ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

টি-টোয়েন্টির ছন্দ এখনো অধরা 

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৪ জুলাই ২০২২   আপডেট: ১২:০০, ৪ জুলাই ২০২২
টি-টোয়েন্টির ছন্দ এখনো অধরা 

ডোমিনিকা থেকে ছবি পাঠিয়েছেন মিলটন আহমেদ।

একটি তথ্য শুরুতেই জানা যাক, আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সরাসরি দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাছাই পর্ব পেরিয়ে খেলতে হবে দ্বিতীয় রাউন্ড! 

এই তথ্যর সঙ্গে ডোমিনিকায় বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি হারের যোগসূত্র খুঁজে বের করা অমৌলিক। তবে চাইলে কাটাছেঁড়া করে বলা যায়, একটা দল অক্টোবরের বিশ্বকাপের আগে কতটা গোছানো আরেকটা তার উল্টো। 

নিশ্চিত হারের মুখ থেকে প্রথম টি-টোয়েন্টি থেকে বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশ একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে স্রেফ অসহায়। ম্যাচ হারার আগে হেরে যাওয়া, ছন্দ হারিয়ে মনোবল হারানো, শেষমেশ অসহায় আত্মসমর্পণ! ক্যরিবীয় নৃত্য আর ডিজের মিক্সিংয়ে ২২ গজে স্বাগতিকদের বিজয়ের ঝাণ্ডা উড়ল। 

ডোমিনিকায় আগে ব্যাটিং করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে ১৯৩ রান তোলে। জবাবে অতিথিরা ৬ উইকেটে ১৫৮ রানের বেশি করতে পারেনি। ৩৫ রানের পরাজয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। 

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যে আকর্ষণ, যে সুর, যে বার্তা তা পুরোপুরি ফুটে ওঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ে। এ ফরম্যাটে কেন তারা দুবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তা-ই যেন সিমন্স-স্যামুয়েলস-গেইলদের উত্তরসূরীরা বুঝিয়ে দিয়েছেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলেছেন একই ছন্দে, একই সুরে। নিখুঁত তাল-লয়ে বাউন্ডারির গান ধরে নিজেদের রান নিয়ে যান চূড়ায়।

শুরুতে ব্রেন্ডন কিং, মাঝে অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। শেষটা রোভম‌্যান পাওয়েলের। শেষ দুজন আইপিএলে নিজেদের পতাকা উড়িয়েছেন। টি-টোয়েন্টি ফেরি করেই বেড়ান তারা। তাইতো তাসকিন, মোস্তাফিজ, শরিফুল, সাকিবদের আক্রমণ সামলাতে তাদের কোনো বেগ পেতে হয়নি।

দলীয় ১৯৩ রানের ১১৬ রানই এসেছে বাউন্ডারি থেকে (১৪ চার ও ১০ ছক্কা) । ৬ ছক্কা তো একই হাঁকিয়েছেন পাওয়েল। মাত্র ২৮ বলে ৬১ রানের ক‌্যামিওতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোরবোর্ড উড়ন্ত, বাংলাদেশের মনোবল এলোমেলো। স্টেডিয়ামের হাজার দুয়েক দর্শকদের টিকিটের পয়সাও উসুল।

ওপেনার কিং ৪৩ বলে খেলে যান ৫৭ রানের ইনিংস। যেখানে ৭ চার ও ১ ছক্কা ছিল। পুরান বরারই আক্রমণাত্মক। তাসকিনের ১৪০ কি.মি.র বল মিড উইকেট দিয়ে গ‌্যালারিতে পাঠিয়ে বুঝিয়ে দেন গতি যতই হোক লেন্থ ঠিক না থাকলে ভাগ‌্য খারাপ! ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা তাসকিনের আজ তেমনই দিন ছিল। ৩ ওভারেই দিয়েছেন ৪৬ রান।

ইনিংসের শুরুতে কাইল মায়ার্সের ৯ বলে ১৭ রানের ঝড় থামান স্পিনার মেহেদী। তিনে নামা শিমরন ব্রকসকে সাকিব খুলতে দেননি রানের খাতা। শুরুতে ২ ‍উইকেট হারানোর পরও তাদের রান ৪৬। অথচ পাওয়ার প্লে’তে বাংলাদেশের বোলাররা ডট বল দিয়েছিলেন ২০টি।

শুরুর এই বোলিং ধারাবাহিকতা কেবল পরে একবারই করে দেখিয়েছেন মোসাদ্দেক। ইনিংসের ১৩তম ওভারে তাকে বোলিয়ে এনেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা এ অফস্পিনার কোনো রান না দিয়ে তুলে নেন পুরানের উইকেট। ভাঙেন কিং ও তার ৭৪ রানের জুটি।

পরের গল্পটা পুরোটাই পাওয়েলের। যেখানে কিং ওডেন স্মিথও রেখেছেন অবদান। তবে শেষ ৫ ওভারে ৭৪ রান দিয়ে বাংলাদেশ বুঝিয়ে দিয়েছে শুধু ব‌্যাটিং নয়, বোলিংয়ে উন্নতির অনেক পথ বাকি! সাকিব নিজের শেষ ওভারে ২৩, তাসকিন তৃতীয় ওভারে ২১ রান খরচ করেন। খেলার বাক বদল হয়ে যায় সেখানেই।

বোলিংয়ে অনুজ্জ্বল দিনে ব‌্যাটসম‌্যারাও পারেননি নিজেদের মেলে ধরতে। ৮ রানে দুই ওপেনার লিটন ও এনামুল সাজঘরে। মাহমুদউল্লাহ এক ছক্কা ও এক চারে ভালো শুরুর পরও থেমে যান ১১ রানে। এরপর সাকিব আফিফের ৪৪ বলে ৫৫ রানের জুটি বাংলাদেশকে আশা দেখায়। 

কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে জয়ের পথ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। সাকিব ও মোসাদ্দেকের ২৮ বলে ৫৩ রানের জুটিতে পরাজয়ের ব্যবধান কমায় মাত্র। সাকিবের টি-টোয়েন্টির দশম ফিফটি  থেমে যায় ৬৮ রানে। ৫ চার ও তিন ছক্কার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫২ বলে। 

দলের সেরা ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিবের থেকে এমন কিছুরই প্রত্যাশা সবার। কিন্তু বাকিরা তো টি-টোয়েন্টির ছন্দ ধরতে পারেনি। অধরা এ কাজ কবে পূরণ হবে? উত্তর জানা আছে কারো? 

ঢাকা/রিয়াদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়