‘আমার ভূমিকা বিব্রতকর হতে পারে কিন্তু দলের ঊর্ধ্বে কিছু নেই’
ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
মারকাটারি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ক্রিস গেইল যেমন শাসন করে গেছেন, ঠিক তেমননি পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ানও দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু দুজনের খেলার ধরণ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ক্যারিবীয়ান কিংবদন্তির ২২ গজে পর্দাপন মানেই চার-ছক্কার বৃষ্টি। বোলারদের নাকানিচুবানি খাইয়ে এলোমেলো করে দেন স্কোরবোর্ড।
ঠিক একই মঞ্চে রিজওয়ানের ব্যাটিং ঠিক উল্টো। খেলাটাকে ধরে রেখে শেষ পর্যন্ত টেনে নেওয়া, টাইমিং অনুযায়ী খেলা, বাজে বলে কেবল শাসন করা, স্ট্রাইক রোটেটে খেলাটাকে এগিয়ে নেওয়া, দুয়েকবার আগ্রাসী মনোভাবে ব্যাটিংয়ের পর আবার শান্ত হয়ে এগিয়ে যাওয়া।
পাকিস্তানের এই ওপেনারও রান পাচ্ছেন। দল পাচ্ছে সাফল্য। রিজওয়ান নিজেও হয়েছেন টি-টোয়েন্টির র্যাংকিংয়ের সেরা ব্যাটসম্যান, এখন আছেন দুই নম্বরে। তবুও তার ধীরগতির ব্যাটিং নিয়ে হয় সমালোচনা। রিজওয়ান নিজেও তা জানেন। কিন্তু ভরসা রাখছেন নিজের ওপর।
বিপিএল খেলতে এসে রোববার প্রথম মুখোমুখি হলেন গণমাধ্যমের। সেখানে উঠে এলো তার টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন।
উত্তরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ওপেনার বললেন, ‘এটা খুব কঠিন ভূমিকা। কখনো কখনো আমার ভূমিকাকে বিব্রতকর মনে হতে পারে। কিন্তু আমি জানি আমি কি করছি। কারণ, দল আমার কাছে যা চাইছে আমি ঠিক তাই করছি।’
নিজের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ে সবাইকে খুশি করতে হবে এমনটাও নয়। রিজওয়ান এমন কিছুই বোঝাতে চাইলেন, ‘কখনো কখনো এটা খুব বিব্রতকর যে, সবাইকে ছক্কা মারতে হবে! সবাইকে কেন ৩৫ বা ৪০ বলে ৭০ রান করতে হবে। আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ম্যাচ জয়ের জন্য আমাদের কী করা প্রয়োজন সেটা করা এবং নিজেকে সেই অবস্থায় রেখে দলকে এগিয়ে নেওয়া।’
নিজের এমন ভাবনাতে দল, ফ্র্যাঞ্চাইজি, সতীর্থদের খুশি থাকাকেই যথেষ্ট মনে করেন রিজওয়ান, ‘আমার থেকে দল যা চাচ্ছে সেটা করছি। আমার কোচ, অধিনায়ক, মালিক, পুরো দল যদি আমার পারফরম্যান্সে আমার উপর আস্থা রাখতে পারে তাহলেই হবে। শুধু এখানে না পাকিস্তান কিংবা অন্য কোথায় আপনাকে যদি খেলতে নিয়ে যায় এবং তাদের চাহিদা আপনি জেনে নিজের পরিকল্পনা সাজাতে পারেন এবং কন্ডিশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যান তাহলে অবশ্যই তাদের হয়ে কাজটা করে দিতে হবে।’
শেষ দুই-তিন বছরে নিজের খেলাটাকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন রিওয়াজন যেখানে যেতে নিজেকে নতুন করে তৈরি করতে হয়েছে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং, নতুন শট আয়ত্ব, উইকেটের চারিপাশে শট খেলার কৌশল, রানিং দ্য বিটিউনে ক্ষীপ্রতা, ব্যাটিং স্টান্সে নানা পরিবর্তন করে রিজওয়ান আকাশ ছুঁয়েছেন। গত বছর স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে দুই হাজারেরও বেশি রান করেছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
ব্যাটে রানের ফোয়ারা থাকলেও এই ফরম্যাট নিয়ে তার ভাবনাটা একেবারেই সাদামাটা। নিজের ক্রিকেটীয় আইডল এবি ডি ভিলিয়ার্সকে দেখে হয়েছেন অনুপ্রাণিত। ক্যারিয়ার গড়ছেন তার মতো করেই, ‘আমার জন্য আমার আইডল এবি বি ভিলিয়ার্স। আমি তাকে খুব কাছ থেকে অনুসরণ করেছি। টি-টোয়েন্টির মতো টেস্টেও সে পারফর্ম করেছে। দল যেটা চেয়েছে সেভাবে পারফর্ম করেছে। আমারও ভাবনা কমই। টি-টোয়েন্টিতেও স্ট্রাইক রেট কম থাকতে পারে। কিন্তু ছন্দ হারানো যাবে না। কারণ, আপনাকে দলের প্রয়োজন অনুযায়ী আক্রমণাত্মক খেলতে হতে পারে। আমার নিজের উপর শতভাগ বিশ্বাস। সৃষ্টিকর্তারও আমার পাশে আছে বলে আমি সফল হচ্ছি।’
নিজেকে কল্পনা, নিজের ভাবনার জগৎ, নিজের ওপর বিশ্বাসে রিজওয়ান এতোটাই দৃঢ় যে বাইরে কি হচ্ছে সেসব থোরাই কেয়ার করেন। নিজের মস্তিষ্ককে শতভাগ ক্রিকেটে বিনিয়োগ করে সাফল্য আদায়ে মরিয়া এ ক্রিকেটার, ‘মস্তিষ্ক সব সময় আপনাকে সহায়তা করবে। এটা অন্য কোনো কাজের জন্য নয়। আমি সেই চেষ্টাই করি। আপনার মাথায় বিভিন্ন চিন্তা আসতে পারে। কারণ, গণমাধ্যম, পুরো পৃথিবী আপনার দিকে তাকিয়ে আছে এবং তাদের মতো করে সব কিছু হবে বলে ভাবছে। কিন্তু আমার কাছে দলের ঊর্ধ্বে কিছু নয়। গণমানুষ কি বলছে তাতে আমি উদ্বিগ্ন নই। সত্যি বলতে দল যা চাচ্ছে সেটাই আমি।’
ইয়াসিন/আমিনুল