ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বায়ু দূষণ হ্রাসে বিশ্বে প্রথম রাজশাহী

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ১৮ জুন ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বায়ু দূষণ হ্রাসে বিশ্বে প্রথম রাজশাহী

রাজশাহীতে রাস্তার পাশে সবুজায়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণা যা বাতাসে মিশে আছে তা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম হয়েছে রাজশাহী শহর। গত দুই বছরে রাজশাহীতে এই সফলতা এসেছে।

 

শুক্রবার যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যের ভিত্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটা সময় ছিল, যখন রাজশাহী ছিল এশিয়া উপমহাদেশের সবচেয়ে বেশি ‘দূষিত’ শহর। কিন্তু এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। রাজশাহী এখন দ্রুতই সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছে। ইটভাটার চিমনির উচ্চতা বাড়িয়ে দেওয়া, বনায়ন, রাস্তার পাশের ফুটপাত কংক্রিট দিয়ে ঘিরে দেওয়া, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বহুল ব্যবহার ও ডিজেলচালিত যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ির কারণে তা সম্ভব হয়েছে।

 

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আগে রাজশাহীর বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা (১০ মাইক্রোমিটার আকারের) প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ছিল ১৯৫ মাইক্রোগ্রাম। এটা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে ২০১৬ সালে এসে দাঁড়ায় ৬৩ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রামে। দুই বছর আগে এ শহরে আরও ক্ষুদ্র্র ধূলিকণা (২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার আকারের) প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ছিল ৭০ মাইক্রোগ্রাম। ২০১৬ সালে এটি প্রায় অর্ধেক হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ মাইক্রোগ্রামে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের যে ১০টি শহরে গত দুই বছরে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা কমেছে, এর মধ্যে রাজশাহীতে কমার হার সবচেয়ে বেশি। এর পরিমাণ ৬৭ শতাংশ।

 

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, বিশ্বের কয়েকটি উন্নত দেশ ভ্রমণ করে তিনি নগর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করেন। এরপর সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। এরপরই ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ পদক পেয়েছে। তার আগের তিন বছর বৃক্ষরোপণে সেরা পদক পেয়েছে।

 

 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত ২০ বছরে নগর সবুজায়নে তারা যে কাজ করেছেন, তার কারণে নগরের বাতাস নির্মল হয়েছে। বর্তমানে আরও কিছু প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সেগুলো অনুমোদন পেলে নগরীকে আরও স্বাস্থ্যকর করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বর্তমান উপউপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘ডিজেলচালিত পরিবহন মানবদেহের ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। রাজশাহী শহরে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। একারণে বায়ু দূষণ সেভাবে হয় না।’ 

 

রাজশাহী মহানগরীর পদ্মা নদীর পরিত্যক্ত পাড়ে বর্তমানে পরিকল্পিত পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার টাইলস দিয়ে হাঁটার পথ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এটি এখন পদ্মার নির্মল বাতাসের উৎস। এসব জায়গা থেকে আর ধূলিবালি ওড়ে না। শহরজুড়ে তৈরী করা হয়েছে আধুনিক ফুটপাত। অধিকাংশ রাস্তার মাঝে কংক্রিট দিয়ে ঘিরে তার ভেতরে ফুলসহ নানা গাছ লাগানো হয়েছে। এসব গাছ শহরের যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে তেমনি স্বাস্থ্যকর নিঃশ্বাসের জন্য নির্মল অক্সিজেনের যোগান দিচ্ছে।

 

এ ছাড়া পরিকল্পিত নগরায়নের ফলে শহরের ভেতরে দূষিত নোংরা আবর্জনা ছড়ানোর হারও কমেছে। আর পরিবর্তনের এই জোয়ার শুরু হয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রাক্তনস মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সময় থেকে।

 

এ ব্যাপারে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘রাজশাহীকে বায়ু দূষণমুক্ত করার জন্য ২০১১ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই পরিবেশ উন্নয়নে বেশকিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী পর পর তিনবছর বৃক্ষরোপণে সেরা পদক পায়। এর ফলে রাজশাহী শহর দূষণমুক্ত নগরীতে পরিণত হয়েছে।’ এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 

রাইজিংবিডি/রাজশাহী/১৮ জুন ২০১৬/তানজিমুল হক/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়