ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

নাইন ইলেভেনের পর যা ঘটেছিল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৬, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১২:৪৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
নাইন ইলেভেনের পর যা ঘটেছিল

১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলার দিন স্থানীয় সময় রাত ৯টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। এই একটি মাত্র ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন তিনি। বাস্তবে বুশ শুধু তার দেশের পররাষ্ট্রনীতিই নয়, বরং বিশ্বকে বিভাজনের ঘোষণা দিলেন।

বুশ তার ভাষণে বলেন, ‘যেসব সন্ত্রাসী এই ধরনের কাজ করেছে এবং তাদের আশ্রয় দাতাদের মধ্যে আমরা কোনো পার্থক্য করব না। এই যুদ্ধে যারা আমাদের পাশে দাঁড়াবে না, তারা সবাই আমাদের বিরুদ্ধে৷’

আরো পড়ুন:

২০ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসে যৌথ অভিযানের প্রস্তাব পেশ করে রিপাবলিকানরা। ন্যাটোর সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সমন্বয়ে পরের মাসেই হামলার পরিকল্পনা শুরু করে ওয়াশিংটন। ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে হামলা শুরু করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই তালেবানের পতন ঘটে। কাবুলের ক্ষমতায় বসানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের মনোনীত ব্যক্তি হামিদ কারজাইকে।

আফগান যুদ্ধের পর ন্যাটোর পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ইরাক। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যখন আফগানিস্তানে হামলার পরিকল্পনা চলছিল তখনই প্রেসিডেন্ট বুশ ইরাকের ওপর হামলার ছক কষতে তার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কোনো সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এই অজুহাত দেখিয়ে  ২০০৩ সালের ২০ মার্চ বাগদাদে হামলা শুরু করা হয়। ১ মে প্রেসিডেন্ট বুশ ইরাক যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেন এবং তখন থেকেই দেশটিতে সেনা দখলদারিত্বের সূচনা হয়। আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে, যেই অজুহাত দেখিয়ে ইরাকে হামলা চালানো হয়েছিল সেই গণবিধ্বংসী কোনো অস্ত্রের সন্ধান দেশটিতে পায়নি মার্কিন বাহিনী।

ইরাক যুদ্ধের এই জের যুক্তরাষ্ট্রকে টানতে হয়েছে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। ইরাকে মার্কিন সেনাদের নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা পরবর্তীতে গড়ে তোলে সন্ত্রাসী বাহিনী ইসলামিক স্টেট বা আইএস। ২০১৩ সালে মার্চে দলটি সিরিয়ার রাকা দখল করে। পরের বছর তারা ইরাকের বিস্তৃত অংশ দখল করে। এর পরপরই সন্ত্রাসী সংগঠনটির কার্যক্রম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে যৌথ অভিযান চালিয়ে ২০১৭ সালে পতন ঘটাতে হয় আইএসের।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসী হামলার ছয় সপ্তাহের মাথায় বিতর্কিত প্যাট্রিয়ট আইন পাশ করে বুশ প্রশাসন। এই আইনটিতে মার্কিন যে কোনো নাগরিককে সন্দেহবশত গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয় এফবিআইকে। দেশি ও আন্তর্জাতিক ফোন কল, ই-মেইল ও অনলাইন কার্যক্রমে নজরদারির অনুমতি পায় সংস্থাটি। শুধু তা-ই নয়, এই আইনের বলে যে কোনো অভিবাসীকে বিনা বিচারে যতদিন খুশি আটকে রাখার ক্ষমতা ছিল নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর। মূলত মুসলিম অভিবাসীরা এই আইনে নিপীড়নের শিকার হন।

নাইন ইলেভের আর্থিক ক্ষতির দায় নিতে হয়েছে সারা বিশ্বকেও। হামলার পর এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের এক লাখ ৪৩ হাজার মানুষ চাকরি হারান। বিমানে যাত্রী সংকটের কারণে হামলার পর প্রথম তিন মাসে এভিয়েশন খাতে সংশ্লিষ্ট ৬০ শতাংশ মানুষের চাকরি চলে যায়। নাইন ইলেভেনের পর বিশ্বব্যাপী যে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দেয়, তাতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষতি হয় প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলারের।

ঢাকা/শাহেদ/এমএম

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়