ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

পাকিস্তানি সৈন্য অপসারণই সমস্যার শ্রেষ্ঠ সমাধান : ইন্দিরা গান্ধী

তাপস রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১১, ১ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাকিস্তানি সৈন্য অপসারণই সমস্যার শ্রেষ্ঠ সমাধান : ইন্দিরা গান্ধী

তাপস রায় : মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একাত্তরের প্রতিটি দিন সমান গুরুত্ব বহন করে। সেই সময়ের প্রতিটি ক্ষণ ছিল রক্তের অক্ষরে লেখা। তার পরও কোনো কোনো দিন আত্মত্যাগে গৌরবের মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। সেসব কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়।

 

বিজয়ের মাস এলে প্রতি বছর আমরা স্মরণ করি আমাদের ঐশ্বর্যমণ্ডিত সেই বিজয়ের ইতিহাস। যেখানে একেকটি তারিখ পরিণত হয়েছে সংগ্রামের প্রতীকে, শ্রদ্ধা ও বিজয়ের অবিনাশী স্মারকে। বিশেষ করে একাত্তরের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে বিজয় যখন নিকটবর্তী অর্থাৎ পুরো ডিসেম্বর জুড়েই ছিল ঘটনার ঘনঘটা।

 

মনে পড়ে, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সহায়তার কথা। সে সময় স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য ভারতের স্বীকৃতির প্রয়োজন ছিল। এই ডিসেম্বরেই মিলেছে সেই স্বীকৃতি। যে স্বীকৃতি আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের পরিচিতি থেকে মুক্তি দিয়েছে। এর আগে এই ডিসেম্বরের ৩ তারিখ ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের যুদ্ধ ঘোষণার পর শুরু হয় দেশ-বিদেশে কূটনৈতিক লড়াই। জাতিসংঘের সদর দপ্তরে পূর্ব পাকিস্তানের ভাগ্য নিয়ে চলে জোর আলোচনা।  

 

এরপর যুদ্ধজয়ের ঠিক দুদিন আগে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকবাহিনী ঘটায় ইতিহাসের নৃশংসতম, ঘৃণিত বুদ্ধিজীবী নিধন। সে-ও এই ডিসেম্বরেই। এই হত্যাকাণ্ড ছিল পাকিস্তানি সামরিক জান্তার অন্তিম আঘাত। যে আঘাতে প্রতিটি মৃত্যু আজও জ্বলছে বাঙালির সকল দুঃখের প্রদীপ হয়ে। অথচ মৃত্যুভয়ও তখন গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছিল বিজয়ের উত্তেজনায়। স্বাধীন দিনের সূর্য দেখার সাধ তখন বাংলার প্রতিটি ধূলিকণায়। অবশেষে আসে বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ-১৬ ডিসেম্বর। দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের উল্লেখযোগ্য মাস ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসের প্রতি দিনের কথা নিয়ে আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজন।

 

একাত্তরের ১ ডিসেম্বর রাওয়ালপিণ্ডিতে জনৈক সরকারি মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান, অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার এখনও শেয় হয়নি। সরকারি মুখপাত্র বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের চারটি রণাঙ্গনে যে আক্রমণাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়েছিল তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। অর্থাৎ সেদিনের এই সংবাদ থেকে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, তারা আসল পরিস্থিতি লুকাতে চাইছিল।  তারা সেনাবাহিনীর মনোবল চাঙ্গা রাখতে স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিল।  

 

ওদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ১ ডিসেম্বর পার্লামেন্টের উচ্চ পরিষদে বক্তৃতাকালে উপ-মহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্য অপসারণের নির্দেশ দেবার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্য অপসারণই সমস্যার শ্রেষ্ঠ সমাধান। তিনি ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের জনসাধারণকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।

 

একাত্তরের ১ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনি কুষ্টিয়ার দর্শনা ও সিলেটের শমসেরনগর আক্রমণ করে। খুলনার ভোমরা ও খালিশপুর, যশোরের বেনাপোল, সিমিলিয়া, উস্তালি, আন্দাবাড়ী, ময়মনসিংহের কামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও সালদানদী, কুমিল্লার গঙ্গাধর, পাথরনগর ও হরিমঙ্গল এবং চট্টগ্রামের হরিনা এলাকায় মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে সারাদিন যুদ্ধ চলে।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ ডিসেম্বর ২০১৬/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়