ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বিয়ের নিবন্ধন ছাড়া `কোর্ট ম্যারেজের` আইনি ভিত্তি নেই

আজাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৯, ৪ মে ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিয়ের নিবন্ধন ছাড়া `কোর্ট ম্যারেজের` আইনি ভিত্তি নেই

প্রতীকী ছবি

একে আজাদ : বিশেষত ঝুঁকি এড়াতে উঠতি বয়সি প্রেমিক-প্রেমিকারা কোর্ট ম্যারেজ বা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করে থাকেন। আইনের দৃষ্টিতে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে অধিকারের ক্ষেত্রে কতটা প্রয়োগ করা যাবে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা না রেখেই অনেকে আবেগের বশে এ বিয়ে করে থাকেন। বিয়ের নিবন্ধন ছাড়া তথাকথিত `কোর্ট ম্যারেজের` আইনি কোনো ভিত্তি নেই।

 

প্রকৃতপক্ষে কোর্ট ম্যারেজ বিয়ের ঘোষণা মাত্র। বৈধ উপায়ে বিয়ে করে কাজীর কাছে সেটির নিবন্ধন করিয়ে নিয়ে তবেই কেউ `কোর্ট ম্যারেজ` বা এফিডেভিট করতে পারে। নিবন্ধন বা কাবিননামা না থাকলে কেবল এফিডেভিটে আইনগত অধিকার আদায় করা যায় না।

 

কোর্ট ম্যারেজ : কোর্ট ম্যারেজ বলে আইনে নির্দিষ্ট কিছু নেই। যুবক-যুবতী বা নারী-পুরুষ স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একত্রে বসবাস করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে যে হলফনামা সম্পাদন করে তা-ই `কোর্ট ম্যারেজ` নামে পরিচিত। বিয়ে হিসেবে আলাদাভাবে এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এ রকম কোনো বিয়ে যদি কাজী অফিসে নিবন্ধন না করা হয় তাহলে আইনগত কোনো ভিত্তি থাকে না। কোনো এক সময় যদি এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ত্যাগ করে তাহলে আইনগত কোনো প্রতিকার পাওয়া যাবে না। ২০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিক কিংবা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে গিয়ে হলফনামা করাকে `কোর্ট ম্যারেজ` বলে অভিহিত করা হয়। অথচ এফিডেভিট বা হলফনামা শুধুই একটি ঘোষণাপত্র।

 

আইন অনুযায়ী কাবিন রেজিস্ট্রি ও আকদ সম্পন্ন করেই কেবল ঘোষণার জন্য এফিডেভিট করা যাবে। আবেগঘন সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক তরুণ-তরুণীর ভুল ধারণা হয় যে, কেবল এফিডেভিট করে বিয়ে করলে বন্ধন শক্ত হয়। কাজী অফিসে বিয়ের জন্য বিরাট অঙ্কের ফিস দিতে হয় বলে কোর্ট ম্যারেজকে অধিকতর ভালো মনে করেন। অথচ যদি কাবিন নিবন্ধন করা না হয় তাহলে স্ত্রী মোহরানা আদায় করতে ব্যর্থ হবে। অধিকন্তু আইন অনুযায়ী তার বিয়ে প্রমাণ করাই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। তাই এ ক্ষেত্রে সঙ্গী কর্তৃক প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবানাই অধিক।

 

আইনগত দিক : মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪-এর ধারা ৫(২) অনুযায়ী, যে ক্ষেত্রে একজন নিকাহ-রেজিস্ট্রার ছাড়া অন্য ব্যক্তি দ্বারা বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় সে ক্ষেত্রে বর বিবাহ অনুষ্ঠানের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ-রেজিস্ট্রারের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন। ধারা ৫(৪) অনুযায়ী এ আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে দুই বছর পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য জরিমানা বা উভয়  দণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে।

 

অন্য ধর্মীয় আইনে কি বলা আছে : হিন্দু বিয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই হিন্দু আইনের প্রথা মেনেই বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। কেননা, হিন্দু বিয়েতে এখন পর্যন্ত বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। হিন্দু বিয়েতেও নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে হলফনামার মাধ্যমে বিয়ের ঘোষণা দিয়ে থাকে মাত্র, যা পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যকর হয়ে থাকে। বর্তমানে বিয়ের হলফনামা একটি দালিলিক প্রমাণপত্র হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। প্রচলিত হিন্দু প্রথা না মেনে হলফনামা করা হলে এতে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল বলা যাবে না। তাই বিয়ের ঘোষণা প্রদানের ৩০ দিনের মধ্যে বিবাহ নিবন্ধন করা প্রয়োজন। অন্যথায় প্রতারিত হলে আইনি কোনো প্রতিকার পাওয়া যাবে না।

 

সুতরাং, কোর্ট ম্যারেজ আদতে কোনো বিয়ে নয়। বিয়ের ঘোষণা মাত্র। বৈধ উপায়ে বিয়ে করে ও নিবন্ধকের (কাজীর) কাছে সেটির নিবন্ধন করিয়ে নিয়ে তবেই কেউ তথাকথিত `কোর্ট ম্যারেজ` বা এফিডেভিট করতে পারে। নিবন্ধন বা কাবিননামা না থাকলে কেবল এফিডেভিটে আইনগত অধিকার আদায় করা যাবে না।

 

ঘটনা সূত্র : আবিদা ও আসলাম পরিবারের অমতে পালিয়ে বিয়ে করেন তিন বছর আগে। সেই থেকে কেউ নিজেদের বাড়ির সঙ্গে আর যোগাযোগ করেন না। নোটারি পাবলিকের সামনে গিয়ে হলফনামার মধ্য দিয়ে তারা বিয়ে করেছেন। একেই কোর্ট ম্যারেজ বলে তারা জানেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে বনিবনার অভাব দেখা যায়। আসলামের চারিত্রিক অবক্ষয় ধরা দেয় আবিদার চোখে। আবিদা ও আসলাম কারোরই যেহেতু নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় ছিল না, সুতরাং আসলাম প্রায়ই ছোটখাটো কারণে আবিদাকে মারধর করলেও আবিদার তা নীরবে সহ্য করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। আসলামের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এক পর্যায়ে আবিদা বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। বিয়ের সময় মৌখিকভাবে তিন লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়েছিল। বিবাহবিচ্ছেদের সময় আবিদা দেনমোহরের অর্থ দাবি করলে আসলাম তা দিতে অস্বীকার করেন।

 

কোর্ট ম্যারেজ করায় বিয়ের ভিত্তি ও বিয়ে সম্পর্কিত অধিকার মজবুত হবে, এটাই ছিল আবিদার ধারণা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, মোহর সম্পর্কিত অধিকার থেকে সে বঞ্চিত হয়।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ মে ২০১৫/আজাদ/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়