ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ইবাদতের আক্রমণে চালকের আসনে বাংলাদেশ

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৪ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১১:৫০, ৪ জানুয়ারি ২০২২
ইবাদতের আক্রমণে চালকের আসনে বাংলাদেশ

চতুর্থ দিন শেষে স্কোর: নিউ জিল্যান্ড  ১৪৭/৫ (৬৩ ওভার) লিড: ১৭ রান। 

প্রথম ইনিংস: নিউ জিল্যান্ড ৩২৮/১০, বাংলাদেশ ৪৫৮/১০। লিড: ১৩০ রান

চতুর্থ দিন তৃতীয় সেশনে ইবাদত হোসেনের দারুণ স্পেলে চালকের আসনে রয়েছে বাংলাদেশ। পরপর দুই ওভারে একাই তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচের লাগাম নিজেদের দিকে টেনে নিয়ে আসেন এই পেসার। চতুর্থ দিন শেষে নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ উইকেট হারিয়ে ১৪৭। বাংলাদেশকে লিড দিয়েছে ১৭ রানের। রস টেলর ৩৭ ও রাচিন রবীন্দ্র ৬ রানে অপরাজিত আছেন। ইবাদত একাই নিয়েছেন চার উইকেট। 

ইবাদতের আক্রমণে এলোমেলো নিউ জিল্যান্ড  

নিউ জিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের ৫৪তম ওভারে বোল্ড করে ইবাদত হোসেন সাজঘরে পাঠিয়েছিলেন উইল ইয়াং ও হ্যানরি নিকোলসকে। ইয়াং ৬৯ রান করলেও নিকোলস রানের খাতাই খুলতেই পারেননি। পরের ওভারে এসে আবারও আক্রমণ করেন, এবার ফেরান টম ব্লান্ডেলকে। নিজের চতুর্থ বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ব্লান্ডেল। ইয়াং-টেলরের ব্যাটে ছন্দের আভাস দিলেও ইবাদতের আক্রমণে এখন এলোমেলো নিউ জিল্যান্ড।

ইবাদতের জোড়া আঘাতে ফিরলেন ইয়াং-নিকোলস

একই ওভারে বোল্ড করে ইবাদত হোসেন সাজঘরে পাঠালেন উইং ইয়ং ও হ্যানরি নিকোলসকে। ইয়ং ৬৯ রান করেন, আর নিকোলস রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ফেরেন শূন্য রানে।

ইয়াং-টেলরের জুটিতে কিউইদের লিড 

ক্যাচ মিস, রান আউট মিসের খেসারত দিয়েছে বাংলাদেশ। ইয়াং-টেলরের পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটিতে লিড নিয়ে নিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। ইবাদত হোসেনকে গালিতে দারুণ চারে ইয়াং বাংলাদেশের রান অতিক্রম করে লিড এনে দেন নিউ জিল্যান্ডকে।

ক্যাচ-রান আউট মিসে হঠাৎ ছন্দ হারা বাংলাদেশ

ক্যাচ মিস, ভুল রিভিউ ও নিশ্চিত রান আউট মিস করে হঠাৎ ছন্দ হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। মিরাজের বলে মিডউইকেটে টেলরের সহজ ক্যাচ মিস করেন সাদমান ইসলাম। তখন টেলর অপরাজিত ১৭ রানে। এর আক্ষেপ না ঘুচতেই ইয়াংকে রান আউট করতে ব্যর্থ হন ইবাদত। খুব কাছে থেকেও উইকেট ভাঙতে পারেননি। এ ছাড়া ভুল সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ তিনটি রিভিউ হারিয়ে ফেলে। 

নিউ জিল্যান্ডকে চাপে রেখেছে বাংলাদেশ

ধারাবাহিক বোলিংয়ে নিউ জিল্যান্ডকে চাপে রেখেছে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ শুরুতেই অধিনায়ক টম লাথামকে ফেরানোর পর ইবাদত পেয়েছেন ডেভন কনওয়ের উইকেট। প্রথম ইনিংসে ভালো করতে না পারলেও ইবাদত এই ইনিংসে নিজের সামর্থ্য দেখাচ্ছেন। 

আলগা বোলিং না করায় কিউইরা রানও তুলতে পারছেন না। নিয়ন্ত্রিত লাইন ও লেন্থ ঠিক রেখে বল করে যাচ্ছেন পেসার ও স্পিনার। উইকেট আরো একটি পেতে পারত বাংলাদেশ। মিরাজের বলে ইয়ং ৩১ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন। লিটনের গ্লাভসে বল জমেনি। 

রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে লাথামকে আক্রমণ করছিলেন তাসকিন। অ্যাঙ্গেল করে বল ভেতরে ঢোকানোর চেষ্টা ছিল। তাতে সফলও হলেন। বাড়তি গতির সঙ্গে বাউন্সার দেওয়া এক বলে লাথাম ডিফেন্স করতে গিয়ে বল উইকেটে টেনে এনে বোল্ড হন। এরপর ডেভন কনওয়ে ও ইয়ং মিলে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু বাংলাদেশের আক্রমণ থেমে থাকেনি।

উইকেটের দুই প্রান্ত থেকে ভালো বোলিং করেন বোলাররা। ইবাদত পেয়ে যান সাফল্য। ১৪০ কিমিতে ধারাবাহিক বোলিং করে উইকেট আদায় করে নেন। কনওয়ের ব্যাট-প্যাডে আঘাত করে বল যায় গালিতে। বালাদেশের আবেদনে আম্পায়ার নট আউট দেন। রিভিউ নিয়ে বাংলাদেশ পেয়ে যায় দ্বিতীয় সাফল্য।

প্রথম সেশন ‘সমানে সমান‘

চতুর্থ দিনের সকালের সেশন দুই দল ভাগাভাগি করলো। প্রথম ঘণ্টায় বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে নূন্যতম চিড় ধরাতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড। অথচ দ্বিতীয় ঘণ্টায় মাত্র ১৩ রান তুলতেই এলোমেলো বাংলাদেশ। দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে লড়াইয়ে থাকলো স্বাগতিকরাও। তাইতো প্রথম সেশনে দুই দল ‘সমানে সমান।’ 

আগের দিনের ৪০১ রানের সঙ্গে আজ ৫৭ রান যোগ করে ৪৫৮ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। মিরাজ ৪৭ ও ইয়াসির ২৬ রানে ফেরেন সাজঘরে। বাংলাদেশ লিড পেয়েছে ১৩০ রান। তাতে বাড়ছে লড়াইয়ের আশা।

দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ৩ ওভার ব্যাটিং করার সুযোগ পায় নিউ জিল্যান্ড। বিনা উইকেটে তারা তুলেছে ১০ রান। 

১৩ রানে শেষ ৪ উইকেট হারাল বাংলাদেশ

৪৪৫ রানে মিরাজ বিদায় নিলেন। এরপর একে একে সাজঘরে ফিরলেন ইয়াসির, তাসকিন ও শরিফুল। ১৩ রানেই শেষ বাংলাদেশের শেষ ৪ উইকেট। ৪০১ রানে দিন শুরু করে বাংলাদেশ চতুর্থ দিন যোগ করতে পারল আরো ৫৭ রান। 

প্রথম ইনিংসে ১৩০ রানের লিড পেল বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ডের করা ৩২৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ করলো ৪৫৮ রান। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে ৫৯৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। 

দুই প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান মিরাজ ও ইয়াসির ফেরেন বাজে দুই শটে। মিরাজ জায়গায় দাঁড়িয়ে অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল খেলেছেন। ইয়াসির লেগ স্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়েছেন। তাদের বিদায়ের পর তাসকিন ও শরিফুল টিকতে পারেননি। সাউদির ভেতরে ঢোকানো বলে এলবিডব্লিউ হন তাসকিন। বোল্টের বলে বোল্ড শরিফুল। 

বাংলাদেশের ইনিংসের শেষটা ভালো না হলেও শক্তিশালী অবস্থানে আছে। 

ইয়াসিরও টিকলেন না

সঙ্গী হারানোর পর বেশিক্ষণ টিকলেন না ইয়াসির। পেসার কাইল জেমিনসনের প্রথম শিকারে পরিণত হন তিনি। ডানহাতি পেসারের লেগ স্টাম্পের ওপরের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে পেছনে ক্যাচ দেন ইয়াসির। মন্থর ইনিংসে ৮৫ বলে করেছেন ২৬ রান। গোটা ইনিংসে চার মেরেছেন ১টি। 

বাজে শটে বিদায় মিরাজ

উইকেট উপহার দিয়ে সাজঘরে ফিরলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন। হাফ সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৩ রান আগে টিম সাউদির শিকার ডানহাতি ব্যাটসম্যান। প্রতিশ্রুতিশীল ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন দারুণ কয়েকটি শটে। ব্যাকফুট ড্রাইভ, পুল শট ও অন ড্রাইভে ৮টি চার হাঁকিয়েছেন তিনি। মনে হচ্ছিল, ২২ গজে আজ বড় কিছুই উপহার দেবেন তিনি। কিন্তু বাজে শটে শেষ তার দারুণ ইনিংস। সপ্তম উইকেট জুটিতে ইয়াসির ও মিরাজ ৭৫ রানের জুটি গড়েছিলেন। এই ইনিংসের মধ্য দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে হাজার রান পূর্ণ করেছেন মিরাজ। 

