ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

মৃত্যুর পর স্ত্রীসঙ্গ পাওয়ার আশায়

টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২০ জুলাই ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মৃত্যুর পর স্ত্রীসঙ্গ পাওয়ার আশায়

বদন আনসারি ও তার কবরের জায়গা

ডেস্ক রিপোর্ট : বদন আনসারি। বয়স একশো ছুঁই ছুঁই। নিজের কবরের ফলক নিজেই তৈরি করিয়ে রেখেছেন। শুধু তাই নয়, প্রস্তুত করে রেখেছেন নিজের কবরের জায়গাও। এখন অপেক্ষা শুধু মৃত্যুর। তারপর তাকে যেন শুইয়ে দেওয়া হয় প্রয়াত স্ত্রী অকলি বিবির কবরের পাশে।

 

এই ইচ্ছাপূরণের ভার দুই ছেলে, নাতি-নাতনিদের হাতে তুলে দিয়েছেন এই বৃদ্ধ। মৃত্যুর পর স্ত্রীর সঙ্গ পাওয়ার আশায়ই তার এই কাণ্ড।

 

শুধু কবরের জায়গা প্রস্তুত রাখাই নয়, রীতিমতো সেই জায়গার পরিচর্যাও করছেন ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গিরিডির দোরিয়া গ্রামের বদন আনসারি।

 

স্ত্রী মারা যান ২০১০ সালে। বদন বলেন, ‘যখন স্ত্রী বেঁচে ছিলেন তখন যে ওঁর সঙ্গে সব সময় খুব প্রেম ভালবাসা ছিল সেটা নয়। বরং অনেক বিষয়ে ঝগড়াও হতো। কিন্তু ওঁর মৃত্যুর পরে বুঝতে পারলাম, খুব একা হয়ে গেছি।’

 

মৃত্যুর পরে একা থাকতে চান না বদন। তাই বাড়ির কাছেই, নিজেদের বাগানে স্ত্রীর কবরের পাশে নিজের কবরের জায়গা ঠিক করে রেখেছেন তিনি। কবরের ফলকে নিজের নাম ও জন্মতারিখ লিখে রেখেছেন। স্ত্রীর কবরে লিখে রেখেছেন স্ত্রীর নাম ও জন্ম-মৃত্যুর সালও। বদন জানান, এখন ছেলেদের দায়িত্ব, যে দিন মারা যাবেন সে দিন ওই ফলকে মৃত্যুর দিনটাকে খোদাই করে তাঁকে ওখানে কবর দেওয়া।

 

নিজেদের কিছু জমিজমা আছে। সেই জমিতেই এক সময় চাষের কাজ করতেন তিনি। এখন দুই ছেলে সুকুর ও জুমরাতি চাষের কাজ করেন। বদন শারীরিক ভাবে সক্ষম হলেও ছেলেরা তাঁকে আর মাঠে যেতে দেন না। তাই বদনের সারা দিন কেটে যায় ওই কবরের পরিচর্যায়। কবরের জায়গার আশপাশে কাউকে কোনও রকম আবর্জনা ফেলতে দেন না। কোনও আগাছা উঠলে সঙ্গে সঙ্গে তা পরিষ্কার করে দেন।

 

বাবার এই কবরের জায়গা পরিচর্যার কাজে ছেলেরা অবশ্য বাধা দেন না। তাঁরা দু’জনেই ৬০ পেরিয়েছেন। সুকুর বলেন, ‘বাবা মায়ের থেকে অনেকটা বড়। ভেবেছিলেন মায়ের আগে উনিই চলে যাবেন। তাই মায়ের আগে চলে যাওয়াকে উনি মেনে নিতে পারেননি।’

 

বদনের ছেলেরা মজা করে মাঝেমধ্যে বলেন, তাদেরও তো বয়স হয়েছে। কে বলতে পারে বাবার আগেই তারা কেউ চলে যাবেন কি না। তখন কী হবে? প্রতিবেশীরাও মজা করে তার কাছে জানতে চান, তখন কে শেষ ইচ্ছা পূরণ করবেন?

 

তা নিয়ে মোটেও চিন্তা নেই তার। দুই ছেলে, ছেলের বৌ, নাতিপুতি নিয়ে তার ভরা সংসার। বদন জানেন, তার এই শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য পরিবারের কাউকে না কাউকে ঠিকই পাওয়া যাবে।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জুলাই ২০১৬/টিপু/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়