ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

মুশফিক কি পারবেন রিজওয়ান হতে?

মানজুর মোরশেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩০, ২৫ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৬:১০, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
মুশফিক কি পারবেন রিজওয়ান হতে?

এই তুলনাটা একটু বেখাপ্পা লাগতে পারে, একটু বিসদৃশ-সামঞ্জস্যহীন মনে হতে পারে! এত লোক থাকতে মুশফিককে কেন রিজওয়ান হতে হবে? তাও যদি সিনিয়র কেউ হতো মানা যেতো! ৩৫ বছরের একটি লোককে কেন ৩০ বছরের একজনকে আদর্শ মানতে হবে?

আসলে এই বিষয়টি অবতারণার কোনও প্রয়োজনই ছিল না, যদি না ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে এসে মুশফিককে ঘিরে ওপেনারের মৃদু-মন্দ বাতাস না বইতো! এশিয়া কাপের বাংলাদেশ দলে ওপেনার হিসেবে আছেন তিন জন- এনামুল হক বিজয়, নাঈম শেখ ও পারভেজ ইমন। কিন্তু একঅর্থে কেউই ভরসা করার মতো টি-টোয়েন্টি ওপেনার নয়! একজন ইমপ্যাক্ট ওপেনার যিনি শুধু ভাল শুরু নয়, ব্যবধানও গড়ে দিতে পারেন- সেরকম একজনের বড় অভাব এই দলটিতে। চট্টগ্রামের খান পরিবারের অভিমানী তামিম ইকবালকে এখন আক্ষরিক অর্থেই মনে হচ্ছে অন্ধের ষষ্ঠি! তাকে না পেয়ে এক বিকল্প ভাবনা এগিয়ে নিচ্ছে টাইগারদের টিম ম্যানেজমেন্ট। সেটা মুশফিকুরকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে দেওয়া!

যে মুশফিককে ওয়ানডাউনে কিংবা চারে খেলানোই দায়, তিনি ওপেন করবেন? মুশফিককে এটা মানানো গেছে যে তিনি ওপেন করবেন। মুশফিককে যারা চেনেন, তাদের কাছে এটা আসলে বড়ই রহস্যময় ব্যাপার। তবে হ্যাঁ, তার ক্রিকেটের শিক্ষা গুরু নাজমুল আবেদীন ফাহিম মনে করেন- এখানেও মুশফিক সফল হবেন, কারণ সে যখন বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছিলেন, তখন নাকি ওপেনিংই করতেন। 

এখন আসল কথায় আসি। প্রয়োজনে মুশফিক কেন ওপেন করতে রাজি হচ্ছেন- তার একটি ব্যাখ্যা হতে পারে টি-টোয়েন্টি ‘মোমেন্টাম গেম’ মাত্র ১২০ বলের খেলা। যা রান তোলার তা ওই ২০ ওভারের মধ্যেই তুলতে হয়। এখন সেরা ব্যাটসম্যানটি যদি শুরুর বল থেকে স্কোরবোর্ডকে সচল করে দেন- তারচেয়ে ভালো আর কিছু হয় না! গ্রুপের দুই প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা- দুদলেরই বোলিং শক্তির ভরকেন্দ্র স্পিন, আর এই স্পিনটা দারুণ খেলেন মুশফিক। রশিদ খান-মোহাম্মদ নবী-মুজিবউর রহমান-ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা-মহেশ ঠিকশানারা পাওয়ার প্লের ৬ ওভারের মধ্যে বোলিংয়ে আসবেন, সেটা তো দিবালোকের মত সত্য। আর এখানে সুবিধা নিতে টিম ম্যানেজমেন্ট যদি মুশফিককে ব্যবহার করে- তবে অন্তত গেম প্ল্যানের দোষ দেওয়া যাবে না। 

নতুন টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম অবশ্য শেষ বেলায় সব আবার উল্টে দেন কি না সেটিও দেখার বিষয়! এই ভারতীয়র নাকি গেম প্ল্যানিংয়ে চমকে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। তবে টি-টোয়েন্টির বিবেচনায় আন্ডাররেটেড কিছু খেলোয়াড়ের দল বাংলাদেশও কিন্তু তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে! সাকিব সম্প্রতি তেল আর গ্যাসের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সামর্থ্য! বলেছেন- তার কাছে তেল নেই, তাই তেল নিয়ে পরিকল্পনা করেন না; আছে গ্যাস, তাই পরিকল্পনাও ওই গ্যাসকেন্দ্রিক! আসলে এই রুপক তুলনা বাংলাদেশের খনিজ সম্পদের বিবরণ ও ব্যবহার মনে হলেও- ক্রিকেট দলের সত্যিকার অবস্থা তুলে ধরেছে।

টি-টোয়েন্টি উপযোগী ক্রিকেটারের তীব্র আকাল এখন এদেশে। তার বড় প্রমাণ সবশেষ বিপিএলে ‘নজরকাড়া নতুন’ মুনিম শাহরিয়ার এখন অফফর্মের কারণে দলের বাইরে। আর তাই তো মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ যাদের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা ‘নাই’ হয়ে গিয়েছিল তারাই এখন ‘আছেন’। 

মুশফিক হঠাৎ এই ‘আছেন’ বলেই হয়তো এবার ইম্প্রোভাইজেশন করছেন তার ব্যাটিং পজিশন নিয়েও। তিনি সুইপ আর রিভার্স সুইপ দারুণ খেলেন, সাম্প্রতিককালে এই দুটি শট খেলতে যেয়ে আউটও হয়েছেন সবচে বেশি! এখন ফরম্যাট টি-টোয়েন্টি বলেই এই শটগুলো খেলার বিকল্পও নেই মুশফিকের হাতে। রিজওয়ান তার বেশিরভাগ রানই করেন কম্পালসিভ সুইপ শটে। টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরিও পেয়েছেন ওপেনিংয়ে নেমে। ৫৬ টি-টোয়েন্টিতে তার ব্যাটিং গড় ঠিক ৫০, স্ট্রাইক রেট ১২৮! 

এবার আসুন জেনে নেই মুশফিকেরটা; ব্যাটিং গড় ২০-এরও নীচে আর স্ট্রাইক রেট ১১৫; ম্যাচের সংখ্যা ঠিক ১০০। দুজনের তুলনাই হয় না! রিজওয়ানের কাছে মুশফিক যেন ‘ওয়ানস ইন আ ব্লু মুন’! এখন প্রশ্ন হচ্ছে মিডল-অর্ডারে যা পারেননি মুশফিক, তা কি পারবেন ওপেনিংয়ে? যদি পারেন তাহলে দলের সবচে বড় ভরসা বনে যেতে পারেন, হয়ে উঠতে পারেন টি-টোয়েন্টি দলের অন্যতম প্রাণভোমরা! 

টি-টোয়েন্টিতে যারা শুধুই পাওয়ার ক্রিকেটের হিসেব খোঁজেন তাদের চোখে আঙুল দিয়ে বাবর আজম প্রথাগত ক্রিকেটে, আর রিজওয়ান হাতে-গোনা কয়েকটি শট খেলে রান করে চলেছেন। রিজওয়ানের মতো মুশফিকও দস্তানা হাতে দাঁড়াবেন উইকেটের পেছনে, এই মিল যেন আবার অমিল না হয়ে যায় তার ব্যাটিংয়ে! রান আসুক বানের মতো। 

লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন।

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়