শতরান পেরিয়ে বাংলাদেশের লিড

চতুর্থ দিনের প্রথম ঘণ্টায় দারুণ ব্যাটিং করলেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মিরাজ ও ইয়াসির। তাদের মনোবলে একটুও চিড় ধরাতে পারেননি কিউই বোলাররা। অনায়াসে ব্যাটিং করে যাচ্ছেন তারা। দুইবার আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। মিরাজ বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করছেন। পুল শট ও ব্যাক ফুট ড্রাইভে নিজের সামর্থ্য ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ইয়াসিরও তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন। অন ড্রাইভে মুগ্ধ করেছেন। এরই মধ্যে তাদের জুটির রান পঞ্চাশ পেরিয়েছে। দলের রান চারশো ছাড়িয়েছে এবং লিড একশ পেরিয়েছে। 

সানগ্লাস পরে ব্যাটিংয়ে মিরাজ

রৌদ্রজ্জ্বল সকালে নতুন বল দেখতে সমস্যা হচ্ছিল মেহেদী হাসান মিরাজের। এজন্য সানগ্লাস পরে ব্যাটিংয়ের চেষ্টা চালান। ড্রেসিংরুম থেকে সোহানকে দিয়ে নিজের কয়েকটি সানগ্লাস মাঠে নিয়ে আসেন। একটি পছন্দও করে নেন। কিন্তু ৩ বলের বেশি খেলতে পারেননি। স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করায় আম্পায়ারের কাছে সানগ্লাস দিয়ে খোলা চোখে ব্যাটিং শুরু করেন। যদিও ওই ৩ বলে মিরাজ দারুণ করেছিলেন। টিম সাউদিকে অন ড্রাইভে ৩ রান এবং ট্রেন্ট বোল্টকে পুল করে ৪ হাঁকিয়েছিলেন।

৮ বলে দুই রিভিউ নিয়ে উইকেট বাঁচালেন মিরাজ

দিনের ১৪তম বল। স্পিনার রাচিন রাবিন্দ্রার বল সুইপ করতে গেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ব্যাট-বলের টাইমিং করতে পারেননি। নিউ জিল্যান্ডের আবেদনে আম্পায়ার ক্রিস ব্রাউন আঙুল তোলেন। মিরাজ সতীর্থ ইয়াসিরের সঙ্গে কথা বলে রিভিউ নেন। বেঁচেও গেলেন। বল তার ব্যাটে স্পর্শ না করলেও গ্লাভসে আলতো চুমু খায়। তাতেই রক্ষা মিরাজের। 

৬ বল পর আবার মিরাজের রিভিউ। এবার পেসার নেইল ওয়াগনারের ভেতরে ঢোকানো বলে এলবিডব্লিউ মিরাজ। আম্পায়ার ক্রিস গ্রাফিনি তাকে আউট দেন। মিরাজ সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল বেশ আত্মবিশ্বাসী। রিভিউতে দেখা যায়, বল তার প্যাডে আঘাতের আগে ব্যাটে আঘাত করে। 

৮ বলের ব্যবধানে দুইবার আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে বেঁচে যান মিরাজ। ভাগ্য তা পাশে রয়েছে। ইনিংসটি কি লম্বা করতে পারবেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। 

ইয়াসির-মিরাজের ব্যাটে তাকিয়ে বাংলাদেশ

মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের ভাগ্যে কি লিখা আছে বোঝা যাবে আজ চতুর্থদিন। টেস্টের বর্তমান যা অবস্থা তাতে বাংলাদেশের হাতেই ম্যাচের নাটাই। বাংলাদেশ ভালো করলে ম্যাচটা অতিথিদের পক্ষে থাকবে। আর স্বাগতিকরা অভাবনীয় কিছু করলে তাদের দিকেই ম্যাচটা যাবে।

নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের চেয়ে ৭৩ রানে এগিয়ে থেকে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করবে বাংলাদেশ। ১৫৬ ওভারে ৬ উইকেটে ৪০১ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজ ২০ ও ইয়াসির আলী ১১ রানে দিন শুরু করবেন। তাদের ব্যাটেই তাকিয়ে বাংলাদেশ। তাদের পর স্বীকৃত কোনো ব্যাটসম্যান নেই। ফলে তারা দুজন যতক্ষণ ক্রিজে থাকবেন ততক্ষণ বাংলাদেশের জন্য ভালো। তত বড় হবে বাংলাদেশের লিড।

ঢাকা/ইয়াসিন/রিয়াদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়