ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘আমি এখন অনেক ম্যাচিউরড, ফিরতে চাই টেস্টে’

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১০:০৬, ১ মার্চ ২০২১
‘আমি এখন অনেক ম্যাচিউরড, ফিরতে চাই টেস্টে’

গায়ে চেক শার্ট, পরনে জিন্স। মাথাভর্তি আগের মতো চুল নেই। হঠাৎ করে তাকে দেখে চেনার উপায়ও নেই। রাইজিংবিডি কার্যালয়ে শাহাদাত হোসেন রাজিবকে দেখে হতচকিয়ে উঠতে হয়েছিল।

রাজিব মানেই চেহারায় ভেসে উঠে লম্বা চুলে সিঁথি করা লিকলিকে গড়নের আগ্রাসী মনোভাবের এক পেস বোলার। শরীর দেখে বোঝা যাচ্ছে মাঠে নিষিদ্ধ হলেও ফিট থাকার জন্য কাজ করছেন। কথায় ঝরঝরে ভাব থাকলেও ভেসে উঠেছে খেলতে না পারার হাহাকার।

মাঠে নানা বিতর্কে জড়িয়ে বারবার শিরোনামে এসেছেন। মাঠের বাইরেও ছিল উচ্ছৃঙ্খলতা । গৃহকর্মী নির্যাতন করায় যেতে হয়েছে কারাগারে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে খেলার মাঠে সতীর্থ আরাফাত সানি জুনিয়রকে পিটিয়ে নিষিদ্ধ হন ৫ বছর। অথচ ২২ গজে গতির ঝড় তোলা ৬ ফুট লম্বা শাহাদাত হোসেন রাজিবের ছিল রঙিন ক্যারিয়ার। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম হ্যাটট্রিকটি এসেছিল তার হাত ধরেই। অথচ এখন নিষিদ্ধের বেড়াজালে আটকে তার সময় অতিবাহিত হচ্ছে ইতি-উতি করে। মাঠে ফেরার তাড়নায় বিসিবির কাছে শাস্তি কমানোর আকুতি জানিয়েছেন। তার একটাই কথা, ‘দেশের জার্সিতে আবারও গতির ঝড় তুলতে চাই।’

রঙিন জার্সিতে ক্যারিয়ার রঙিন না হলেও সাদা পোশাকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের অপরিহার্য বোলার। এখন পথহারা পথিকের মতো হারিয়ে খুঁজছেন নিজেকে। তবে বয়স ও অভিজ্ঞতার বিচারে এখনই ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে আছেন বলে বিশ্বাস তার।

‘আমি এখন অনেক পরিপক্ক। মানুষ যখন ৩১ বা ৩২ হয় তখন অনেক বেশি পরিপক্ক হয়। আপনি বিশ্ব ক্রিকেট দেখবেন ৩০ এর পর তারা অনেক বেশি ম্যাচিউরড হয়, তাদের খেলা ভালো হয়। ফাস্ট বোলারদের জন্যও এ সময়টা ভালো।‘

নিষিদ্ধ থাকলেও নিজেকে প্রস্তুত করছেন ডানহাতি পেসার। তার দাবি বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, এক বছর পার হলে শাস্তি উঠিয়ে নেবেন। সেই সময় পার হয়ে গেলেও এখনো আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র পাননি। এখন তিনি ছাড়পত্রের জন্যই দৌড়ঝাঁপ করছেন।

শাহাদাত বলেন, ‘পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো এবং দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছে। ওখান থেকে কমিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করছে। শাস্তি ৫ বছরই ছিল, আমাকে নান্নু ভাই বলছেন আমরা এক বছর পরে তোকে বের করে দিবো! কারণ ভুল বোঝাবুঝি তো হতেই পারে। অফিসিয়ালি এখনো ছাড়পত্র পাইনি।‘

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৫ সালে লর্ডসে অভিষেকের পর ৩৮ টেস্ট খেলেছেন শাহাদাত। পেস বোলারদের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি (৭২)। তার ওপরে আছেন কেবল মাশরাফি বিন মুর্তজা, যিনি ৩৬ টেস্ট খেলে ৭৮ উইকেট নিয়েছেন। শাহাদাতের নজর এখন টেস্ট ক্রিকেটে। তার অভিষেকের পর বাংলাদেশ মোট ৫৫টি টেস্ট খেলেছে, ৩৮টিতেই ছিলেন ঢাকার এ পেসার।

‘আমার চেষ্টা থাকবে টেস্ট ক্রিকেটে আবার ফেরা। কারণ দলে আমি টেস্ট বোলারের অনেক ঘাটতি দেখছি। ৩৮ ম্যাচ খেলছি, এরপর ইনজুরি। পেসার হয়েও টানা ৩০ ম্যাচ খেলেছি এটা আমার জন্য অনেক বড় অর্জন।‘-যোগ করেন শাহাদাত।

সব যখন হারানোর পথে তখন শাহাদাত বুঝতে পেরেছেন নিজের ভুল। অকপটে ক্ষমাও চেয়েছেন, ‘সেদিন হঠাৎ করে এটা হয়ে গেছে। সবার উদ্দেশে বলব, আমি অনেক লজ্জিত। নিজের ভুল নিজেই বুঝতে পারছি, একজন সিনিয়র ক্রিকেটার হয়ে এটা করা ঠিক হয়নি।‘

ঘরে শাহাদাতের ক্যান্সার আক্রান্ত মা। এখন তিনি তৃতীয় ধাপে আছেন। মায়ের জন্য হলেও দ্রুত ফিরতে চান ক্রিকেটে। আগে প্রধান নির্বাচক আশ্বাস দিয়েছিলেন, এখন তিনি বিসিবি প্রধান নির্বাহী বরাবর ছাড়পত্র আবেদন করেছেন। বিসিবি নমনীয় হলে মাঠে ফেরার সুযোগ পাবেন নয়তো তার অপেক্ষা আর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতম হবে।

ঢাকা/ইয়াসিন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়