ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সমতল ভূমিতে চা বাগান, গাজীপুরে নতুন সম্ভাবনা

রফিক সরকার, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ৩১ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১৩:১২, ৩১ আগস্ট ২০২৫
সমতল ভূমিতে চা বাগান, গাজীপুরে নতুন সম্ভাবনা

কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের চিনাডুলি গ্রামের চা বাগান।

সিলেট, চট্টগ্রাম বা পঞ্চগড়ের পাহাড়ি অঞ্চল নয়। গাজীপুরের সমতল ভূমিতেই এখন দেখা মিলছে সবুজে ঘেরা চা বাগানের। আর এই বিস্ময়কর উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান। 

দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও অদম্য পরিশ্রমে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, চা চাষ শুধু পাহাড়েই নয়- সমতলেও বাণিজ্যিকভাবে করা সম্ভব।

কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের চিনাডুলি গ্রামে প্রায় আট বিঘা জমিতে সাত বছরের শ্রমে গড়ে উঠেছে তার চারটি দৃষ্টিনন্দন চা বাগান। তিন বছর ধরে এসব বাগান থেকে সবুজ চা উৎপাদন করছেন তিনি। যা এখন নিয়মিত যাচ্ছে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বাজারে। শিগগিরই খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করছেন এই অধ্যাপক।

রাজধানীর উত্তরার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক লুৎফর রহমান। কর্মজীবনের শুরুতে সিলেট ও চট্টগ্রামের ১৪টি চা বাগানে ৩৫ বছর ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। সেসব বাগানের মাটির গুণাগুণের সঙ্গে কাপাসিয়ার মাটির মিল খুঁজে পান তিনি। সেখান থেকেই মাথায় আসে নিজ এলাকায় চা চাষের পরিকল্পনা।

২০১৯ সালে সিলেট থেকে কলমের চারা এনে প্রথমবারের মতো সমতলের এঁটেল মাটিতে রোপণ করেন। ফলাফল আশানুরূপ হওয়ায় পরবর্তী সময়ে বানার নদীর তীরবর্তী দুই বিঘা বেলে-দোআঁশ জমিতেও চারা রোপণ করেন। বর্তমানে পুরো আট বিঘা জমিতে প্রায় ২০ হাজার চা গাছ বেড়ে উঠেছে।

পরিপুষ্ট হয়ে বেড়ে ওঠা চা গাছ।


চা বাগানের জন্য সবচেয়ে জরুরি শর্ত হলো, জমিতে পানি যেন দাঁড়িয়ে না থাকে। এজন্য বাগানে তৈরি করা হয়েছে পানি সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা। পাশাপাশি সিলেট থেকে আনা হয়েছে কাঠজাতীয় গাছ, যেন ছায়ার মধ্যেই চা গাছ ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

প্রতিটি চারা ২ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে। একর প্রতি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয় বাগান তৈরি করতে। সঠিক পরিচর্যায় ৩৫-৪০ বছর পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ করা সম্ভব একেকটি গাছ থেকে। শুধু কাঁচা পাতা বিক্রি করলেও একরপ্রতি বছরে আয় হয় প্রায় এক লাখ টাকা। আর প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করলে তা আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল কাউয়ুম হোসেন বলেন, “স্যারের উদ্যোগ দেখে এলাকার অনেকেই এখন চা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। পতিত জমির মালিকরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, খোঁজখবর করছেন।”

কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আউলিয়া খাতুন জানান, কাপাসিয়ার মাটিতে চা চাষের এ সাফল্য স্থানীয় কৃষকদের জন্য দারুণ উৎসাহের। আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

বর্তমানে প্রতি মাসে ১২-১৫ কেজি সবুজ চা উৎপাদন হচ্ছে, যা পাইকাররা প্রতি কেজি এক হাজার টাকায় কিনছেন। শিগগিরই মাসিক উৎপাদন ৩০-৩৫ কেজিতে উন্নীত হবে বলে আশা লুৎফর রহমানের। ভবিষ্যতে অর্থডক্স বা সিটিসি পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে স্থানীয় বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে।

গাজীপুরের সমতল ভূমিতে চা বাগান কেবল কৃষিতে নতুন দিগন্তই উন্মোচন করছে না, একইসঙ্গে বদলে দিচ্ছে স্থানীয়দের চিন্তাধারাও।

ঢাকা/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়