ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এক একটা রান্নঘর, এক একটা রেস্টুরেন্ট (ভিডিও)

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এক একটা রান্নঘর, এক একটা রেস্টুরেন্ট (ভিডিও)

ব্যাংককের ডন মুয়াং বিমানবন্দর থেকে ১৩১ কিলোমিটার দূরের শহর সিরাচা (সংস্কৃত শ্রী রাজা শব্দটি পালি হয়ে থাই ভাষায় হয়েছে শ্রীরাচা। স্থানীয়দের মুখে উচ্চরিত হয় সিরাচা)। থাইল্যান্ডের চনবুরি প্রদেশের ১১টি জেলার একটি এটি। যার আয়তন ৪ হাজার ৫৮ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা? মাত্র ২৩ হাজার ৯০০ জন। প্রতি বর্গ মাইলে মাত্র ১৬৫৮ জন লোকের বাস। তাতেই বোঝা যায় এখানে জনবসতি কত কম।

এই জেলার সুরাসাক এলাকার সুখুম্ভিত রোডে অবস্থিত হোটেল আরিজ এ উঠেছে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্ব জায়গা করে নেওয়া ছয়টি দল। যেখানে বাংলাদেশও রয়েছে। সঙ্গত কারণে টিম হোটেলের পাশেই একটি রিসোর্টে বাংলাদেশ থেকে আসা সাংবাদিকদের উঠতে হয়েছে। এখানকার দুই বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ভালোমানের কোনো খাবার হোটেল নেই। ৭০০ মিটার দূরে রয়েছে বার্গার কিং। আর প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে আছে কেএফসি। বাঙালিয়ানা খাবারে অভ্যস্ত আমরা সেখানে খেয়েও মজা পাই না। বাকি সব স্ট্রিট ফুড আর স্থানীয়দের রান্না ঘরের খাবার।

 

 

খাবারের সমস্যা থেকেও ভাষাগত সমস্যাটা প্রকট। থাই ভাষার বাইরে ইংরেজি মোটামুটি বুঝতে পারে এমন মানুষ নেই বললেই চলে। তাই গুগল করে, ছবি দেখিয়ে, ইশারা-ইঙ্গিত দিয়ে নানা কিছু বোঝাতে হচ্ছে। তাতেও খুব একটা কাজ হচ্ছে না। চলা যাচ্ছে কোনোরকমে।

আর যেহেতু এখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই তাই টুকটুক ও ট্যাক্সিই ভরসা। কেএফসিতে যেতে টুকটুকে নেয় ৮০ বাথ (১ বাথ= ২.৯০ টাকা)। আসতেও একই খরচ। তাই আসে-পাশের বাসাগুলোতেই খাওয়ার জন্য ঢু মারতে হচ্ছে আমাদের। মজার ব্যাপার হল এখানকার প্রায় প্রত্যেকটা বাসার রান্নাঘরই এক একটা রেস্টুরেন্ট (আমাদের দেশের গলির খাবার হোটেলের মতো।)।

 

 

প্রত্যেকটা রান্নাঘর রাস্তার লাগোয়া। খোলামেলা পরিবেশ (এখানে ধুলাবালি নেই)। সেখানে পরিবারের জন্য রান্না হয়। বাইরের কেউ যদি খেতে চায় তাদেরও পরিবেশন করা হয়। যেহেতু এখানে শুকরের মাংসের জনপ্রিয়তা অনেক, তাই খেতে গিয়েও বেশ চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। কারো কারো গা গুলিয়ে আসে। তাই ভাষাগত সমস্যা কাটিয়ে তাদের দুটি খাবারের মেন্যু বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তার একটি মুরগির মাংস, বরবটি ও ডিম দিয়ে ভাত ভাজা। আর একটা মুরগির মাংস ঝোল ঝোল করে ও ডিম ভাজা। ঔষুধ খাওয়ার মতো নিয়মত করে তিনবেলা এগুলোই খেতে হচ্ছে। তারা কোনো কিছুই ভালো করে সিদ্ধ করে না। আধাসেদ্ধ। সবজির পাশাপাশি মুরগির মাংসও আধাসেদ্ধ। সেটা খেতে কেমন লাগে সেটা হয়তো কাউকে নতুন করে বুঝিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তার উপর রান্নায় তারা তেলের পাশাপাশি কিছু তরল পদার্থ ব্যবহার করে। আছে কিছু মসলাও। যেগুলোর গন্ধ নাকে লাগলে খাবার আর পেটে ঢুকতে চায় না। তারপরও জোরপূর্বক গলাধকরণ করতে হয়।

এমন পরিস্থিতিতে শুরুতে ‘সুগা কেন’ নামের এক পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলাকে পেলাম। যার স্বামী ছিলেন ব্রিটিশ। সে কারণে ইংরেজিটা মোটামুটি ভালোই ধরতে পারেন। একদিন তাদের পরিবেশনা বেশ ভালোই লেগেছিল। কিন্তু পরের দুইদিন তার রান্নাঘরের শাটার বন্ধ ছিল!

 

 

আর একটা বিষয় হল জেলা শহর হওয়ায় এখানে সন্ধ্যা ৭টার পর সব রান্নাঘর সংশ্লিষ্ট রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ হতে শুরু করে। ৮টার মধ্যে সব বন্ধ। আর ৯টার মধ্যে পাশে-পাশের দোকানগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। মাঠ থেকে আমাদের হোটেলে ফিরতে ফিরতে রাত ৯টা-১০টা বেজে যায়। এরপর এসে খাবারই পাওয়া যায় না। তাই কখনো কখনো রাতে না খেয়েই ঘুমাতে হয়েছে। এখানকার স্থানীয়রা তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যায়। আবার সকালে খুব ভোরে ওঠে। ঠিক আর্লি টু বেড, আর্লি টু রাইজ রুটিন মেনে চলে।

 

 

সমস্যাগুলোকে প্রলম্ভিত করেছে মাঠের দূরত্ব। টিম হোটেল থেকে প্রথম মাঠ চনবুরি স্টেডিয়ামের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। আর আরেক মাঠ আইপিই চনবুরি স্টেডিয়ামের দূরত্ব ৪৯.৫ কিলোমিটার। এখানে আশে-পাশে একটু দূরত্বে কিছু দোকান-পাট রয়েছে, স্টেডিয়াম এলাকায় কিছুই নেই। আর আইপিই স্টেডিয়াম তো আমাদের বিকেএসপির মতো। বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে। সেখানে সন্ধ্যার পর মানুষজন দূরের কথা, একটা টুকটুকও মিলে না। এতোটা ঝক্কি-ঝামেলা পোহানোর পর মাঠে যখন বাংলাদেশের মেয়েরা ভালো খেলেও হেরে যায় কিংবা ৯-০ গোলের ব্যবধানে উড়ে যায় তখন হতাশা জাগে।

ভিডিও :



থাইল্যান্ড/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়