরে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো বিল। এর সাথে প্রতিটি পদ্মপাতার উপরে মুক্তার মতো টলমল করতে থাকা পানি যেন প্রকৃতির সৌন্দর্যের অলঙ্কার।

এ চিনারদী বিলের পদ্মর নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে জেলাসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন অসংখ্য দর্শনার্থী। সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্তও ওই স্থানে প্রকৃতি প্রেমীদের দেখে মনে হয় যেন দর্শনার্থীদের মিলন মেলা চলছে। এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সবার মন ছুঁয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে দুলালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এই বিলের পূর্বনাম ছিল চিনাদী বিল। ২০১৬ সালে জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান বিলের নাম দেন ‘স্বপ্নচিনাদী’।

মানিকদী, শিমুলিয়া, দুলালপুর, ভিটি চিনাদী ও দরগাহবন্দ এই পাঁচ গ্রামের মিলনস্থল এই বিলের যেমন রয়েছে প্রাকৃতিক রূপ, তেমনি বিলের পানিতে রয়েছে দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মৎস্য সম্পদের ছড়াছড়ি।  


এছাড়া বিলের তীরে রয়েছে কৃষককের আবাদ করা নানা রকম শাকসবজির ক্ষেত। প্রায় ৫৫০ বিঘা আয়তনের স্বচ্ছ পানির বিলজুড়ে যেমন রয়েছে হাজারো মৎস্যজীবীর বিচরণ, তেমনি রয়েছে বক, চিল, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, বালিহাঁসসহ বিভিন্ন পাখির বিচরণ ক্ষেত্র।

শীতকালে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে এই বিলটি। জেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা কচুরিপানায় বসে মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। দল বেধে এসব পাখির ওড়াওড়ি নিমিষেই কেড়ে নেয় দর্শনার্থীদের মন।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চিনাদী বিল প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের। তাই প্রতিদিনই সব বয়সী মানুষের ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে বিলের পাড়। ঈদ ও পূজা কিংবা অন্যসব উৎসবেও নামে মানুষের ঢল।

নরসিংদী শহর থেকে বিলে ঘুরতে আসা ফাহিম সাদেক বলেন, ‘ইট-পাথরের ছোঁয়ায় প্রকৃতি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এখানে ঘুরতে এসে মনে পড়ে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের কথা। এ বিলজুড়ে প্রকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই মনে রাখার মতো।’

কাপাসিয়া থেকে ঘুরতে আসা আনোয়ার হোসেন নামে একজন পর্যটক বলেন, ‘বিলের সৌন্দর্যের কথা শুনে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ আমরা। বিলের হিমেল হাওয়ায় মনটা যেন ভরে গেছে।’

দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেরাজুল হক বলেন, ‘চিনাদী বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থী আসছেন। পর্যটক আকর্ষণের পাশাপাশি বিলের তীরে মৎস্য, কৃষিপণ্য আহরণ ও বিপণনের ব্যবস্থা করা গেলে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি এলাকার চিত্র অনেকাংশে পাল্টাবে।’

/মাহি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়