ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে দিশেহারা ফিরোজের পরিবার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৬, ২০ জানুয়ারি ২০২৩  
একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে দিশেহারা ফিরোজের পরিবার

ফিরোজ আলম

ফিরোজ আলম অধ্যয়নরত অবস্থায় সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরে চাকরিতে যোগ দেন। দায়িত্ব নেন পুরো পরিবারের। মা-বাবা ও তিন ভাইকে নিয়ে সংসার ভালোই চলছিল। হঠাৎ ঝড়ে নিভে যায় সব আলো। একমাত্র উপার্জনকারী ফিরোজের মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।

গত ১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থানীয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে খুন হন সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসাব সহকারী ফিরোজ আহমেদ (২৪)। আহত হন সাকিব হোসেন (২২) নামের আরেক যুবক। এ ঘটনায় ফিরোজের বাবা টিপু মিয়া ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

মামলা দায়েরের পর আবুল খায়ের রাজু ওরফে আঙ্গুল কাটা রাজু, নাসির উদ্দিন ওরফে কালা নাসির ও মুহিদকে ২ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাদের তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ৭ জানুয়ারি রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা রিমান্ডে আছে।

মামলার এজাহারভুক্ত অপর আসামিরা হলেন—ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল হাসান তালহা, মকিদুল, নয়ন, জ্যোতি,লিমন, রানা, উবায়দুল, আল-আমিন, রাব্বি, রিয়াজ ও লিয়ন।

ফিরোজের বাবা টিপু মিয়া বলেছেন, ‘আমার চার ছেলের মধ্যে সবচেয়ে শান্তশিষ্ট ছেলেটাকে ওরা খুন করল। আমি অসুস্থ। কাজ করতে পারি না। ফিরোজই ছিল আমাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। এখন সংসার, তিন ছেলের পড়াশোনা কিভাবে চলবে? ছেলেদের পড়াশোনা বন্ধের শঙ্কায় আছি।’

ফিরোজের ভাই নুর আলম মিরাজ বলেন, হত্যার সাথে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শাকিব বলেন, ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মুরাদের এক ছোট ভাইয়ের ফানুস ওড়ানো নিয়ে মূলত ঝামেলা হয়। থানা ছাত্রলীগ কমিটির নেতা নাজমুল হাসান তালহার কিছু কর্মী মুরাদের ওই ছোট ভাইয়ের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। মুরাদ সেখানে গিয়ে দুই পক্ষকে মিলিয়ে দিয়ে আসে। আমরা আবার আরেক জায়গায় থার্টি ফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠান করছিলাম। এরই মাঝে তালহার লোকজন মুরাদের বাসায় গিয়ে হামলা চালায়। এ খবর শোনার পর মুরাদ একা বাসায় যেতে ভয় পায়। মুরাদ আমাদের বলে তাকে বাসায় পৌঁছে দিতে। আমি ও ফিরোজ ভাই মুরাদকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।

তিনি বলেন, এরপর আমরা বাসায় ফিরছিলাম। ফেরার পথে ১০-১২ জন পেছন থেকে  আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাদের ওপর হামলা হবে কল্পনাতেও ছিল না। আমার পায়ে, পিঠে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। ফিরোজ ভাইকেও ছুরিকাঘাত করে। সে বাঁচতে দৌড় দেয়। মুহিত নামের একজন তার গলায় আঘাত করে। আরেকজন বাঁশ দিয়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করে। ফিরোজ ভাইয়ের শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। আমি চেষ্টা করেছি তাকে বাঁচানোর। কিন্তু, আঘাতের কারণে আর পারিনি। বাঁশের বাড়ি ঠেকাতে পারলে ফিরোজ ভাই আজ বেঁচে থাকত।

শাকিব বলেন, ওরা যখন ফিরোজ ভাইকে আঘাত করছিল, তখন তিনি বলছিলেন, আমি ফিরোজ, আপনাদের টিপু ভাইয়ের ছেলে। এ কথায় কর্ণপাত করেনি তারা। মেরে আমাদের ফেলে রেখে চলে যায়। আমরা দুজন রাস্তায় পড়ে ছিলাম। সাহায্যের জন্য চিল্লাইছি। কিন্তু, কেউ ভয়ে এগিয়ে আসেনি। পরে নিজের শরীরের রক্ত দেখিয়ে অনেক কষ্টে একটি গাড়িতে উঠি। প্রথমে আমরা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যাই। সেখানে একজন যায় আমাদের মারতে। কিন্তু, আমাদের পরিচিত লোক চলে আসায় কিছু করতে পারেনি। সেখান থেকে আমাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ফিরোজ ভাই মারা যান।

আফসোসের সাথে বলেন, ফিরোজ ভাই খুব ভালো মানুষ ছিলেন। উপকার ছাড়া ক্ষতি করতেন না। অথচ তাকে এমনভাবে খুন করলো। তালহার নেতৃত্বে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর উপযুক্ত সাজা চাই।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক রূপু কর বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তদন্তের স্বার্থে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।

১ জানুয়ারি রাতে নতুন বছরকে বরণ করার জন্য শেরেবাংলা নগর থানাধীন ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের অফিসের সামনে ছাত্রলীগের ছেলেরা জড়ো হন। সেখানে ফিরোজও অংশ নেন। আগে থেকেই শেরেবাংলা নগর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি তালহা ও ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মুরাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এসব দ্বন্দ্বের কারণে রাতে সেখানে মারামারি হয়। মারামারির সময় তালহাসহ তার লোকজন ফিরোজকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে আহত করে। পরে হাসপাতালে ফিরোজের মৃত্যু হয়।

মামুন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়