ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে সুখবর

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৭, ২৪ মে ২০২৩   আপডেট: ১২:৫৮, ৩০ মে ২০২৩
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে সুখবর

একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হবে ৩১ মে। এই বাজেট অধিবেশনে (আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট)  সুসংবাদ পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। মহার্ঘ ভাতার ন্যায় তাদের জন্য বেতন বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) ঘোষণা আসবে। প্রতি বছরের নির্ধারিত ৫ শতাংশের বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি  বেতনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের কিছুটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেট বিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতি-নির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হয়। গত এক সপ্তাহ আগে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্ট কত শতাংশ দিবে  সুপারিশ করবে।  ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া  হবে।  অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর অফিসিয়াল প্রক্রিয়া শেষ করে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই চূড়ান্ত করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সালের সুপারিশ অনুযায়ী সরকারকে আপাতত তিনটি ‘বিশেষ ইনক্রিমেন্ট’ ও ‘নবম পে-কমিশন’ গঠনের নির্দেশনা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। বর্তমান বেতন স্কেলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এ বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এটাকে নির্বাচনী বাজেটও বলা যায়। এবারের বাজেটে ৮ বছর পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বেতন বৃদ্ধিসহ নতুন কিছু সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

তিনি বলেন, মহার্ঘ ভাতার আদলে বেতন বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) ঘোষণা হবে। নির্ধারিত ৫ শতাংশের বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পরেও আরও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পাঁচ বছর পর একটি নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করার কথা থাকলেও ২০১৫ সালের জুলাই মাসে অষ্টম পে-স্কেল কার্যকর হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর জুলাইয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল বেতন কমিশনের। এজন্য অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও করা হয়। কিন্তু ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশই রয়ে গেছে।

সর্বশেষ বেতন স্কেল দেওয়ার আট বছর হয়ে গেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে খাদ্যপণ্যসহ পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় সরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন নতুন পে স্কেলের দাবি তুলছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ উপাত্ত অনুযায়ী গেলো এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। নতুন পে-স্কেলের  প্রস্তাব তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের বছরে আগামী বাজেটটি বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হবে। নতুন বাজেটে স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ কিংবা এমপিওভুক্তি করার জন্যও কোনো বরাদ্দ থাকবে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি চাকরিজীবী প্রায় ১৪ লাখ। তবে বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ এ সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন খাতে ব্যয় সাশ্রয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। চলতি অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বাজেটে ৭৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বেতন-ভাতা খাতে ৭৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের খসড়া প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ।  বেতন বাড়নো  হলে পরিমাণ আরও বাড়বে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মহার্ঘ্য ভাতায় এখন যাচ্ছে না সরকার। তবে অন্য কৌশলে বেতন বাড়বে। মহার্ঘ্য ভাতা যেভাবে বিবেচনা করা হতো আমাদের অঞ্চলে, সেটা করা হবে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বা মূল্যস্ফীতির যে প্রভাব তা প্রশমনে সেই অনুপাতে সরাসরি কিছু টাকা দেওয়া হবে সরকারি কর্মচারীদের, যারা আমলাতন্ত্রের মধ্যে আছেন।

পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন। তাই ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়