ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

পাহাড়ের পতিত জমির লেবু ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে

মামুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ২৬ মে ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাহাড়ের পতিত জমির লেবু ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে

পাহাড়ি পতিত জমিতে চাষকৃত লেবু

মোঃ মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : পতিত জমি পেলেই লেবু গাছ রোপন করা হচ্ছে। গাছে গাছে ধরা পড়ছে লেবু। চাষিদের মধ্যে প্রতিযোগীতামূলকভাবে এ চাষ চলছে। লাভজনক এ লেবু গাছের নিচে নাগা মরিচ ও নানা ধরণের সবজিও চাষ হচ্ছে।

 

একদিকে লেবু আবার তার সাথে নাগা মরিচ আর সবজি চাষ। একের সঙ্গে অনেক। এই চাষে হাজার হাজার বেকার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। সফলতা দেখে অন্যান্য বেকার লোকেরাও এমন চাষাবাদে ঝুঁকে পড়ছেন। হবিগঞ্জের পাহাড় ও বিভিন্ন সমতল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমনই চিত্র।

 

এ সময় জানা যায় আরো চমকপ্রদ তথ্য। এ জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল,মাধবপুর, চুনারুঘাট উপজেলার পাহাড়ি পতিত জমিতে চাষকৃত লেবু ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। বিষমুক্ত হওয়ায় বিদেশের বাজারে এ লেবু’র চাহিদা রয়েছে। তেমনি দেশীয় বাজারেও পাহাড়ি লেবুর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এদিকে লেবুর সঙ্গে চাষ হওয়া নাগা মরিচও দেশের বাইরে যাচ্ছে।

 

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শাহ আলম বলেন, ‘পাহাড়ী অঞ্চল ছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লেবু চাষ হচ্ছে। তাতে করে একশ্রেণির বেকার লোক স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছেন। আরও সুখবর হলো- এখানকার চাষকৃত লেবু আমেরিকা, যুক্তরাজ্যসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। এতে করে কৃষক ও রফতানিকারক উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।’

 

তিনি বলেন, ‘এক সময় এ জেলার প্রচুর পাহাড়ি জমি পতিত পড়ে থাকত। পরে পাহাড়ি আদিবাসীরা এসব জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে লেবু চাষ শুরু করে সফলতা পায়। পরবর্তী সময় বাণিজ্যিকভাবে পাহাড়ে লেবু চাষ শুরু হয়। এসব চাষ লাভজনক দেখে সমতল এলাকার লোক লেবু চাষ শুরু করে। আজ তারাও সফল। লেবু চাষে তেমন একটা খরচ হয় না।’

 

শাহ আলম বলেন, ‘জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, মাধবপুর, চুনারুঘাট উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত জমিতে লেবু চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। এখন লেবুর সাথে নাগা মরিচ, পেঁয়ারা, সবজিও চাষ হচ্ছে। প্রথম অবস্থায় লেবুর মূল্য তেমন না পেলেও বর্তমানে এর চাষ করে কৃষকরা লাখ লাখ টাকা পাচ্ছেন। লেবুগুলো পাহাড়ি অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মুচাই ও মিরপুর আড়তে নিয়ে আসা হয়। ওই স্থানগুলোতে লেবু কেনা-বেচাকে কেন্দ্র করে পাইকাররা গড়ে তুলেছেন বেশ কয়েকটি আড়ত। এ আড়তে কৃষকরা নানা যানবাহনযোগে লেবু বিক্রি করার জন্য প্রতিদিন নিয়ে আসেন। পাইকাররা এসব ক্রয় করে ঢাকার কারওয়ানবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য পাঠান। সেখান থেকে দেশের বাইরে রপ্তানী হচ্ছে।

 

আক্কাছ মিয়া, আমীর হোসেন, সবুজ মিয়া, আসলাম আলীসহ বেশ কয়েকজন পাইকারের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, হবিগঞ্জের পাহাড়ি অঞ্চলের লেবু দিয়ে নানা ধরনের জুস, খাবার তৈরি করা সম্ভব। এজন্য গড়ে তুলতে হবে কারখানা। এখানে কারখানা করলে লেবুর মূল্য আরও বেড়ে যাবে। এতে করে কৃষকরা অনেক বেশি লাভবান হয়ে লেবু চাষে আরও মনোযোগী হবেন। এক সময় লেবুর তেমন দাম ছিল না। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতিটি লেবু ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

 

কৃষক আব্দুস শহীদ, সমুজ আলী, উপেন চাকমা, স্বপন সাওতাল জানান- তারা ৬০ একর জমিতে লেবু চাষ করেছেন। এর সাথে নাগা মরিচসহ সবজি চাষও হচ্ছে। প্রতি বছর প্রত্যেকের লাখ টাকার ওপরে আয় হচ্ছে। অন্য ফসল চাষের তুলনায় লেবু চাষে খরচ তেমন একটা হয় না। লেবুতে কেমিক্যাল প্রয়োগ না করলেও চলে। তবে সার, গোবর দিতে হয়। এর ফলে লেবুর সাথে নাগা মরিচসহ সবজিরও ভাল ফলন হয়।

 

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, জেলার প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হচ্ছে।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/২৬ মে ২০১৫/মামুন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়