ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

যে ফুলে সেজে ওঠে বসন্ত

খায়রুল বাশার আশিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৮, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে ফুলে সেজে ওঠে বসন্ত

খায়রুল বাশার আশিক : ‘আহা, আজি এ বসন্তে, কত ফুল ফোটে, কত পাখি গায়...’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বসন্তের প্রেমে পড়ে লিখেছিলেন এমন গান। বসন্তপ্রেমীরা প্রত্যেকেই এমন গান না লিখতে পারলেও অনেকের ঠোঁটেই এমন গান চলে আসে ঋতুরাজ বসন্ত মৌসুমে।

প্রকৃতিতে এখন বসন্তের আমেজ। চারদিকে সবুজের হাতছানি, পাখির কিচিরমিচির ডাক আর রঙিন সব ফুলের আগমনে বসন্ত যেন এক স্বর্গীয় রূপ দেয় বাংলাদেশের প্রকৃতিতে। প্রকৃতি যেন নতুন রূপে আমাদের সামনে হাজির হয়। গাছে গাছে নতুন পাতা, রঙিন ফুল নতুন ভাবে সাজে এ দেশের সবুজ জনপদে। আমরা সবাই কি জানি বসন্তে কী কী ফুল আমাদের প্রকৃতিকে অপরূপ রূপে ফুটিয়ে তোলে? আজ কথা হোক বসন্তের কিছু ফুল নিয়ে।

কাঠগোলাপ
দেখতে মোটেও সাধারণ গোলাপের মতো নয়, তবুও নামের সঙ্গে যুক্ত ‘গোলাপ’ কথাটি। বসন্ত তার ফুটে ওঠার নেবার শুভক্ষণ। এ মৌসুমেই সর্বত্র কাঠগোলাপ ফুটতে শুরু করে, আর গ্রীষ্মে পায় পূর্ণতা। দেখতে অসাধারণ এই ফুলটি উঁচু গাছে ছড়ানো ডালপালায় জন্ম নেয়। গাছ থেকে মাটিতে ঝরে গেলেও অটুট থাকে তার মিষ্টি ঘ্রাণ। সুদূর মেক্সিকোতে তার পূর্বপুরুষের আবাসভূমি। সেখান থেকে আসা এই সুন্দর সুগন্ধি ফুলটি এখন আমাদের দেশে দারুণ জনপ্রিয়। কাঠগোলাপের ইংরেজি নাম Frangipani। এ ফুলটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্রতার উৎস, পূজার উপকরণ এবং বৌদ্ধদের কাছে এটি মৃত্যুহীন প্রাণের প্রতীক বলে বিবেচিত হয়।

কৃষ্ণচূড়া
বসন্তের ছোঁয়ায় প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়ার দোল লাগে। যা মানব হৃদয়কে ছুয়ে দেয় অনুভবের গহীন থেকে। মানুষের মনও সাজতে চায় কৃষ্ণচূড়ার সাজে। পাতা ও সুন্দর মনকাড়া ফুলের জন্য আমাদের দেশে কৃষ্ণচূড়া বেশ জনপ্রিয় একটি ফুল। প্রকৃতির রুক্ষতা আর জীবনে যান্ত্রিকতাকে ভুলিয়ে যা আমাদের মনে এনে দেয় অপরিমেয় শান্তি। কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম Delonix regia। উজ্জ্বল লাল রঙের এই ফুলটির শুভাগমন ঘটে বসন্তের শুরুতে। 

নাগলিঙ্গম
বাংলা ভাষায় নাগলিঙ্গম নামে পরিচিত এই ফুলের পরাগচক্র দেখতে অনেকটাই সাপের ফণার মতো। এ কারণেই গাছটির নাম নাগলিঙ্গম হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়াও এ গাছের ফুল নাগ-নাগিনী পাহারা দেয় এমন ধারণা থেকেও এ ফুলের এমন নামকরণ হতে পারে। বৃক্ষটির আদি নিবাস উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ ক্যারাবিয়ান অঞ্চল। ১৭৫৫ সালে ফ্রান্সের উদ্ভিদবিদ জে.এফ আবলেট এর নামকরণ অনু্যায়ী উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis। বাংলাদেশে খুব কম সংখ্যক নাগলিঙ্গম গাছ রয়েছে। তবে এই ফুলের গন্ধ আসাধারণ। বসন্তের শুরু থেকে ফুল আসা শুরু করে স্থায়ী হয় গ্রীষ্মের শেষ অবধি।

পলাশ

‘হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল এনে দে এনে দে নৈলে রাঁধব না, বাঁধব না চুল.....’ এমন করেই নজরুলগীতিতে জায়গা করে নিয়েছে ‘পলাশ’ ফুল। শীতের সাময়ে পলাশ গাছের পাতা ঝরে গেলেও বসন্তে এ গাছে নতুন ফুল পাতা আসে। দেখতে টকটকে লাল ছাড়াও হলুদ ও হালকা লালচে কিংবা কমলা রঙের পলাশ ফুলও চোখে পড়ে। এই ফুল পাখির খুব পছন্দের, তাই হরেক পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে পলাশ কানন। বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়ে নারীরা যখন চুলে পলাশ গুঁজে দেয় তখন যেন বসন্তের সুবাতাস আরও মধুময় হয়ে ওঠে। তখন পালাশের শোভা আরো সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলে সমগ্র বাংলার বসন্তকে। এই উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম  Butea monosperma। পলাশ গাছ তার ফুলের জন্যই সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

শিমুল
গ্রামের পথে যেতে যেতে মাঝেমধ্যে পথিকের চোখে পরে লাল আবিরে সাজানো একটি বৃক্ষ। চিরপরিচিত শিমুল গাছের কথা বলছি। শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম  B.ceiba। গাছ ভর্তি লাল টকটকে শিমুল ফুলের সৌরভ নেই তবে তার সৌন্দর্য আছে। আর সে সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন না এমন মানুষ খুব কমই মিলবে। শিমুল গাছ মানুষের তুলার চাহিদা পূরণ করে। বসন্তে শিমুল গাছে ফুল আসে। আর এই ফুলের আবিরে অল্প দিনের মধ্যেই ছেয়ে যায় গাছ। শিমুল ফুলের মধু পাখিদের প্রিয় একটি খাবার। বাংলাদেশের প্রকৃতিপ্রেমীদের মন জুড়ে এই ফুলের কদর যেন এক চিরচেনা ভালোবাসারই অংশ।

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়