ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

প্লাস্টিকের পাত্রে বন্দি জীবন

মারুফ খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৪১, ২৩ জুলাই ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্লাস্টিকের পাত্রে বন্দি জীবন

প্লাস্টিকের পাত্রে রহমা

অন্য দুনিয়া ডেস্ক : রাহমা হারুনা। বয়স সবেমাত্র ১৯। বাস নাইজেরিয়ার কানো শহরে। আর দশ-পাঁচটা সাধারণ শিশুর মতো সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিয়েছিল সে। কিন্তু জন্মের ছয় মাস পর থেকেই অজানা এক রোগে আক্রান্ত হয় রাহমা। এখন তার জীবন বন্দি প্লাস্টিকের পাত্রে।

 

অজানা দূরারোগ্য এই রোগের ফলে তার হাত এবং পায়ের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯ বছর বয়সে এসে পঙ্গুত্ব মেনে নিতে হয় তাকে। তার মা ফাদি বলেন, ‘ছয় মাস বয়সে সে যখন বসতে শিখেছিল তখন থেকে সে এই রোগে আক্রান্ত। হামাগুড়ি কীভাবে দিতে হয় সে তা জানে না। জ্বর থেকে তার এ রোগের শুরু। তখন পেটে ব্যথা হতো। এরপর তার হাত এবং পায়ে সমস্যা দেখা দেয়।’

 

ধীরে ধীরে রাহমার ব্যথা বাড়তে থাকে এবং সে এক সময় পুরোপুরি অক্ষম হয়ে পড়ে। সে এখন তার পরিবারের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। তাকে গ্রামে ঘোরানোর জন্য একটি প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করে তার পরিবার। বেশির ভাগ সময় এ দায়িত্ব পালন করে তার ১০ বছর বয়সি ভাই ফাহাদ। সে তার বোনকে খুবই ভালোবাসে। 

 

 

ফাহাদ বলে, ‘আমি তাকে অনেকভাবে সাহায্য করি। তাকে গোসল করিয়ে দিই। আরো একটি কাজ যেটি করি তা হলো তাকে নিয়ে প্রতিদিন ঘুরতে বের হই। আমার খুব ভালো লাগে যখন দেখি মানুষ তাকে সাহায্য করে। আমি তাকে আমার আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে নিয়ে যাই। বেড়াতে গিয়ে তাদের দেখে সে খুব খুশি হয়।’ 

 

রাহমার রোগ কী তা জানার জন্য অনেক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়েছে তার পরিবার। কিন্তু প্রকৃত রোগ এখনো জানা সম্ভব হয়নি। কিছু কবিরাজ তার পরিবারকে জানিয়েছে তাকে জ্বীনে ধরেছে। এ পর্যন্ত রাহমার জন্য পরিবার অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। তার রোগ সম্পর্কে জানার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাদের।

 

এ প্রসঙ্গে রাহমার বাবা হুসাইনি বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে তার চিকিৎসার সন্ধান করছি। আমি কৃষিকাজ করি এবং তার খরচ জোগানোর জন্য এর বাইরে অনেক কিছু করতে হয়। আমি আমার প্রায় সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছি। একমাত্র সৃষ্টিকর্তা জানেন আরো কত খরচ করতে হবে।’  

 

 

অসহায় এ পরিবারটি বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তারা বিভিন্ন সময় সাহায্য হিসেবে অনেক উপহারও পেয়েছে। এর মধ্যে একজন হৃদয়বান ব্যক্তি একটি হুইলচেয়ার উপহার দিয়েছেন।

 

তবে প্রতিনিয়ত রাহমার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবুও সে শেষ চেষ্টা করে যাবে। রাহমার ভাষায়, ‘আমি যা তার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। আমি একটি ব্যবসা শুরু করতে চাই। আমি চাই একটি মুদিখানা দিতে, সেখানে মানুষ তাদের চাহিদার সবকিছু পাবে। এটিই এখন আমার চাওয়া।’

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুলাই ২০১৬/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়