ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘বাঁশ ফাটা’ কাজে দিনে আয় হাজার টাকা

মোসলেম উদ্দিন, দিনাজপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৮, ৬ নভেম্বর ২০২২   আপডেট: ১২:৪১, ৬ নভেম্বর ২০২২
‘বাঁশ ফাটা’ কাজে দিনে আয় হাজার টাকা

বাঁশ ফাটিয়ে বাতা তৈরির কাজ করছেন বছির।

জীবিকার তাগিদে মানুষ বেছে নেন নানান পেশা। দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের মংলা বাজারের বছির উদ্দিনসহ অনেকেই পেশা হিসেবে 'বাঁশ ফাটা' কাজকে বেছে নিয়েছেন। এই বাঁশ ফাটানোর শ্রমিকের কাজ করেই বছির দিনে উপার্জন করছেন এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। যা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।

সম্প্রতি মংলা বাজারের বাঁশ হাটিতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ ফাটিয়ে বাতা তৈরি করে বোঝা বানছেন বছির উদ্দিন। অন্যের বাঁশের আড়তে চুক্তি হিসেবে বাঁশ ফাটিয়ে বাতা তৈরির কাজ করেন তিনি। দুটি বাঁশ ফাটিয়ে হয় একটি বাতার বোঝা। বোঝাপ্রতি মজুরি পান তিনি ৭০ টাকা। দিনে ৩০ থেকে ৩২টি বাঁশ ফাটিয়ে বাতা তৈরি করেন। তাতে বোঝা হয় ১৫ থেকে ১৬টি, এতে মজুরি আসে তার এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

এই বাঁশ হাটিতে বছির উদ্দিন ছাড়াও অনেকে বাঁশ ফাটানোর কাজ করেন। এদের মধ্যে আবার অনেকেই বেশি লাভের আশায় নিজেই বিভিন্ন বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কিনে তা ফাটিয়ে বাতার বোঝা তৈরি করেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়তদাররা দুইটি বাঁশের বাতার আটিঁ বিক্রি করেন ৪০০ টাকা দরে। এতে করে বাঁশ ফাটানোর মজুরি দিতে হয় শ্রমিককে। তাতে লাভও হয় বেশি। এছাড়া যারা নিজস্ব উদ্যোগে বাঁশ কিনে বাঁশের বাতা তৈরি করেন আড়তদাররা তাদের কাছ থেকে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বাতা কিনে নেন। 

সীমান্তের মংলা বাজার এলাকা পলি অঞ্চল। এই অঞ্চলে আছে প্রায় ১৫০টি পানের বরজ রয়েছে। মূলত এই পানের বরজের ছাউনির কাজে লাগে এসব বাঁশের বাতা। 

সীমান্তের ঘাসুড়িয়া গ্রামের বরজ মালিক সাইদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার এক বিঘা জমির উপর একটি পানের বরজ আছে। বরজটি আমার বাপ-দাদার আমলের। আমি বর্তমান পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করি। দুই বছর পর পর বরজে ছাউনি দিতে হয়। মংলা বাঁশ হাটি থেকে আমি ছাউনির বাতা কিনে থাকি। বর্তমান আর একটি নতুন বরজ তৈরি করবো, তাই এখানে বাঁশের বাতা কিনতে আসছি।’

বাঁশের বাতার কারিগর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ভ্যানে করে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরি। সেখানে ঝাড় মালিকদের কাছ থেকে বাঁশ কিনে আনি এবং নিজেই তা ফাটিয়ে বাতার বোঝা তৈরি করি। আলাদা কাউকে মজুরি দিতে হয় না। বেশি লাভের আশায় নিজেই সব কাজ করি।’

বাঁশ ফাটা শ্রমিক বছির উদ্দিন বলেন, ‘বাঁশের ব্যবসা করতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। তাই অন্যের বাঁশের আড়তে বাঁশ ফাটার কাজ করি। বেচাবিক্রির কোনো চিন্তা নেই। সারাদিন বাঁশ ফাটিয়ে বাতার বোঝা তৈরি করে দেই, তাতে দিনে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কাজ আয় হয়। এই আয় দিয়ে খুব সুন্দরভাবে সংসার চলে আমার।’

বাজারের বাঁশের আড়তদার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই অঞ্চলে এইটি বড় বাঁশের হাট। এই হাটে মানুষ বাঁশ বিক্রি করতে আসেন। আমি পাইকারি দরে বাঁশ কিনে থাকি। আমার আড়তে বছিরসহ কয়েক জন বাঁশ ফাটার শ্রমিক আছে। তারা বাঁশ ফাটিয়ে বোঝা তৈরি করে দেয়। এই এলাকায় অনেক পানের বরজ রয়েছে। মূলত পান পানের বরজ মালিকরা বাতাগুলো কিনে নিয়ে যান। মংলা বাঁশ হাটিতে প্রচুর বাতার চাহিদা রয়েছে।’

মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়