ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

দায়িত্বহীন, ব‌্যাখ‌্যাতীত পরাজয়ে সিরিজ হাতছাড়া

ক্রীড়া প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২০, ২৯ অক্টোবর ২০২৫   আপডেট: ২২:২৩, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
দায়িত্বহীন, ব‌্যাখ‌্যাতীত পরাজয়ে সিরিজ হাতছাড়া

ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুধু হাফ ছেড়ে বাঁচলই না, ক্রিকেটের চিরায়িত সত‌্য, ‘ক‌্যাচ মিস তো ম‌্যাচ মিস’ কথাটা ভুল প্রমাণিত করে দিল!

বাংলাদেশের ব‌্যাটসম‌্যানদের তিন ক‌্যাচ ছেড়েও ম‌্যাচ জিতেছে তারা। হ‌্যাঁ, সাইফ, লিটন ও তানজিদের ক‌্যাচ ছেড়ে ১৪৯ রানের পুঁজি নিয়ে ম‌্যাচ জিতে তারা প্রমাণ করেছে ভালো বোলিং করেও ম‌্যাচটা বাগিয়ে আনা যায়। এক্ষেত্রে দুটি বিষয় পক্ষে আসতে হবে—
এক, প্রতিপক্ষের দায়িত্বহীন ব‌্যাটিং, 
দুই, নিজেদের জয়ের তীব্র আকাঙ্খা।

আরো পড়ুন:

প্রথমটা বাংলাদেশের ব‌্যাটসম‌্যানরা হেসেখেলেই করে দিয়েছে। নিয়মিত ব‌্যাটিং ব‌্যর্থতার ছবি আঁকা ব‌্যাটসম‌্যানরা আজও ক‌্যানভাসে তুলির আঁচড় ছড়ালেন। ব‌্যর্থতার স্তুপে যোগ হলো আরেকটি আবর্জনা।

বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হারের পর টি-টোয়েন্টি জয়ের পণ করেছিল অতিথিরা। প্রথম ম‌্যাচ জয়ের পর আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আজ দ্বিতীয় ম‌্যাচেও একই ধারাবাহিকতা। ব‌্যাটিংয়ে ধস নামার পর বোলিংয়ে তারা ছিল নিয়ন্ত্রিত। ধ্রুপদী অধিনায়কত্বে হোপ নজর কেড়েছেন। বাকিরা তার বিশ্বাসের সুরে কেবল সুর মিলিয়েছেন। তাতেই হয়েছে বাংলা বধ। 

১৪ রানের দারুণ জয়ে এক ম‌্যাচ হাতে রেখেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতে নিয়েছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। গত বছর নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশের কাছে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল তারা। এবার বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজ জিতে বদলা নিল হোল্ডার, হোপরা। শেষ ম‌্যাচে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে ষোলোকলাপূর্ণ হবে নিশ্চিতভাবেই।

১৫০ রান তাড়া করতে নেমে ৮ উইকেটে ১৩৫ রানে আটকে বাংলাদেশ। তাতে চার সিরিজ পর টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ হারল।

লক্ষ‌্য যতটা নাগালে চিন্তা ততটাই কঠিন। সাইফ ও তানজিদের শুরুর ব‌্যাটিং তেমন বার্তাই দিচ্ছিল। এলোমেলো ব‌্যাটিংয়ে রান তোলা কঠিন করে ফেলছিলেন তারা। স্ট্রাইক রোটেটের পরিবর্তে বাউন্ডারিতে নজর ছিল তাদের। তাতেই বাড়ছিল চাপ। সেই চাপ সামলে নিতে না পেরে সাইফ ১১ বলে ৫ রান করে আউট হন। লিটন ক্রিজে এসে সিলসকে এক ওভারে ৩ চার হাঁকান। এরপর শেফার্ডের বলেও একটি চার পান। ২০ রানে এই পেসারের বলে হাওয়ায় ক‌্যাচ দিয়ে জীবন পান বাংলাদেশের অধিনায়ক। কিন্তু আর ৩ রান যোগ করে আকিলের বলে বোল্ড হয়ে তাকে সাজঘরে ফিরতে হয়।

সেখান থেকে তানজিদের ব‌্যাটেই বাংলাদেশ লড়াইয়ে থাকে। স্পিনারদের বেশ ভালোভাবে সামলে নিলেও তানজিদ পেসারদের মোকাবিলা করতে পারছিলেন না। ডট বলের চাপ ক্রমাগত বাড়ছিল তার। বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে শট খেলতে গিয়ে ৪৪ রানে জীবনও পান। ১৫তম ওভারে শেফার্ডকে চার মেরে বাঁহাতি ব‌্যাটসম‌্যান ৩৮ বলে তুলে নেন ফিফটি। এই ফরম‌্যাটে যা তার নবম ফিফটি। 

