ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গরমে পায়ের আঙুলের ফাঁকে ছত্রাকের সংক্রমণ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ৪ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১২:৪৫, ৪ মার্চ ২০২১
গরমে পায়ের আঙুলের ফাঁকে ছত্রাকের সংক্রমণ

গরমে পায়ের আঙুলের ফাঁকে প্রায়ই ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে। আঙুলের ফাঁকগুলো লাল হয়ে যায়, প্রচণ্ড চুলকায়। কখনো ফুসকুড়ির মতো হয়, আবার কখনো ত্বক ফেটে যায়। জ্বালাও করে। একে টিনিয়া পেডিস বা অ্যাথলেটস ফুট বলে। এটি সংক্রামকও। অর্থাৎ একজনের থেকে অন্যজনে ছড়ায় এটি।

সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেলে ক্ষত হয়ে থাকে। সাধারণত ছত্রাক সংক্রমণ মারাত্মক কিছু নয়, কিন্তু কখনো কখনো এর নিরাময় কঠিন হতে পারে। ডায়াবেটিস থাকলে অথবা ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে এই সংক্রমণের চিকিৎসা নিতে কালক্ষেপণ করা উচিত নয়।

যাদের হয়
গরমকালে ও আর্দ্র স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় ছত্রাকের সংক্রমণ বেশি হয়। যাদের পা সব সময় ভেজা থাকে, তাদের বেশি হয়। পুরুষেরাই এ সমস্যায় ভোগেন বেশি। একই মোজা বারবার পরা, সারা দিন আঁটসাট জুতা পরার কারণে পা ঘামা ইত্যাদি কারণে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে। সংক্রমিত ব্যক্তির কাপড়, মোজা, তোয়ালে, বিছানা ব্যবহার করলে অন্য ব্যক্তিও আক্রান্ত হন। আবার যেসব জায়গায় মানুষের সচরাচর যাতায়াত রয়েছে, এমন জায়গায় খালি পায়ে হাঁটলে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ঘরোয়া চিকিৎসা
* ওটিসি ওষুধ: সেসব ওষুধকে ওটিসি ওষুধ বলা হয় যা কিনতে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন লাগে না। ছত্রাকের সংক্রমণ সারাতে কিছু ওটিসি ওষুধ (ছত্রাক বিনাশক) ব্যবহার করতে পারেন। এসব ওষুধ পাউডার, স্প্রে, অয়েন্টমেন্ট ও লোশন হিসেবে পাওয়া যায়। অনেকক্ষেত্রে পায়ের আঙুলে ছত্রাক সংক্রমণে এসব ওষুধ প্রয়োগে এত ভালো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় যে অন্যকিছু ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। ওটিসি ওষুধকে সরাসরি আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করা যায়। সংক্রমণটির দ্রুত প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে উপসর্গ চলে যাওয়ার পরও কমপক্ষে এক সপ্তাহ ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।

* হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড: পায়ের পৃষ্ঠের ছত্রাক ধ্বংসে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বেশ কার্যকর। এছাড়া এটি সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াও নির্মূল করতে পারে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডকে সরাসরি সংক্রমিত স্থানে ঢেলে দিতে পারেন। মনে রাখবেন যে এতে জ্বালাপোড়া করতে পারে ও বাবল দেখা যেতে পারে, বিশেষ করে সংক্রমণটি ইতোমধ্যে উন্মুক্ত ক্ষত সৃষ্টি করলে। সমস্যাটি দূর না হওয়া পর্যন্ত দিনে দুইবার হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহার করতে পারেন।

* টি ট্রি অয়েল: এই তেলে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া বিনাশক উপাদান রয়েছে। একারণে অনেক ছত্রাক সংক্রমণে এটির ব্যবহার হয়ে থাকে। গবেষণায় টি ট্রি অয়েল প্রয়োগে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পায়ের আঙুলে ছত্রাক সংক্রমণের উপসর্গ বিলুপ্ত হয়েছে ও ছত্রাক ধ্বংস হয়েছে। সংক্রমণ সারাতে টি ট্রি অয়েলে কোকোনাট অয়েলের মতো কোনো ক্যারিয়ার অয়েল মিশিয়ে ২৫-৫০ শতাংশের কনসেন্ট্রেশন তৈরি করুন। তারপর দিনে দুইবার করে আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করুন।

* নিম অয়েল: নিম অয়েল বা নিম পাতার নির্যাসে ছত্রাক ধ্বংসের অবিশ্বাস্য ক্ষমতা রয়েছে। এই তেল বা নির্যাস পায়ের আঙুলে ছত্রাক সংক্রমণ নিরাময়ে বেশ কার্যকর হতে পারে। নিমের তেল বা নির্যাসকে দিনে দুই-তিনবার সরাসরি সংক্রমিত স্থানে ব্যবহার করতে পারেন। এটি নখের নিচে সৃষ্ট সংক্রমণ সারাতেও সহায়ক হতে পারে।

* রসুন: রসুনের কড়া গন্ধকে অনেকে সহ্য করতে পারেন না, কিন্তু এটি পায়ের আঙুলে ছত্রাক সংক্রমণ চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রসুনের নির্যাস ব্যবহারে মাত্র সাতদিনেই ৭৯ শতাংশ রোগীর ছত্রাক সংক্রমণ সম্পূর্ণরূপে দূর হয়েছে। চার-পাঁচটি রসুনের কোয়াকে থেঁতলে পায়ের যেখানে সংক্রমণ হয়েছে সেখানে ঘষুন। এভাবে দিনে দুইবার করুন।

* লবণ পানি: সামুদ্রিক লবণেও ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক বিনাশক ক্ষমতা রয়েছে। একারণে ছত্রাক সংক্রমণ ও এটা থেকে সৃষ্ট জটিলতা দূর করতে লবণ পানি একটি কার্যকরী ঘরোয়া চিকিৎসা। ঠান্ডা পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করলে সর্বোত্তম ফল পাওয়া যেতে পারে। একটি গামলাতে কুসুম গরম পানি নিন ও এতে এককাপ লবণ মিশিয়ে পায়ের আঙুলকে ২০ মিনিটের মতো ডুবিয়ে রাখুন। এরপর ভালোভাবে মুছে ফেলুন।

* ট্যালকম পাউডার: পায়ের আঙুলে ছত্রাক সংক্রমণের চিকিৎসা হিসেবে ট্যালকম পাউডার, বেবি পাউডারও ব্যবহার করতে পারেন। এটি আক্রান্ত স্থানকে শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখে। ট্যালকম পাউডার ঘাম ও আর্দ্রতাকে নিয়ন্ত্রণ করে বলে ছত্রাকের বিকাশসাধন বা বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতিবার মোজা পরার পূর্বে সংক্রমিত স্থানে ট্যালকম পাউডার লাগিয়ে নিন।

সংক্রমণ প্রতিরোধে যা করবেন
ছত্রাক সংক্রমণ এড়াতে পায়ের শুষ্কতা ও পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। সংক্রমণ হয়ে গেলে এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ বা আর্দ্রতায় সহজেই ছত্রাকের বিকাশ হয় বলে পা দুটিকে সবসময় শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখতে হবে। আঙুলের ফাঁক ভেজা মনে হলে শুকিয়ে নিন। নিয়মিত মোজা পরিবর্তন করুন বা ধুয়ে ফেলুন। সুযোগ ফেলেই মোজা খুলে ফেলুন। পাবলিক প্লেসে খালিপায়ে হাঁটবেন না, বিশেষত জিমে। সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে এমন জুতা পরুন। নখ দিয়ে চুলকাবেন না। এতে হাতও সংক্রমিত হতে পারে।

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়