ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কোন দেশের ক্ষতি বেশি?

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৭, ১৯ জুন ২০২৫   আপডেট: ১৩:৩২, ১৯ জুন ২০২৫
ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কোন দেশের ক্ষতি বেশি?

ছবি: সংগৃহীত

পারস্য উপসাগরে যাওয়ার একমাত্র সামুদ্রিক প্রবেশপথ হরমুজ প্রণালি। এই প্রণালির একপাশে ইরান, অন্য পাশে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত এবং ইরাকের মতো ওপেকভুক্ত দেশগুলোর তেল, এই প্রণালি দিয়েই পরিবাহিত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পৌঁছায়।এমনকি কাতারও এই প্রণালির ওপর নির্ভরশীল। 

ইরান-ইসরায়ের যুদ্ধ প্রসঙ্গে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হতে পারে কিনা, এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা নানা মত দিচ্ছেন। কোনো কারণে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে পুরো বিশ্বের জ্বালানির বাজারে তুমুল অস্থিরতা শুরু হবে। এই জের ধরে মধ্য প্রাচ্যজুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

আরো পড়ুন:

জ্বালানি ও পরিবহণ বাজার পরামর্শক সংস্থা ভরটেক্সার তথ্য, ‘‘প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল, কনডেনসেট এবং জ্বালানি এই জলপথ দিয়ে পরিবাহিত হয়৷’’ হরমুজ প্রণালির সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশ ৩৩ কিলোমিটার বা ২১ মাইল চওড়া। ওই অংশে শিপিং লেন মাত্র দুই মাইল করে। সেজন্য এই সরু অংশ অত্যন্ত ব্যস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ।

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সংঘাতে এই জলপথের নিরাপত্তার বিষয়টি যখন সামনে এসেছে, তখন ইরানের দেওয়া পুরনো এক হুমকি নিয়ে আলোচনা চলছে। ইরান অতীতে হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছিল। সে সময় পশ্চিমাবিশ্বকে চাপে ফেলার জন্যই এমন হুমকি দিয়েছিল দেশটি।

পুরনো হুমকি আমলে নিয়ে এরই মধ্যে জাহাজ মালিকরা সতর্কতা অবলম্বন করতে শুরু করেছেন। যদিও বর্তমানে সরাসরি কোনো বাণিজ্যিক জাহাজে বড় হামলার ঘটনা ঘটেনি। তারপরেও  হরমুজ প্রণালি দিয়ে চলা অনেক জাহাজে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো জাহাজ রুট বাতিল করেছে। 

রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে, সম্প্রতি এই অঞ্চলে নৌযান পরিচালনায় ইলেকট্রনিক হস্তক্ষেপ বেড়ে গেছে, যা জাহাজ চলাচলে প্রভাব ফেলছে।

এদিকে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ দ্রুত সমাধানে পৌঁছানোর কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত নেই। যুদ্ধচলাকালে হরমুজ প্রণালিতে জাহাজ চলাচলে কোনো অসুবিধা হলে বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাবে। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

এরই মধ্যে তেলবাহী ট্যাংকারের ভাড়া বেড়ে গিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্ব এশিয়ায় জ্বালানি পরিবহণের খরচ তিন সেশনে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে৷ পূর্ব আফ্রিকার ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

এই প্রণালি দিয়ে পরিবহনকৃত জ্বালানির ৮২ শতাংশ এশিয়ার দেশগুলোতে পৌঁছায়। এই প্রণালি দিয়ে তেল আমদানিকারক এশিয়ানদেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে চীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। ফলে এই দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

তবে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিলে ইরানের ওপর মার্কিন প্রভাব আরও বেশি বেড়ে যেতে পারে। ওই অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন পঞ্চম নৌবহর বাণিজ্যিক জাহাজ রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে৷ আবার ইরান নিজেও এই প্রণালি দিয়ে তেল রপ্তানি করে। ফলে দেশটি নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ইরানের মূল অর্থনীতি জলপথে পণ্য রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। আর ইরানের সবচেয়ে বড় গ্রাহক চীন। হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে চীনের বড় ক্ষতি হবে। ফলে ইরানের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে।

সৌদি আরব ও আরব আমিরাত জ্বালানি তেল রপ্তানি করার জন্য বিকল্প রুট তৈরি করেছে৷ সৌদি আরবের ‘ইস্ট-ওয়েস্ট ক্রুড অয়েল পাইপলাইন’ দৈনিক ৫০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল পরিবহন করতে পারে৷ আবার সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি পাইপলাইন স্থাপন করেছে, যা তাদের স্থলভাগের তেলক্ষেত্রকে ওমান উপসাগরের ফুজাইরাহ বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করে৷ ইআইএর হিসেব অনুযায়ী, হরমুজ প্রণালিতে জাহাজ চলাচলে অসুবিধা তৈরি হলে বিকল্প পথে ২৬ লাখ ব্যারেল তেল পরিবহণ সম্ভব হবে৷

উল্লেখ্য, ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চলা ইরান-ইরাক যুদ্ধে উভয় পক্ষই উপসাগরীয় অঞ্চলে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছিল। ওই হামলা ‘ট্যাংকার যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ মরেছিল। তবে হরমুজ প্রণালি পুরোপুরি কখনো বন্ধ হয়নি। 

তথ্যসূত্র: ডয়চে ভেলে

ঢাকা/লিপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়