ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রাইজিংবিডিতে সংবাদ: অবশেষে শিকলবন্দী বাবা-মেয়ে মুক্ত

সিদ্দিক আলম দয়াল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ৪ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১৭:২৪, ৪ এপ্রিল ২০২২
রাইজিংবিডিতে সংবাদ: অবশেষে শিকলবন্দী বাবা-মেয়ে মুক্ত

পুলিশ সুপারের সঙ্গে প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ আলী ও তার মেয়ে রেহানা আখতার টুলি

সাত বছর ধরে লোহার শিকলে বন্দী থাকার পর অবশেষে মুক্তি মিলেছে গাইবান্ধার উত্তর আনালেরতাড়ি গ্রামের মানসিক প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ আলী ও তার মেয়ে রেহানা আখতার টুলির। সোমবার (৪ এপ্রিল) জেলা পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম ও স্থানীয় সাংবাদিকরা দুই প্রতিবন্ধীর পায়ের শিকলের তালা খুলে দেন।

গত ১৯ মার্চ ‘সাত বছর ধরে শিকলে বাঁধা বাবা-মেয়ে’ শিরোনামে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসনসহ স্থানীয় সমাজসেবা বিভাগ। সোমবার তাদের উদ্যোগে আনালেরতাড়ি গ্রামের মেয়ে টুলি ও তার বাবা মোহাম্মদ আলীকে শিকলের বাঁধন থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

জানা গেছে, মানসিক প্রতিবন্ধী বাবা-মেয়েকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। সুচিকিৎসার জন্য তাদের পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের দেওয়া হবে অন্যসব সুযোগ-সুবিধা।

‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার’ এই স্লোগানে দুপুরে প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ আলী বাড়ির আঙ্গিনায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পুলিশ। সেখানে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ সিদ্দিক, ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম হক্কানী, সমাজসেবক লক্ষণ রায়, সাংবাদিক সিদ্দিক আলম দয়ালসহ অন্যরা। এই অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী আলীর স্ত্রী হালিমা বেগমের হাতে ১০ হাজার টাকা ও খাদ্য সহায়তা তুলে দেওয়া হয়। 

পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সাত বছর শিকলে বাঁধা বাবা ও মেয়ে’ খবরটি আমরা জানার পর হতবাক হয়েছি। আমরা আর অপেক্ষা না করে তাদের মুক্ত করি এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। আশা করি, তারা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।’ 

প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী হালিমা বলেন, ‘চিকিৎসা করলে হয়তো আমার স্বামী-সন্তান স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।’ 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী ভালো ছিলেন। দিনমজুরী করে সংসার চলছিল তার। ভাতের জমি না থাকলেও ভিটে-বাড়ি আছে নিজের। দুটি ঘরে তিন সন্তান ও স্ত্রী হালিমা খাতুনকে নিয়ে তাদের ৫ জনের সংসার। মেয়ে রেহানা আখতার প্রাইমারি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে।

বয়স যখন ১২ বছর, তখন হঠাৎ করেই রেহানার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। আবোল-তাবোল কথা বলে এবং বাড়ি থেকে বের হয়ে দিগ্বিদিক চলে যায়। পরিবারের লোকজন ও স্বজনরা তাকে অনেক দিন খুঁজে গাইবান্ধা রেলস্টেশন থেকে ধরে আনে। কিন্তু সুযোগ পেলেই ইচ্ছেমতো চলে যেতেন। তাই বাধ্য হয়েই তার পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।

প্রথম দিকে মানসিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে গ্রাম্য ঝাড়ফুঁক ও কবিরাজি চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু তাতে অবস্থার আরো অবনতি হতে থাকে। তার শরীর শুকিয়ে যায় ও বিভিন্ন স্থানে দগদগে ঘা দেখা দেয়।

মেয়ের এই অবস্থার মধ্যে হঠাৎ করে ২০০২ সালের শুরুতে বাবা মোহাম্মদ আলীর মানসিক পরিবর্তন হতে থাকে। অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। লাঠি হাতে রাস্তা-ঘাটে মানুষ দেখলেই মারতে যান। এ অবস্থায় স্ত্রী হালিমা খাতুনসহ তার পরিবারের লোকজন মেয়ে-বাবাকে নিয়ে বিপাকে পড়েন। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় তারা ২০১৫ সাল থেকে বাবা-মেয়ের পায়ে শিকল লাগিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখছিলেন।

গাইবান্ধা/মাসুদ/এনএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়