অন‌্যদিকে তাওহিদ ১৪ বলে ১২ রান তুলে হাল ছেড়ে দেন। দলে ফেরা জাকের আলী ভুগছিলেন। তানজিদ ফিফটির পর অফস্টাম্পের বাইরের বল উড়াতে গিয়ে ক‌্যাচ দেন ডিপ কাভারে। জাকের ১৭ রানের বেশি করতে পারেননি। শামীম হোল্ডারের দারুণ ইয়র্কারে ১ রানে বোল্ড। এই তিন ব‌্যাটসম‌্যান ৭ বলের ব‌্যবধানে আউট হলে বাংলাদেশের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়। শেষ দিকে আর কেউ পারেননি একটুও আশা দেখাতে। তানজিম, রিশাদ, নাসুম আউট হয়ে ব‌্যর্থতার পূর্ণতা দেন। 
ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের নায়ক শেফার্ড ৩ ওভারে ২৯ রানে ৩ উইকেট নেন। ২২ রানে সমান ৩ উইকেট পেয়েছেন আকিল।

বোলিংয়ে অবশ‌্য বাংলাদেশ ভয়কে করেছে জয়। শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে ভয় দেখিয়েছিল তাতে এলোমেলো হয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল বোলারদের। আগের দিন শেই হোপ, রোভমান পাওয়েলদের ঝড় তো মনে থাকারই কথা। সঙ্গে হোল্ডার, শেফার্ডরাও যেকোনো সময় চার-ছক্কা উড়াতে পারেন। সেই পথেই ছিলেন অতিথিরা।

১ উইকেট হারিয়ে তাদের রান ৯৪। ১১.১ ওভারে রান ১০৬। ততক্ষণে ফিফটি তুলে নিয়েছেন হোপ ও আথানজে। এরপরই নাটকীয় বিপর্যয়। পরের ২০ বলে রান উঠলো কেবল ১২। উইকেট হারাল ৫টি। নাসুম ও রিশাদ নিজেদের ওভারে জোড়া উইকেট পান। মোস্তাফিজুর রহমান তুলে নেন অপরটি। তাতে ক‌্যারিবীয়ানদের ব‌্যাটিংয়ের মিডল অর্ডার ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ওই ধাক্কার পর তাদের ব‌্যাটসম‌্যানরা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। রোস্টন চেজের ১৭ ও রোমারিও শেফার্ডের ১৩ রানে মাঝারি মানের পুঁজি পায় তারা।

এর আগে ইনিংসের প্রথম বলে ব্রেন্ডন কিংয়ের ক‌্যাচ ছাড়েন লিটন। তবে জীবন পাওয়ার পরও কিং বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। তাসকিনের বলে তাওহিদের হাতে ক‌্যাচ দেন ১ রানে। সেখান থেকে আথানেজ ও হোপ ১০৫ রানের জুটি গড়েন। যেখানে নিজের প্রথম ওভার করতে এসে জোড়া ছক্কা হজম করেন রিশাদ। সাইফ বিলিয়ে আসেন ৯ রান। শামীম হোসেন দেন ১১ রান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান আটকাতে প্রয়োজন ছিল ব্রেক থ্রু। পানি পানের বিরতির পর নাসুম এই জুটি ভাঙেন। ৩৩ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৫২ রান করা আথানেজ ফেরেন সাজঘরে। তার দেখানো পথ ধরে হোপ ফিরেন ৫৫ রানে। ৩৬ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কা হাঁকান ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। 
বল হাতে ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে মোস্তাফিজুর ছিলেন দলের সেরা। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন নাসুম ও রিশাদ।

দুই ইনিংসেই ধস নেমেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেই ধস সামলে কিছুটা প্রতিরোধ করে বোলারদের দিয়েছিল আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাস ও বাংলাদেশের ব‌্যাটসম‌্যানদের আত্মসমর্পণে ম‌্যাচটা জিতে সিরিজ জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও নেপালের কাছে সিরিজ হারের পর অবশেষে জয়ের স্বাদ পেল তারা। আর শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেদারল‌্যান্ডস ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর ব‌্যর্থতাকে সঙ্গী করলো বাংলাদেশ।

শেষটা কী হোয়াইটওয়াশেই হবে নাকি অন্তত একটি ম‌্যাচ জিতবে বাংলাদেশ? উত্তরটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়