ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনায় করণীয়

শানু মোস্তাফিজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০  
করোনায় করণীয়

চিকিৎসকরা বলছেন, সর্দিজ্বর হলেই করোনা সংক্রমণ হয়েছে, এমন ভাবা ভুল। ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। কাজেই আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধরে বিষয়টি মোকাবিলা করতে হবে এবং চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। এ রকম পরিস্থিতিতে বাসায় সবার থেকে দূরে থাকতে হবে এবং কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সাবধানতা অবলম্বন করে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন খ্যাতিমান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ।

করোনা হলো একধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর। এতে সর্দি-কাশিও থাকে। অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হয়। বেশি হলে রোগী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে ‘মহামারি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে এত বড়ো সংকট দেখা দেয়নি।

ভাইরাসটির চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। উপসর্গ দেখে এর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর ভ্যাকসিন তৈরির জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন কয়েকটি দেশের বিজ্ঞানীরা। আশা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে। ততদিন পর্যন্ত এ রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। নিয়মগুলো হলো:

১. পরিষ্কার ও চলমান পানি ব্যবহার করে হাত ধোবেন। হাতে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ নিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ভালোভাবে উপর-নিচ, আঙুল এবং আঙুলের ফাঁকগুলো ভালোভাবে ঘষে নিন এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে তা ধুয়ে নিন।

২. হাতের কাছে সাবান পানি না থাকলে স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মতো স্যানিটাইজার হাতে নিয়ে ঘষুন ৩০-৬০ সেকেন্ড।

৩. হাত না ধুয়ে কখনো নাক-মুখ ও চোখে হাত দেবেন না।

৪. কাশি এলে কনুইয়ে মুখ ঢেকে কাশি দিন। পরে কনুই ধুয়ে ফেলুন। কাশির সময় টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করতে পারেন। তবে ব্যবহৃত টিস্যু বা রুমাল ঢাকনা দেওয়া বিনে ফেলে দিন। কিংবা ব্যবহৃত রুমালটি ভালোভাবে সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৫. বাইরে গেলে কিংবা বারবার হাত মুখে দেওয়ার প্রবণতা থাকলে মাস্ক ব্যবহার করুন। ৎ

৬. ঘরে করোনা আক্রান্ত রোগী থাকলে মাস্ক ব্যবহার করুন। তাদের আলাদা ঘরে রাখুন। সম্ভব হলে ওই ঘরে কেউ যাবেন না।

৭. হঠাৎ করেই বাড়িতে কারো হাঁচি-কাশি দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তার কাছে যাবেন না। তাকে আলাদা রাখুন। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে কমপক্ষে এক মিটার বা তিন ফুট, সম্ভব হলে ছয় ফুট দূরে অবস্থান করুন। যতক্ষণ জানতে পারবেন না তিনি করোনায় আক্রান্ত নন, ততক্ষণ পর্যন্ত নিয়মগুলো মেনে চলুন।

৮. অবশ্যই ঘরে থাকুন।

৯. জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজন হলেও একজন অন্যজনের কাছ থেকে তিন ফুট দূরে থেকে কথা বলুন।

বাস্তবতা এবং গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রবীণদের এ রোগে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। কেননা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এছাড়াও ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা, কিডনির সমস্যা এবং যারা দীর্ঘমেয়াদি অসুখে ভুগছেন, তাদেরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় করোনায় মৃত্যুঝুঁকি বেশি।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত মায়ের করণীয়: যদি লক্ষণ বা উপসর্গগুলো দেখা দেয়, দ্রুত কলসেন্টারে (১৬২৬৩ বা ৩৩৩ নম্বরে) যোগাযোগ করুন। ১৪ দিন নিজ গৃহে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোয়ারেন্টিন অবস্থায় থাকুন। সব সময় মাস্ক পরিধান করুন এবং বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। বেশি করে ভিটামিন ‘সি’ এবং তরলজাতীয় হালকা গরম পানীয় গ্রহণ করুন। প্রতিদিনের পরিহিত কাপড় ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পরিবারের সবার থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।

এ সময় নবজাতকের ব্যবস্থাপনা: নবজাতককে শুধু মা বা পরিবারের একজন যত্ন করাই ভালো। নবজাতককে সবার সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখুন। নবজাতককে মায়ের দুধ খাওয়ানো যাবে, তবে মা ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে মাস্ক পরে শিশুকে দুধ খাওয়াবেন। মায়ের দুধ বের করে বাটি-চামচে খাওয়ানো নিরাপদ হবে। প্রয়োজনে অন্য মায়ের দুধ খাওয়ানো যাবে।

দুটি বিষয় মেনে চলার জন্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন। এক. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ যেমন দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল-শাকসবজি এবং ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার; যেমন আমলকি, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, কমলা। ভিটামিন ডি আছে এমন খাবার,সময় করে রোদে কিছু সময় কাটানো, এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তবে আক্রান্ত হলে গরম পানি, আদা-লেবু দেওয়া চা বা গরম পানি পান করা, গার্গল করা এবং নাক-মুখ দিয়ে ভাপ নেওয়ার কথাও বলছেন চিকিৎসকরা, যা করোনায় দ্রুত আরোগ্য লাভে পরীক্ষিত হয়েছে বলে স্বীকৃতি পেয়েছে।

দুই. নিয়মিত ব্যায়াম করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বয়স্কদের প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা এবং তরুণদের অন্তত এক ঘণ্টা হালকা ব্যায়াম করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনে ২০-৩০ মিনিট নিয়মিত ব্যায়ামও ভালো ফল দেয়। বিশেষভাবে বুক ভরে শ্বাস নেওয়া, হাতের কব্জি, পায়ের গোড়ালি, কোমর, ঘাড়সহ প্রতিটি অস্থিসন্ধি কয়েকবার নাড়াচাড়া করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। অফিস বা ঘরে বসে কাজ করার সময় প্রতি ৩০ মিনিট পরপর চেয়ার ছেড়ে উঠে ঘরেই অন্তত ৩ মিনিট হাঁটাহাঁটি করতে হবে।

তবে এ রোগ যখন ফুসফুসে ছড়িয়ে যায়, তখন ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়। তাই শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া চব্বিশ ঘণ্টা সেবার জন্য সরকারের স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩ নম্বর কিংবা সরকারি তথ্যসেবার জন্য ৩৩৩ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