ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ মানুষকে ইফতার করান হানিফ 

মো. ইমরান, পটুয়াখালী (উপকূল)  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪০, ২৭ এপ্রিল ২০২২  
প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ মানুষকে ইফতার করান হানিফ 

প্রায়ই অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করছে কোনো না কোনো সামাজিক সংগঠন। আর এসব ইফতারে থাকে ৫ থেকে ৬ আইটেম। আবার এসব ইফতার কিনে দেওয়া হয় হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্ট থেকে। তবে পথচারীসহ অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণে এবার ভিন্নতা এনেছে আবু হানিফ নামের এক যুবক। প্রথম রমজান থেকে প্রতিনিয়ত সাড়ে ৩০০ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইফতার বিতরণ করছেন তিনি। উচ্চবিত্তের মতো অসহায় মানুষের এ ইফতারে থাকে ২৫ আইটেম। আর এ আইটেমগুলো নিজ বাড়িতে তৈরি করছেন হানিফের পরিবারের সদস্যরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের মধ্য টিয়াখালী গ্রামের মৃত দুলাল খানের ছেলে আবু হানিফ খান। প্রতিনিয়ত সকাল ১০টায় তার নিজ বাড়িতে শুরু হয় ইফতার তৈরির কাজ। তার মা এবং স্ত্রীসহ এ ইফতার তৈরি করেন তাদের পরিবারের নারী সদস্যরা। পরে এ ইফতার প্যাকেটজাত করে হানিফের হাতে তুলে দেন তারা। 

তাদের ইফতারে যে আইটেমগুলো থাকে সেগুলো হলো- ছোলা বুট, পেঁয়াজু, মুড়ি, বেগুনী, আলুর চপ, আলুর দম, ডিমের চপ, মাশরুমের চপ, কাটলেট, চিকেন বল, চিকেন ফ্রাই, আনারস, আপেল, মাল্টা, আঙ্গুর, পেয়ারা, খেজুর, তরমুজ, বাঙ্গি, শসা, কলা, নাশপাতি, কোয়েলের ডিম, চিকেন পাপেট ও পেপে। হানিফ নিজেই প্যাকেটজাতকৃত এ ইফতার বিভিন্ন আবাসনসহ অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেন। এ ছাড়া, বিতরণ করেন পথচারীদের মাঝে। উচ্চবিত্তের তালিকার ইফতার পেয়ে অনেকটা খুশি হতদরিদ্ররা। 

নীলগঞ্জ খেয়াঘাট সংলগ্ন আবাসনের ষাটোর্ধ্ব আছিয়া বিবি জানান, এবছর এখনো পর্যন্ত কোনো বিত্তবান তাদের পাশে কোনো সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি। তবে আজ (মঙ্গলবার) তাদের হাতে হরেক পদের ইফতার নিয়ে হাজির হয়েছেন এক যুবক। তাকে তিনি না চিনলেও তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। 

একই এলাকার অপর বৃদ্ধ রহমান মিয়া বলেন, গত বছর আবাসনে আমাদের মাঝে কয়েকদিন ইফতার বিতরণ করা হয়েছিল। তার মধ্যে ৫ থেকে ৬ পদ ছিল। এবছর কেউ ইফতার বিতরণ না করলেও হানিফ মিয়া আজ আমাদের ২৫ পদের ইফতার দিয়েছেন। এত পদের ইফতার আমরা আর কখনো পাইনি। আল্লাহ যেন হানিফ মিয়াকে সবসময় অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর তৌফিক দান করেন।   

হানিফের মা কুলসুম বেগম বলেন, ইফতার তৈরিতে আমাদের কোনো কষ্ট হয় না। আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের আশায় আমরা এ ইফতারগুলো তৈরি করি। 

তার স্ত্রী মুক্তা বলেন, নিজেদের হাতে ইফতার তৈরি করা, আবার সেগুলো অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করা, এটা আসলে সবার ভাগ্যে আসে না। আমি অসহায় মানুষের জন্য হরেক পদের ইফতার তৈরি করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

যুবক হানিফ খান বলেন, মূলত আমি একজন শিপিং ব্যবসায়ী। নিজস্ব অর্থায়নে আমাদের পরিবারের সদস্যরা নিজেরা নিজেদের হাতে তৈরি করে এসব ইফতার বিতরণ করছি। এভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেই আমার আত্মতৃপ্তি। ভবিষ্যতে আরও বেশি বেশি অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করতে চাই। সবার কাছে দোয়া চাই।

/মাহি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়